সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে (বাঁ দিকে) পিনারাই বিজয়ন এবং প্রকাশ কারাট (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
দলে বয়স-নীতি চালু হয়েছে আগেই। এ বারের সম্মেলন-পর্বে সেই নীতি আরও কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। সেই ধারা মেনেই আসন্ন পার্টি কংগ্রেসে দলের শীর্ষে প্রজন্ম বদলের পথে যাচ্ছে সিপিএম। এক ঝাঁক শীর্ষ নেতা এ বার পদ তথা কমিটি থেকে সরে দাঁড়াবেন, এমন পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে দলের পলিটব্যুরো।
সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদন গৃহীত হয়েছে কলকাতার উপকণ্ঠে নিউ টাউনে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। তারই পাশাপাশি সাংগঠনিক বিষয়ে প্রস্তুতি সেরে রেখেছে পলিটব্যুরো। দলীয় সূত্রের খবর, পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট এই বিষয়ে আলাদা করে কথা বলেছেন প্রবীণ নেতা বিমান বসু, মানিক সরকার এবং মহম্মদ সেলিমদের সঙ্গেও। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে, একান্ত ‘বাধ্য’ না-হলে ব্যতিক্রমের রাস্তায় যাওয়া হবে না। বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে প্রবীণ-নবীন বিতর্ক যখন জারি, সে সময়ে অঘটন না-ঘটলে বয়স-নীতির আওতায় পড়া বর্ষীয়ান সিপিএম নেতারা এপ্রিলে মাদুরাই পার্টি কংগ্রেসে কমিটি থেকে অব্যাহতি নেবেন। পার্টি কংগ্রেসের খসড়া সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও সংগঠনের অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠক ডাকা হয়েছে আগামী ২২-২৩ মার্চ।
সিপিএমের পলিটব্যুরোয় কারাট-সহ ৬ নেতা-নেত্রী এ বার বয়স-নীতির অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন। কান্নুরে গত পার্টি কংগ্রেসেই বিজয়ন বয়সের ঊর্ধ্বসীমা পেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বলে তাঁকে পলিটব্যুরোয় রেখে দেওয়া হয়েছিল ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবে। এ বার ৬ নেতা-নেত্রীর পাশাপাশি আছেন অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের এক নেতা, যিনি নিজের রাজ্যে কিছু বিতর্কে জড়িয়ে আগেই পলিটব্যুরো থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর ক্ষেত্রেও এ বার সিদ্ধান্ত হতে পারে। আর দলের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে থাকতেই প্রয়াত হয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি। সব মিলিয়ে পলিটব্যুরোর এত জন সদস্যকে একসঙ্গে আগে কখনও সরে যেতে দেখা যায়নি। প্রজন্ম বদলের পাশাপাশি এর ফলে নেতৃত্ব স্তরে যে শূন্যতা তৈরি হবে, সিপিএমকে উদ্বেগে রেখেছে সেই ভাবনা। দলের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের কথায়, ‘‘একসঙ্গেএত জনের বিকল্প তুলে আনা সত্যিই কঠিন। আর সীতারামের তো বিকল্পই নেই! কিন্তু নীতির বাইরে এত ব্যতিক্রম করলে সংগঠনের সর্ব স্তরে ভুল বার্তা যাবে।’’ দলীয় সূত্রের আরও বক্তব্য, ইয়েচুরির প্রয়াণের পরে সিপিএমের শীর্ষ স্তরে এক ধরনের ‘স্থবিরতা’ এসেছে। সেই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টাও দলের ভাবনায় আছে।
ব্যতিক্রমের বদলে অব্যাহতির রাস্তায় হাঁটার ইঙ্গিত ধরা পড়েছে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের একটি মন্তব্যেও। তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে কেরলে বিধায়কের পদ থেকে সম্প্রতি ইস্তফা দিয়েছেন পি ভি আনওয়ার। তিনি ঘোষণা করেছেন, আগামী বিধানসভা ভোটে বিজয়নের কেন্দ্র ধর্মোদাম থেকে বাম সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়বেন! এই প্রসঙ্গে বিজয়ন বলেছেন, ‘‘উনি নিজের মতো করে কেন্দ্র ঘোষণা করে দিয়েছেন। কিন্তু আমি সেখানে দাঁড়াব কি না, সেটাই তো ঠিক নেই! প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব কি না, এটা দলই সিদ্ধান্ত নেবে।’’ আপাত দৃষ্টিতে নিয়মমাফিক বক্তব্য হলেও বিজয়নের এই কথায় ইঙ্গিত পড়তে পারছে দলের একাংশ।
এর পরে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থাকছে, বর্ষীয়ান এত নেতা-নেত্রী সরে গেলে পার্টি কংগ্রেস থেকে দলের দায়িত্ব কার হাতে যাবে? বেহাল দশায় দলের হাল ধরার মতো উপযুক্ত মুখ কে হতে পারেন, সেই প্রশ্নে এখনও আলোচনা চলছে। দলের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, তামিলনাড়ু, রাজস্থানের মতো রাজ্য থেকে এ বার সিপিএমের কেন্দ্রীয় স্তরে প্রতিনিধিত্ব বাড়তে পারে।
এই প্রস্তুতির পাশাপাশি কংগ্রেস সম্পর্কে সংশয়ের সুর রেখেই পার্টি কংগ্রেসের খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাশ হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। কেন্দ্রীয় কমিটিতে জমা পড়েছিল ৭০-এর বেশি সংশোধনী। বিজেপিকে মূল নিশানায় রেখে জবাবি বক্তৃতায় কারাটও কংগ্রেস সম্পর্কে সমালোচনামূলক সুর নিয়েছেন। এই খসড়া আগামী ১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হবে দলের সর্বস্তরে আলোচনা ও বাইরের মতামত নেওয়ার জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy