Advertisement
E-Paper

গেরুয়া প্রভাব মোকাবিলায় উদ্বাস্তু-নজর সিপিএমের

দেশ ভাগের পর থেকে নানা সময়ে বাস্তুহারা যে সব মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে এ’পারে এসে বাসা বেঁধেছেন, তাঁদের সিংহ ভাগই হিন্দু। তার মধ্যে আবার বড় অংশ রয়েছে তফসিলি জাতিভুক্ত।

— প্রতীকী চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৪৪
Share
Save

এই রাজ্যের নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা উদ্বাস্তু কলোনি ছিল এক সময়ে বামপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি। জমানা বদলের সময়ে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে বামেদের সেই প্রভাব প্রথমে ধাক্কা খেলেও পরে ওই এলাকায় সন্তর্পণে জমি তৈরি করেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। যার ফল ভোটের বাক্সে তুলেছে বিজেপি। বঙ্গে গেরুয়া কর্মকাণ্ড যখন ক্রমেই বাড়ছে, সেই সময়ে উদ্বাস্তু এলাকায় পুরনো জমি উদ্ধার করে পাল্টা লড়াইয়ে নামতে চাইছে সিপিএম।

দেশ ভাগের পর থেকে নানা সময়ে বাস্তুহারা যে সব মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে এ’পারে এসে বাসা বেঁধেছেন, তাঁদের সিংহ ভাগই হিন্দু। তার মধ্যে আবার বড় অংশ রয়েছে তফসিলি জাতিভুক্ত। তাঁদের হয়ে আন্দোলনে সক্রিয় থেকে, সরকারে থাকাকালীন মাথার উপরে ছাদ ও জীবিকার ব্যবস্থা করে উদ্বাস্তু অংশের মন এক সময়ে জয় করেছিল বামেরা। প্রজন্ম বদলের সঙ্গে সঙ্গে সেই কাজের প্রভাব ক্ষীণ হয়েছে। গত কয়েকটি নির্বাচনে তফসিলি অংশের সমর্থন গিয়েছে বিজেপির বাক্সে। সাম্প্রতিক নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে হিন্দু ভাবাবেগ উস্কে উদ্বাস্তু এলাকায় আরও প্রভাব তৈরি করতে চাইছে আরএসএস-বিজেপি। এমতাবস্থায় সিপিএম জীবিকার লড়াইয়ের পাশাপাশি নাগরিকত্বের প্রশ্ন সামনে এনে প্রতিরোধ গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।

কালিম্পং, পূর্ব মেদিনীপুর ও পুরুলিয়া বাদে রাজ্যের ২০টি জেলায় উদ্বাস্তু এলাকা আছে। ওই জেলাগুলি থেকে সিপিএমের প্রতিনিধিদের নিয়ে চার দফায় বৈঠক হয়েছে কোচবিহার, মালদহ, বর্ধমান ও কলকাতা শহরে। উঠে এসেছে উদ্বাস্তু এলাকায় আরএসএসের সক্রিয়তা বৃদ্ধির কথা। সূত্রের খবর, সিপিএমের তরফে দুই কৌশলে এগোনোর পরিকল্পনা হয়েছে। প্রথমত, সম্মিলিত কেন্দ্রীয় বাস্তুহারা পরিষদের (ইউসিআরসি) ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে উদ্বাস্তু আন্দোলনে বামেদের ভূমিকার কথা আবার সামনে আনতে হবে। নতুন প্রজন্ম এই ইতিহাস সে ভাবে জানে না। আর দ্বিতীয়ত, এরই পাশাপাশি উদ্বাস্তু এলাকার মানুষের বর্তমান সমস্যা ও জীবন-জীবিকার প্রশ্নে আন্দোলন গড়ে তুলে বামেদের প্রাসঙ্গিকতা ফেরাতে হবে।

নানা জেলা থেকে দল ও উদ্বাস্তু সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠকগুলিতে ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ও সুমিত দে, রাজ্য নেতা কল্লোল মজুমদার, রেখা গোস্বামী, ইউসিআরসি-র রাজ্য সম্পাদক মধু দত্ত প্রমুখ। সুজনের বক্তব্য, ‘‘ভেদাভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে, ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে সর্বস্তরের মানুষকেই। উদ্বাস্তু আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের তো বটেই। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে ছিন্নমূল মানুষ এসে জীবন-জীবিকা, বাসস্থানের নিরাপত্তা পেয়েছিলেন। তাঁদের নিজেদের জীবনবোধ এবং শিক্ষা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। তাঁরা নিজেরাই লাল ঝান্ডা কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।’’ তাঁর মতে, ‘‘অর্জিত অধিকার রক্ষা, জীবন-জীবিকার আন্দোলনকে শক্তিশালী করেই বিভাজনের রাজনীতি রুখতে হবে।’’

সিপিএম নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) আনার পরে নাগরিকত্বের জন্য প্রাথমিক কাগজপত্র জোগাড় করতে হবে এক সময়ের দেশত্যাগী মানুষকেই। সাধারণ উদ্বাস্তু মানুষের জন্য যা সঙ্কটের কারণ। বিজেপির নানা প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবে এই ভূমিকা সম্পর্কে তৃণমূল স্তরে আরও প্রচার চালানোর পরিকল্পনাও নিচ্ছে বামেরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPM RSS

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy