(বাঁ দিকে) মহম্মদ সেলিম এবং অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিক কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী এবং তৃণমূলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত বৈঠক নিয়ে ফের সরব হলেন মহম্মদ সেলিম। ঘটনাচক্রে, সেলিম যে দলের নেতা, সেই সিপিএমও রয়েছে জাতীয় স্তরে বিজেপিকে রোখার লক্ষ্যে তৈরি ওই বিরোধী জোটে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম প্রশ্নে তোলেন, বাংলায় যখন বাম-কংগ্রেস নেতারা শাসকদলের ‘চোরেদের’ বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, তখন রাহুল কোন যুক্তিতে অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক করেন? সেলিমকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সিপিএম নেতাকে তাঁর পরামর্শ, কোনও বিষয়ের গভীরে না পৌঁছে এ ভাবে আলটপকা মন্তব্য করা উচিত নয়। রাজ্যে দুই জোটসঙ্গীর নিজেদের মধ্যে ‘কাদা ছোড়াছুড়ি’ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসকদল তৃণমূল। তাদের মন্তব্য, বাংলায় তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানের লড়াইয়ে নেমেছে বাম-কংগ্রেস।
অতীতেও রাহুল-অভিষেক বৈঠক নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছিলেন সেলিম। গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতেই মুম্বইতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠক ছিল। সেই সময়েই রাহুল এবং অভিষেকের মধ্যে একটি গোপন বৈঠক হয় বলে শোনা যায়। তা নিয়েই ওই সময় ধর্মতলার সভা থেকে সেলিম দাবি করেছিলেন যে, অভিষেক বাঁচার জন্যই রাহুলের শরণাপন্ন হয়েছেন! সিপিএম নেতা এ-ও বলেন, ‘‘কোনও রাহুল, কোনও মোদী অভিষেককে বাঁচাতে পারবে না!’’ ঘটনাচক্রে মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র ওই বৈঠকে তৃণমূলের সর্বময়নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক, রাহুলের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন সেলিমের দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও।
সেই সময় সেলিমের মন্তব্য নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে তো বটেই, বিস্তর টানাপড়েন চলে বিরোধী জোটের অন্দরে। শনিবার সেই সিপিএম নেতাই মুর্শিদাবাদের রানিনগরে একটি দলীয় সভা থেকে আবার বলেন, ‘‘আমরা যখন ‘চোর ধরো, জেল ভরো’র কথা বলছি, তখন চোরটা কংগ্রেসের পা ধরে বলছে, ‘দাদা, আমাদের বাঁচাও।” কটাক্ষ করে সেলিম বলেন, ‘‘ভোরের আলো ফোটার আগেই স্পেশাল প্লেনে রাহুল গান্ধীর ঘরে চলে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়!’’
অনেক লড়াইয়ের পর মাত্র কয়েক আগেই আদালতের নির্দেশে রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে বাম-কংগ্রেস। রানিনগরের পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ৪২। তৃণমূলের সাংসদ আবু তাহের খান অসুস্থ থাকায় আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৪১। সেখানেই ভোটাভুটিতে বাম-কংগ্রেস জোট পায় ২১টি আর তৃণমূল পায় ২০টি ভোট। কিন্তু কংগ্রেসের তিন জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় কংগ্রেসের ঝুলিতে ১৮টি ভোট পড়ে। তাতে স্থায়ী সমিতির দখল নিয়েছিল তৃণমূল। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে তা পুনরুদ্ধার হয়। সেই রানিনগরে বাম যুব সংগঠনের ডাকে আয়োজিত ‘ইনসাফ যাত্রা’ উপলক্ষে নবীপুরের সভায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন সেলিম। এ-ও বলেন, ‘‘২০১১ সালে কংগ্রেস সাহায্য না করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসতে পারতেন না!’’ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে দেখা গিয়েছে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জামাল হোসেনকেও। যখন একের পর এক সিপিএম নেতা কংগ্রেসকে নিশানা করে চলেছেন, সেই সময় সভামঞ্চেই ছিলেন কংগ্রেস নেতা তথা রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কুদ্দুস আলিও।
সেলিম-সহ সিপিএম নেতাদের এই ধরনের মন্তব্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধীর। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যা বোঝার বুঝতে পেরেছি। রাহুল গান্ধীর কাছে কেউ যদি পা ধরতে যায়, তা হলে রাহুল গান্ধী বলবে, পা ধরতে যেও না! আমরা সেটা বলতে পারি না। কোনও বিষয়ের গভীরে না গিয়ে এ ভাবে আলটপকা মন্তব্য করা উচিত নয়।’’
এ নিয়ে বাম-কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, “ ইন্ডিয়া জোটের পথপ্রদর্শক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে তাড়াতে অখিলেশ, তেজস্বীর পাশাপাশি নীতীশকেও দরকার। সিপিএম ইন্ডিয়া জোটের ফর্মুলা মানছে না। আর অধীরবাবুর লক্ষ্য, যে কোনও উপায়ে জিতে যোগী আদিত্যনাথের বাড়িতে নাস্তা করতে যাওয়া।”
রাহুল-অভিষেকের একান্ত বৈঠক নিয়ে বাংলার রাজনীতিতে আগেও যথেষ্ট শোরগোল হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রাজ্যের রাজনৈতিক বৃত্তের অনেকে বলছেন, লোকসভা ভোটে রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূলের সম্ভাব্য বোঝাপড়া নিয়ে সেই সময় কথা হয়ে থাকতে পারে দুই নেতার। লোকসভা ভোটে আসন ভাগাভাগি একটা বড় বিষয়। তা নিয়েই দুই নেতার আলোচনা হয়ে থাকতে পারে, এমন অনুমান করে বাংলায় অধীরের ‘ঘনিষ্ঠ’ কংগ্রেস নেতারা (যাঁরা তীব্র তৃণমূল বিরোধী বলেই পরিচিত) খানিকটা বিমর্ষও হয়ে পড়েছিলেন। এখনও তা নিয়ে বাম-কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে থাকে বিজেপি। অনেকের মতে, সেলিমও সেই সব আন্দাজ করেই সরাসরি রাহুলকে নিশানা করে চলেছেন রাজ্যে নিজেদের জমি তৈরি করতে এবং দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দিতে।
সিপিএমের একাংশের মত, রাহুলের বিরুদ্ধে বার বার সুর চড়িয়ে সেলিম আসলে ইয়েচুরিকেই বার্তা দিতে চাইছেন। রাহুলের সঙ্গে ইয়েচুরির বন্ধুত্ব সুবিদিত। তার উপর মমতার সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে ইয়েচুরির উপস্থিতি নিয়ে রাজ্যের সিপিএম নেতাদের নিচুতলার তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল। সিপিএমের ওই অংশের মতে, সেই বিষয়টি ভেবেই রাহুলের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে থাকতে পারেন সেলিম। আবার অনেকে বলছেন, সেলিম ‘মরিয়া’ হয়েই এমন আক্রমণ করেছেন। রাজ্যে তাঁর এবং তাঁর দলের ‘রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা’ নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠছে। কারণ, তারা বরাবরই তৃণমূলের বিরুদ্ধে এবং রাজ্যে সেই যুদ্ধে কংগ্রেসকেও তারা পাশে পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ‘ইন্ডিয়া’র অন্যতম নেতা রাহুল যদি অভিষেকের সঙ্গে গোপন বৈঠকে বসে পড়েন, তা হলে সিপিএমের পক্ষে তা খুব একটা ‘স্বস্তি’র হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy