Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

‘আগুন নিয়ে খেলা! মূল্য দিতে হবে’, হুঁশিয়ারি সিপিএম-এর

হাওড়া থেকে অভিযান শুরুর আগে শুক্রবার সকাল থেকেই পুলিশের  ব্যাপক প্রস্তুতি দেখে  সিপিএম নেতৃত্ব যুব ও ছাত্র সংগঠনকে ‘তৈরি’ ’হয়ে রাস্তায় নামতে বলেন।

বামেদের নবান্ন অভিযান ঘিরে সংযর্ষে আহত পুলিশকর্মী বিপ্লব মণ্ডল। শুক্রবার।  নিজস্ব চিত্র।

বামেদের নবান্ন অভিযান ঘিরে সংযর্ষে আহত পুলিশকর্মী বিপ্লব মণ্ডল। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৪
Share: Save:

চাকরি ও কম খরচে পড়াশোনার দাবিতে নবান্ন অভিযান করতে গিয়ে বামপন্থী যুব ও ছাত্রদের পুলিশের ‘আক্রমণে’র মুখে পড়তে হওয়ায় সিপিএম সরকারকে হুঁশিয়ারি দিল, আগুন নিয়ে খেললে গোটা রাজ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়বে। পুলিশের হামলার প্রতিবাদে শুক্রবারই নানা জায়গায় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ মিছিল বা অবরোধ হয়েছে। রাজ্য জুড়ে আজ, শনিও কাল, রবিরার ‘কালা দিবস’ ও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট।লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে ঝিমিয়ে পড়া বাম সংগঠনকে আবার নতুন উদ্যমে পথে নামার রসদও দিয়েছে যুব ও ছাত্রদের এই কর্মসূচি।

কৌশলগত ভাবেই এ বার যুব ও ছাত্রদের সিঙ্গুর থেকে নবান্ন অভিযানে সরাসরি জড়াননি বামফ্রন্টের রাজ্য নেতারা। কর্মসূচির ভার ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল ১২টি বাম যুব ও ছাত্র সংগঠনের হাতেই। অভিযানের প্রথম দিন সিঙ্গুর থেকে হাওড়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণই ছিল। তবে হাওড়া থেকে নবান্ন যাওয়ার পথ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে টানাপড়েন ছিল বলে বাম যুব নেতৃত্ব হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন, বাধা দিলে রাস্তায় লড়াই হবে। হাওড়া থেকে অভিযান শুরুর আগে শুক্রবার সকাল থেকেই পুলিশের দুর্গ রচনা এবং ‘রণসজ্জা’ দেখে সিপিএম নেতৃত্ব যুব ও ছাত্র সংগঠনকে তৈরি হয়েই রাস্তায় নামতে বলেন। নবান্ন যাওয়ার পথে মল্লিকফটকে পুলিশ মিছিল আটকানোর পরেই এলাকা রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। ঘটনার পরে হাওড়া হাসপাতালে আহত যুব ও ছাত্র সংগঠনের কর্মীদের দেখতে গিয়েছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব, আভাস রায়চৌধুরীরা।

শিল্প ও চাকরির দাবিতে পথে নামলে কেন পুলিশের লাঠি-কাঁদানে গ্যাসের মুখে পড়তে হবে, সেই প্রশ্নই তুলেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘পয়সা দিয়ে এজেন্সি লাগিয়ে তৃণমূল ‘দিদিকে বলো’ শুরু করেছে। আর চাকরি, শিল্পের দাবিতে যুব ও ছাত্রেরা মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে চাইলে তিনি শুনবেন না? মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত থাকলে অন্য মন্ত্রীরা কেউ পারতেন না যুব প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করতে? নবান্নে যাওয়ার আগেই রাস্তা আটকে ছাত্র, যুবদের বেপরোয়া ভাবে আক্রমণ করল ক্ষমতার মোহে অন্ধ সরকার!’’ এই সঙ্গেই সেলিমের হুঁশিয়ারি, ‘‘আগুন নিয়ে খেলছে সরকার। মনে রাখবেন, ছাত্র যৌবন মাথা নত করে না। আগুন জ্বাললে গোটা রাজ্যে সেই আগুন ছড়িয়ে যাবে।’’ পুলিশের আক্রমণের পাশাপাশি রাস্তা সংলগ্ন বাড়ির ছাদ থেকেও পরিকল্পিত ভাবে মিছিলের উপরে ইট ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিমানবাবুর। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপরেই বারবার হামলা হচ্ছে। প্রতিবাদে সর্বত্র সরহ হওয়ার জন্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব নাগররিককে আবেদন জানাচ্ছি।’’

রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায় অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সব কিছুর রীতিনীতি আছে। এই রকম কর্মসূচিতে পূর্বসূরিরা কত বার গুলি চালিয়েছে, মমতা সরকারের সঙ্গে তার তুলনা করা হোক। আর সদর দফতর আক্রান্ত হলে প্রশাসকনে তো ঠেকাতেই হয়!’’

অভিযানকারীরা আবার দাবি করেছেন, নবান্নে ‘হামলা’ বা ‘দখল’ করার কোনও উদ্দেশ্য তাঁদের ছিল না। সায়নদীপ মিত্র, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, সৃজন ভট্টাচার্য, প্রতীক উর রহমানের মতো যুব ও ছাত্র নেতা-সহ বহু বাম কর্মী আহত হয়েছেন। তার মধ্যে চার জনের অবস্থা গুরুতর। ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ বলেছেন, ‘‘বেকারত্বের জ্বালা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দাঁড়াতে আমরা আবার যাব! দেখি কী ভাবে আটকান!’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘শিক্ষক হোক বা যুব, সাম্প্রতিক কালের সব আন্দোলনকেই পুলিশ আমিষ করে দিয়েছে। নিরামিষ থাকতে দেয়নি!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Nabann CPM Police Lathi Charge TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE