সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে দলের নীতি ভেঙে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যাঁরা হাত মেলাচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করল সিপিএম। নিজেদের দলে পদক্ষেপ করার পাশাপাশিই বিজেপি ও তৃণমূল কোথায় কোথায় একসঙ্গে বোর্ড করছে, সেই তথ্য সংগ্রহেও হাত দিয়েছে তারা। যা ওই দু’দলের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচারে কাজে লাগানো হবে।
স্থানীয় সমীকরণের ভিত্তিতে বরাবরই গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে নানা ধরনের বোর্ড তৈরি হয়ে থাকে। তাতে কোনও দলেরই উচ্চতর নেতৃত্বের বিশেষ নিয়ন্ত্রণ থাকে না। নেতৃত্বের তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি থাকলেও কার্যক্ষেত্রে তেমন কিছু প্রায় দেখাই যায় না। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের দিকে নজর রেখে রাজ্যে জমি উদ্ধারে মরিয়া সিপিএম এ বার কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত যত দূর সম্ভব বাস্তবায়িত করতে চাইছে। মুর্শিদাবাদ, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়া-সহ কিছু জেলায় ইতিমধ্যেই জেলা কমিটির বৈঠক করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিজেপি ও তৃণমূল অবশ্য সিপিএমের এমন উদ্যোগকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ।
রাজ্যে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একজোট করাই সিপিএমের ঘোষিত নীতি। সেই পথের বাইরে গিয়ে কেউ বিজেপি বা তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা করলে কড়া ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। দলীয় সূত্রের খবর, জেলা থেকে দু’ধরনের তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। প্রথমত, কোথায় কোথায় বিজেপি এবং তৃণমূলের সঙ্গে বোর্ডে শামিল হয়েছেন সিপিএমের সদস্যেরা। আর দ্বিতীয়ত, কোথায় কোথায় বিজেপি ও তৃণমূল বা তাদেরই বিক্ষুব্ধ অংশ একসঙ্গে বোর্ড করছে। দু’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ‘‘এতই নির্লজ্জ সিপিএম, তারা বিজেপির সঙ্গে বোর্ড করছে! বিজেপি কাজে লাগাচ্ছে সিপিএম, কংগ্রেসকে।’’ নিজেরা দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নিয়ে ‘দৃষ্টান্ত’ তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রচারের পাল্টা প্রচার তৈরি করতে চাইছে সিপিএম।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘স্থানীয় স্তরে অনেক রকম বিষয়ের উপরে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নির্ভর করে। রাজ্য রাজনীতির সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকে না। তা ছাড়া, পঞ্চায়েতের সব সদস্য আমাদের দলের সরাসরি সদস্য নন। তাঁদের ক্ষেত্রেও নীতি লঙ্ঘন হয়ে থাকলে আলোচনা করে এই ধরনের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসার বার্তা দেওয়া হচ্ছে।’’ সিপিএমের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, যে সব ক্ষেত্রে নীতি লঙ্ঘনের ‘ব্যতিক্রমী ঘটনা’ ঘটছে, তার মধ্যে এলাকা ভিত্তিতে তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতার চেয়ে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলানোর প্রবণতা বেশি। দু’ধরনের ক্ষেত্রেই বহিষ্কার ও সাসপেনশনের কিছু সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে হয়েছে। তাঁর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘সিপিএম যত বহিষ্কার করবে, আমাদেরই ভাল হবে! তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে সিপিএমের লোকজন আমাদের দিকেই আসবেন। এই পঞ্চায়েত ভোটেও অনেক পুরনো বামপন্থীদের সমর্থন আমরা পেয়েছি।’’
তৃণমূল ও বিজেপির উদ্দেশে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতে প্রায় ৯৭-৯৮% ক্ষেত্রে দলের নীতি মেনেই বোর্ড গঠন হয়েছে। যেখানে যেখানে ব্যতিক্রম হয়েছে, আমরা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু বিজেপি ও তৃণমূল মিলে যেখানে বোর্ড হচ্ছে (যেমন, তমলুকের বিষ্ণুবাড় অঞ্চল), সেখানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?’’
তবে তৃণমূলের নেতা তাপস রায়ের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস কোনও ভাবেই বিজেপি বা অন্য কারও সঙ্গে হাত মেলানো সমর্থন করে না। তবে পঞ্চায়েত স্তরে বরাবরই বিচ্ছিন্ন ভাবে এই রকম কিছু ঘটনা ঘটে। পঞ্চায়েতের গোটা বিষয়টা দলীয় নেতৃত্বের নজরে আছে। প্রয়োজন মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy