আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের জন্য উপযুক্ত স্লোগান কী হবে, তা নিয়ে ভাবনায় পড়েছে বাম শিবির। প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে রাম কমে বাম আবার কেন বাড়ছে, বাংলায় এসে বিজেপি নেতাদের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু উল্টো দিকে, বামকে ভাবনায় রেখেছে রামও! আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের জন্য উপযুক্ত স্লোগান কী হবে, তা নিয়ে ভাবনায় পড়েছে বাম শিবির।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে এখন শাসক তৃণমূল কংগ্রেসেরই নিরঙ্কুশ দাপট। কোনও জেলা পরিষদই বিরোধীদের হাতে নেই। পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরেও সিংহ ভাগই তৃণমূলের হাতে। পঞ্চায়েতে অপশাসন, লুট বা দুর্নীতি সংক্রান্ত সিপিএম-সহ বিরোধীদের যা অভিযোগ, তার প্রায় সবই তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই প্রেক্ষিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধেই বামেদের মূলত লড়াই। কিন্তু শুধু তৃণমূলকে উৎখাতের ডাক দিয়ে ভোটের ময়দানে নামলে যদি নিচু তলায় রামে-বামে মিলে যায়? আবার লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে যে ভাবে বিজেপি-তৃণমূলকে এক বন্ধনীতে রেখে নিশানা করে লড়াই হয়েছে, পঞ্চায়েতে সেটা অনেক ক্ষেত্রেই নিচু তলার ‘বাস্তব অভিজ্ঞতা’র সঙ্গে মেলে না। এই দ্বিধা থেকেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের রণকৌশল চূড়ান্ত করার আগে ভাবনা-চিন্তা করছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘নীচের দিকে মনোভাব অনেকটাই এই রকম যে, আগে তৃণমূলকে হারানো যাক। তার পরে দেখা যাবে। আমরা যদি পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে হঠানোর জন্য সব মানুষকে এগিয়ে আসার ডাক দিই, তা হলে নীচের তলার ওই বাস্তবতার জন্যই সব ধরনের বিরোধী মিলে-মিশে এক হয়ে যেতে পারে। বিজেপির সঙ্গে কোনও রকম সমঝোতা হলে শাস্তির হুঁশিয়ারি রাজ্য স্তর থেকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটাই প্রবণতা হয়ে দাঁড়ালে কত লোককে শাস্তি দেওয়া যাবে!’’ পূর্ব মেদিনীপুরে কয়েকটি সমবায়ের নির্বাচনে বাম ও বিজেপি সমর্থকদের একত্রে লড়াই করার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। এমন ঘটনা বন্ধ করতে ওই জেলায় বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও নিয়েছে সিপিএম। কিন্তু চিন্তা তাতে থামছে না।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল বনাম বাকি বিরোধীদের একত্র হয়ে লড়াইয়ের প্রবণতার সম্ভাবনা সিপিএমের সাম্প্রতিক রাজ্য কমিটিতেও আলোচিত হয়েছে। কয়েকটি জেলার নেতারা নিচু তলায় ‘বাস্তবতা’র কথা তুলে ধরেছেন। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘পঞ্চায়েতে বেশ কিছু জায়গায় বিরোধীরা তলায় তলায় সমঝোতা করে ফেলে শাসক তৃণমূল ভাল রকম বিপাকে পড়তে পারে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে সেই রকম ফল পাওয়া গেলে বড় দল হিসেবে প্রচার পাবে বিজেপি, তখন তারা আগামী লোকসভা নির্বাচনে আবার গত বারের মতোই ফায়দা নেবে।’’ এই সম্ভাবনা ঠেকাতেই আপাতত সিপিএম নজর দিয়েছে পঞ্চায়েতের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ স্থানীয় শাসনের ডাকের উপরে। গ্রামে গ্রামে নভেম্বর হয়ে এই ডিসেম্বরেও সিপিএমের কৃষক, ক্ষেতমজুর ও শ্রমিক সংগঠনের উদ্যোগে যে পদযাত্রা চলছে, সেখানে স্লোগান রাখা হয়েছে— ‘গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও, বাংলা বাঁচাও’।
বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ সব দল ও ব্যক্তির ভোট একজোট করার কথা অবশ্য বলেই রেখেছে সিপিএম। সে দিক থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতায় তাদের কোনও বাধা নেই। তবে প্রদেশ কংগ্রেসেরও এক বর্ষীয়ান নেতার মতে, ‘‘পঞ্চায়েতে কে কী করবে, সে সব উপর তলার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সিপিএমের তা-ও কিছুটা সংগঠন আছে, আমাদের অবস্থা তো আরও কঠিন!’’
রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘বাম এবং বিজেপি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে একসঙ্গে আছে, এটা ধরে নিয়েই আমরা লড়ছি। ওরা কখনও ভোট এক জায়গায় ফেলে, কখনও ভাগ করে! আমাদের লক্ষ্য, উন্নয়নের ইতিবাচক কথা বলে প্রতি বুথে ন্যূনতম ৫১% ভোট নিশ্চিত করা।’’ আর রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, বাম ও কংগ্রেস পরীক্ষিত এবং প্রত্যাখাত, তৃণমূল পতনের পথে। ভবিষ্যৎ বিজেপিই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy