ঘরের অন্দরে ‘বিপ্লবে’র পরে পলাশ ফুটল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমে!
জেলা সম্মেলনে ফয়সালা হয়নি জেলা কমিটি নিয়ে। পরে ভোটাভুটিতে দলীয় নেতৃত্বের পেশ করা জেলা কমিটির বাকি প্যানেল জিতে এলেও হেরে গিয়েছিলেন জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী! সিপিএমের সাংগঠনিক রাজনীতিতে যাকে ‘বিব্লব’ই বলা হচ্ছিল। সেই পর্বের পরে উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমের জেলা সম্পাদক বেছে নেওয়া হল পলাশ দাসকে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরে নতুন জেলা কমিটির বৈঠক ডেকে সম্পাদক বাছাই ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ করিয়ে নেওয়া হলেও তার আগের প্রক্রিয়া খুব মসৃণ হয়নি বলেই দলীয় সূত্রের খবর।
জেলা কমিটির বৈঠকের আগে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে রাজ্য কমিটির ৭ জন সদস্যকে নিয়ে আলাদা করে আলোচনায় বসেছিলেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। জেলার প্রথম সারির নেতৃত্বের মতামত যাচাই এবং সহমতের পরিস্থিতি তৈরি করাই এই আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল। তবে ‘সহমত’ তৈরি করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে রাজ্য নেতৃত্বকে। সূত্রের খবর, পরবর্তী জেলা সম্পাদক হিসেবে পলাশ ছাড়াও উত্তর ২৪ পরগনার শহরাঞ্চলের আরও তিন নেতা-নেত্রীর নাম নিয়ে তুল্যমূল্য আলোচনা হয়েছে। পলাশ আগে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে জেলা সামলেছেন এবং উত্তর ২৪ পরগনার মতো বড় ও জটিল জেলায় তিনি ‘ভারসাম্য’ রেখে চলতে পারবেন, এই যুক্তিতে শেষ পর্যন্ত দমদমের ওই নেতাকে মেনে নেওয়ার পক্ষে সায় দিয়েছেন বাকিরা। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে বাকিদের বলা হয়েছে জেলা সম্পাদককে দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করে চলতে। সূত্রের খবর, ভোটাভুটিতে তাঁকে যে ভাবে হারিয়ে দিয়ে ‘অপদস্থ’ করা হয়েছে, তা নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন বিদায়ী জেলা সম্পাদক।

গৌতম দেবের সঙ্গে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্ব। —নিজস্ব চিত্র।
পরে জেলা কমিটির বৈঠকে অবশ্য ঐক্যের ছবিই তুলে ধরা হয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, শ্রীদীপ ভট্টাচার্যেরা সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির আর এক সদস্য দেবলীনা হেমব্রম। জেলা সম্পাদক হিসেবে পলাশের নাম প্রস্তাব করানো হয়েছে নিরাপদ সর্দারকে দিয়ে, সমর্থন করেছেন গার্গী। জেলা কমিটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার এক নেতার কথায়, ‘‘আপাতত একটা সিদ্ধান্তে আসা গিয়েছে। সামনে বিধানসভা নির্বাচন, সকলে মিলেই কাজ করতে হবে।’’ আর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্যের তরফে আগাম কোনও মত দেওয়া হয়নি। জেলা থেকেই আলোচনার ভিত্তিতে জেলা সম্পাদকের নাম এসেছে।’’ ডানকুনির আসন্ন রাজ্য সম্মেলনের জন্য উত্তর ২৪ পরগনার ৪৩ জন প্রতিনিধি বেছে নেওয়া হয়েছে আগেই।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)