গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
স্বাধীনতার পর দলের এমন বিপর্যয় কখনও হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলকে এ ভাবেই পর্যালোচনা করল সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। সাড়ে তিন দশক ক্ষমতায় থাকার পর মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে দল শূন্যে পৌঁছে গেল কী করে? এর পর্যালোচনা করতে দিয়ে বেশ কয়েকটি ‘ভিলেন’ বেছেছেন সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাটরা।
কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টেবিপর্যয়ের ছ’টি মুখ্য কারণ (ভিলেন) দেখানো হয়েছে। যার নির্যাস— কার্যত আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের নেতাদের ধুয়ে দিয়েছেন দিল্লির এ কে গোপালান ভবনের কমরেডরা।
বিপর্যয়ের প্রথম যে কারণের উল্লেখ পর্যালোচনা রিপোর্টে করা হয়েছে, সেটি আদতে একটি সরল স্বীকারোক্তি। সেখানে বলা হয়েছে, একই সঙ্গে বিজেপি-র বিরোধিতা এবং তৃণমূলের ১০ বছরের শাসনকালের ত্রুটি তুলে ধরা সত্বেও বাংলার মানুষ সংযুক্ত মোর্চাকে ‘বিকল্প’ হিসেবে মনে করেনি।
দ্বিতীয় কারণে সংযুক্ত মোর্চা গঠন নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আব্বাস সিদ্দিকির দল ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) সঙ্গে জোট মানুষ ঠিক ভাবে নেয়নি বলেও মনে করেছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। আব্বাসের আইএসএফ ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নীতির কথা বললেও তারা ‘মুসলিম সংগঠন’ হিসেবে পরিচিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বলে মনে করছেন গোপালন ভবনের নেতারা। ফলে ভোটাররা সেই জোটকে গ্রহণ করেননি। এই জোট কোনও ‘স্থায়ী সমাধান’ হতে পারে না বলেও রিপোর্টে উল্লেখকরা হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে দলের জমি অধিগ্রহণ নীতি নিয়ে যা বলা হয়েছে, তা-ও করুণ ফলের কারণ হিসেবে মনে করেছে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি। তাদের মতে,সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের আগেসিল্পায়নের জন্য তৈরি করা স্লোগান ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’ স্লোগান গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। কেন্দ্রীয় কমিটি মনে করেছে, এই স্লোগান অতীতের সেই পরিস্থিতির কথা মানুষকে আরও একবার নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে। যা গ্রামীণ মানুষের সঙ্গে সিপিএমের দূরত্ব তৈরি করেছিল।
মেরুকরণের রাজনীতিকে সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব সঠিক গুরুত্ব দেয়নি বলেও সমালোচনা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের রিপোর্টে। বলা হয়েছে, সঠিক ভাবে বিষয়টাকে তুলে ধরতে না পারাটা বড় ব্যর্থতা। সাচার কমিটির রিপোর্টে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা, সমানাধিকার এবং সত্তার কথা বলা হয়েছে। বাংলায় শুধু নিরাপত্তার বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সিপিএম-এর বদলে বিজেপি-র উঠে আসার জন্য অবশ্য তৃণমূলকে দায়ী করেছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তৃণমূলই আরএসএস এবং বিজেপি-কে বাংলায় জমি তৈরি করে দিয়েছে। রাজ্য সিপিএম ভোটের প্রচারে বিজেপি- তৃণমূলকে সমান ভাবে আক্রমণ করে (যা থেকে ‘বিজেমূল’ তত্ত্বের উৎপত্তি) ভুল করেছে। মনে রাখা উচিত ছিল, সিপিএম-এর কাছে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীবিজেপি-ই। অর্থাৎ, আরও একবার সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের ‘বিজেমূল’ তত্ত্বকে নস্যাৎ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ভোটের পরেই ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব ভুল ছিল বলে মেটমাধ্যমে স্বীকার করে নিয়েছিলেন। সম্প্রতি সিপিএমের একটি দলিলেও তা লিখিত ভাবেই স্বীকার করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বাংলার সিপিএম রাজ্যের প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া বুঝতেই পারেনি। সেই হাওয়া যতটা না ছিল, তার চেয়েও তাকে বেশি করে দেখা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরোধী হাওয়া ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে বোঝা গিয়েছিল। কিন্তু তা কাটিয়ে ওঠার জন্য তৃণমূল যে বিধানসভা ভোটের আগে বিভিন্ন রকমের চেষ্টা চালিয়েছে, সেটা আদৌ বিবেচনা করা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy