দলের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত। দলের শীর্ষে ১৭ জনের মধ্যে আরও ৭ জনের মেয়াদ ফুরোবে বয়স-নীতি মেনে। সংগঠনের শীর্ষ স্তরে এই বড়সড় রদবদলের জন্য নানা সমীকরণ দানা বাঁধতে শুরু করেছে সিপিএমে। একই সঙ্গে উঠতে শুরু করেছে ‘ব্যতিক্রমে’র কিছু দাবিও।
তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেস। নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের পাশাপাশি পলিটব্যুরোর এক ঝাঁক নতুন সদস্য বেছে নিতে হবে সেখানে। সেই নিরিখেই মাদুরাইয়ের আসন্ন পার্টি কংগ্রেস সাম্প্রতিক কালের অন্যান্য সর্বভারতীয় সম্মেলনের চেয়ে আলাদা। কোন রাজ্য থেকে কারা পলিটব্যুরোয় সুযোগ পাবেন, তার জন্য দলের অন্দরে শুরু হয়েছে নানা রকমের ঘুঁটি সাজানো।
পার্টি কংগ্রেসের জন্য সাংগঠনিক খসড়া রিপোর্ট চূড়ান্ত করা হয়েছে দিল্লিতে সদ্য হয়ে যাওয়া সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। সূত্রের খবর, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ কিছু রাজ্যে দলের মহিলা সদস্য বৃদ্ধির হার ভাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। ছাত্র বা যুব ফ্রন্টের ক্ষেত্রেও ভাল-খারাপ মিলিয়ে চিত্র রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের একাংশ দাবি তুলেছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দলের অবস্থার নিরিখে বর্ষীয়ান নেতা-নেত্রীদের ‘অব্যাহতি’ দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘যান্ত্রিক’ ভাবে সিদ্ধান্ত না-নিয়ে কিছু ছাড় রাখা হোক। মহিলাদের ফ্রন্টে দলের কাজ ভাল করার সূত্রেই দাবি উঠেছে, বৃন্দা কারাটকে পলিটব্যুরোয় রেখে দেওয়া হোক আরও এক দফার জন্য। যদিও পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাট স্বয়ং এমন প্রস্তাবে উৎসাহী নন। দলের অন্দরে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, নিয়ম মেনেই তিনি কমিটি থেকে ‘অবসর’ চান পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে। একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্য কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের জন্য শুধু পলিটব্যুরোয় ‘বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্যে’র ব্যতিক্রমী নজির তৈরিতে কারাটের আপত্তি নেই।
বয়স-নীতির কারণে মাদুরাই কংগ্রেসে সিপিএমের পলিটব্যুরো থেকে বিদায় নেওয়ার কথা প্রকাশ ও বৃন্দা, বিজয়ন, মানিক সরকার, সুভাষিণী আলি, সূর্য্যকান্ত মিশ্র এবং জি রামকৃষ্ণন— এই ৭ জনের। প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি প্রয়াত হওয়ায় তাঁর জায়গাও ফাঁকা। বিজয়নের পাশাপাশি এখন বৃন্দাকে ‘ব্যতিক্রমে’র সুযোগ দেওয়ার দাবিও জোরালো হচ্ছে। সিপিএম সূত্রের খবর, পলিটব্যুরোয় অন্য মহিলা মুখ হিসেবে তামিলানাড়ুর ইউ বাসুকি, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক, মহারাষ্ট্রের মরিয়ম ধওয়লের নাম বিবেচনায় আছে। সিটুর নেত্রী এ আর সিন্ধুর নামও আছে সম্ভাবনার তালিকায়। কৃষক সংগঠন থেকে বিজু কৃষ্ণনের পাশাপাশি দিল্লির অরুণ কুমার আছেন দৌড়ে।
এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, সূর্য্যকান্ত অব্যাহতি পেলে তাঁর জায়গায় যেতে পারেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। বাংলা থেকে মহম্মদ সেলিম ও রামচন্দ্র ডোমের পরে তিনিই হতে পারেন পলিটব্যুরোয় তৃতীয় প্রতিনিধি। তবে আরও ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁর পরিবর্তে অন্য নাম বিবেচনায় এলে পূর্ব বর্ধমান থেকে এক প্রাক্তন যুব নেতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে এক প্রাক্তন সাংসদ— কেন্দ্রীয় কমিটির এই দুই সদস্যের মধ্যে কেউ সুযোগ পেতে পারেন। পলিটব্যুরোয় যাঁকে দেখা যাবে, পরবর্তী কালে বঙ্গ সিপিএমের অনেকটা রাশ তাঁর হাতেই যাবে, এমনই সমীকরণ ভাবা হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে।
সার্বিক ভাবে পালাবদল প্রসঙ্গে সিপিএমের পলিটব্যুরোর এক সদস্যের মত, ‘‘কেরলে বিজয়নই সরকারের মুখ। তাঁর জন্য ‘ব্যতিক্রম’ করার নির্দিষ্ট কারণ আছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে মতাদর্শগত, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভাবে সক্ষম নেতৃত্বই বেছে নেওয়া হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)