পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিলেন সুজন চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুন হওয়ার পরেই জ্বলে উঠেছিল জয়নগরের দলুইখাকি। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল গ্রামের একের পর এক বাড়িঘর, দোকানপাট! অভিযোগ, বেছে বেছে সিপিএম নেতা-কর্মীদের বাড়িতেই হামলা চালানো হয়েছে। তার পর থেকেই গোটা গ্রাম পুরুষশূন্য। আতঙ্কে সোমবার রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি বাড়ির মহিলারা। সকালেও গোটা গ্রাম নিস্তব্ধ। ভোরের আলো ফুটতেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন অনেকে। মঙ্গলবার তাঁদের নিয়েই জয়নগর থানায় গেলেন সিপিএম নেতারা। অবিলম্বে যদি ঘরছাড়াদের গ্রামে না ফেরানো হয়, তা হলে তাঁরাই সেই ব্যবস্থা করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘সাত-আট দিন, সব মিলিয়ে ২২ তারিখ (নভেম্বর) পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। ওঁদের গ্রামে ফেরানোর ব্যবস্থা না করা হলে আমরা বুঝিয়ে দেব। সব শক্তি নিয়ে এখানে আসব।’’
সোমবার সকালে বামনগাছি পঞ্চায়েতের বাঙালবুড়ির মোড়ে নমাজ পড়তে যাওয়ার সময় খুন হন সইফুদ্দিন। মসজিদের সিঁড়িতে সবে পা রেখেছিলেন তিনি, সেই সময়েই তাঁর ঘাড়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি চালিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু পালানোর সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় দু’জন ধরা পড়ে যান স্থানীয়দের হাতে। অভিযোগ, তাঁদের এক জনকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। অন্য জনকে জখম অবস্থায় উদ্ধার করে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ, সইফুদ্দিন খুনের পরেই দলুয়াখাকিতে বেশ কয়েক জন বাম নেতা-কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বাঙালবুড়ির মোড় থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে দলুয়াখাকি। সেখানে অন্তত ১৫টি বাড়ি ও দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। দগ্ধ হয়েছে বাড়ি লাগোয়া খড়ের গোলা। তবে আর কোনও প্রাণহানির খবর মেলেনি। সন্ধ্যায় গ্রামে যখন তাণ্ডব চলছে, অভিযোগ, তখন এলাকায় দমকলের গাড়ি যেতে বাধা দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। পরে অন্য গাড়িতে দমকলকর্মীরা এলাকায় পৌঁছন। এলাকার মানুষের মুখেচোখে তখন আতঙ্ক। পুরুষদের খোঁজ প্রায় নেই। বাড়িতে ছিলেন শুধু বৃদ্ধেরা। মহিলারাই এগিয়ে এসে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের সক্রিয়তার অভাবেই এই ঘটনা ঘটেছে।
গ্রামের এই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার সেখানে যান সিপিএমের প্রতিনিধি দল। ওই দলে সুজন ছাড়াও ছিলেন কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু দলুইখাকিতে ঢোকার আগেই বামনগাছিতে তাঁদের আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বাধা পেয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়াতে দেখা গিয়েছে সিপিএম নেতাদের। প্রকাশ্যে আসা একটি ভিডিয়ো ফুটেজে এক পুলিশ আধিকারিককে ধাক্কা দিতে দেখা গিয়েছে সুজনকে। ওই ভিডিয়োর সত্যতা যদিও আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। এর পরেই ঘরছাড়াদের নিয়ে জয়নগর থানায় যান সুজনেরা। সিপিএম নেতারা জানান, আপাতত থানাতেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দলের তরফে ঘরছাড়াদের জন্য হাঁড়ি-কড়াই, মশারি, কম্বল দেওয়া হয়েছে। কিছু দিন সেখানে থেকে খাওয়াদাওয়ার জন্য আর যা যা জিনিস প্রয়োজনীয়, তা-ও দেওয়া হবে জানিয়েছেন সিপিএম নেতারা। ঘরছাড়াদের উদ্দেশে সুজন বলেন, ‘‘আপনারা কয়েক দিন এখানে থাকুন। আমরা সেই ব্যবস্থা করে দিয়ে যাচ্ছি। কয়েক দিন থাকার জন্য যা যা লাগবে, বুধবারের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করছি। কেউ যদি বাড়ি ফিরতে চান, অবশ্যই ফিরতে পারেন।’’ এর পরেই পুলিশের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দেন সুজন। তিনি বলেন, ‘‘দু-এক দিনের মধ্যে আবার আসব। খোঁজ নিয়ে যাব। এক সপ্তাহের মধ্যে যদি এঁদের ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা না করা হয়, তা হলে সব শক্তি নিয়ে এখানে আসব।’’ সিপিএমের দাবি, দলুয়াখাকি তৃণমূলের কব্জায় নেই। সেই কারণেই সোমবার ওই গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দলুইখাকি যেতে চান ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও। তিনিও গোচরণে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। তাঁকেও পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে বচসায় জড়াতে দেখা গিয়েছে। কিসের ভিত্তিতে তাঁকে আটকান হচ্ছে, তা পুলিশের কাছে জানতে চান নওশাদ। কিন্তু পুলিশের তরফে তাঁকে কোনও নথি দেখানো হয়নি। আইএসএফ সূত্রে খবর, দলুইখাকির শিশুদের জন্য নওশাদ খাবার নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু পুলিশের বাধা পেয়ে সেই খাবার শেষমেশ বারুইপুরের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাসের হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন। তা যাতে গ্রামের বাচ্চারা খেতে পারে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও এসডিপিও-কে দিয়েছেন বিধায়ক। পুলিশ-প্রশাসনের অবশ্য বক্তব্য, এলাকার আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই নওশাদ ও সিপিএম নেতাদের দলুয়াখাকি যেতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy