আহত সদস্যদের বার্তা মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির। — ফাইল চিত্র।
চোট-আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর লড়াইয়ে ঝাঁপ দিতে হবে। আহত মাওবাদীদের এই বার্তা দিল দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর সিপিআই (মাওবাদী)-এর ‘প্রতিষ্ঠা দিবস’। তার আগে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে মাওবাদীরা। সেই বিজ্ঞপ্তিতে জখম ‘গেরিলা’দের প্রতি জানানো হয়েছে এই আহ্বান। পাশাপাশি দলের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করার কথাও বলা হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে দলের জখম সৈনিকদের প্রতি ‘সমবেদনা’ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এ-ও বলা হয়েছে, ‘দল দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করে, আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং লড়াইয়ে ঝাঁপ দেবেন।’ দলের দাবি, গত এক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে দলের সদস্যদের সামরিক দক্ষতা, রাজনৈতিক শিক্ষা এবং আদর্শগত শক্তি। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মাওবাদীদের ১৮তম ‘প্রতিষ্ঠা দিবস’। ২০০৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর জনযুদ্ধ গোষ্ঠী এবং এমসিসি যুক্ত হয়ে আত্মপ্রকাশ করে সিপিআই (মাওবাদী) নামে। তার পর থেকেই এই সপ্তাহটিকে ‘প্রতিষ্ঠা সপ্তাহ’ হিসাবে পালন করে আসছে তারা। সেই উপলক্ষে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দলের ‘প্রতিষ্ঠা সপ্তাহ’ পালনের আহ্বানও জানানো হয়েছে ওই বিজ্ঞপ্তিতে। তাতে প্রশংসা করা হয়েছে দেশে কিছু দিন আগে ঘটে যাওয়া কৃষক আন্দোলনেরও।
মাওবাদীদের ‘প্রতিষ্ঠা সপ্তাহ’ ঘিরে সতর্ক এ রাজ্যের জঙ্গলমহল। তাই সপ্তাহ জুড়ে জঙ্গলমহলের থানাগুলিতে নজরদারি এবং টহলদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পুরুলিয়ার জয়পুর, তুলিন, বরাবাজার, বান্দোয়ান ইত্যাদি এলাকা ঝাড়খণ্ড সীমানা ঘেঁষা। ঝাড়গ্রামের আমলাশোল, বেলপাহাড়ি এলাকাগুলিও তাই। পাশাপাশি, ঝাড়গ্রাম এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে রয়েছে ওড়িশা সীমানাও। ওই এলাকাগুলিতে নিয়মিত জারি রয়েছে নাকা তল্লাশি এবং নজরদারি। এ নিয়ে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এবং সীমানা ঘেঁষা এলাকায় নিয়মিত পুলিশের নাকা চেকিং অভিযান চলছে।’’
সপ্তাহ দুই আগে ঝাড়খণ্ডে জাগুয়ার এবং কোবরা বাহিনীর যৌথ অভিযানে সে রাজ্যের সরাইকেলা এবং চাইবাসা জেলার সীমানাবর্তী এলাকায় নিহত হন মাওবাদীদের অন্ডাল’দা স্কোয়াডের এক মহিলা-সহ দুই মাওবাদী। জঙ্গলের মধ্যে একটি মাওবাদী শিবিরও খুঁজে পান বাহিনীর জওয়ানরা। ঝাড়খণ্ড পুলিশের দাবি, এনকাউন্টারে দু’জন নিহত হলেও ওই শিবিরে থাকা ৩০-৩৫ জন স্কোয়াডের সদস্য প্রাণ বাঁচাতে অন্যত্র সরে পড়ে। সে ক্ষেত্রে ওই স্কোয়াডটি এ রাজ্যের সীমানাবর্তী ঝাড়খণ্ডের কোনও এলাকায় আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারে এমন আশঙ্কার কথাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা লাগোয়া এলাকায় রয়েছে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকাশ এবং মদন মাহাতোর যৌথ স্কোয়াড।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, এখনই এ রাজ্যে সংগঠন বাড়ানোর পথে হাঁটার মতো শক্তি নেই মাওবাদীদের। তবে সেই শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তারা রাজ্যের সীমানাবর্তী জেলাগুলিতে তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানার লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মাওবাদীদের কাছে সফট টার্গেট আত্মসমর্পণ করেও সরকারি প্যাকেজ না নেওয়া প্রাক্তন মাওবাদী সদস্যরা। কিছু ক্ষেত্রে গোপনে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত তরুণ পড়ুয়াদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করা হচ্ছে বলেও গোয়েন্দা সূত্রে খবর। ২০২১ সালের নভেম্বরে ঝাড়খণ্ডে গ্রেফতার হন সিপিআই মাওবাদী পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের সদস্য প্রশান্ত বসু ওরফে কিসানদা। তদন্তকারীদের দাবি, তাঁর কাছে মিলেছিল কম্পিউটারের একটি হার্ড ডিস্ক। সেই হার্ড ডিস্কে পাওয়া ‘বেঙ্গল রিপোর্ট’ নামে একটি গোপন নথিতে এ রাজ্যে মাওবাদীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য হাতে পায় পুলিশ। সেই রিপোর্টে মাওবাদীদের প্রচারের অঙ্গ হিসাবে জাতীয় এবং রাজ্য স্তরের বিষয়ের বদলে ছোট ছোট স্থানীয় বিষয়কে হাতিয়ার করে সংগঠন চাঙ্গা করার দিক নির্দেশ রয়েছে বলে সূত্রের খবর। এ ক্ষেত্রে কেন্দুপাতার দাম সে ভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া, শালপাতা, কেন্দুপাতা সংগ্রহ এবং বিক্রির জন্য গড়ে ওঠা সমবায়গুলির নির্বাচন না হওয়া, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাব-সহ স্থানীয় সমস্যাগুলিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আরও জানা গিয়েছে, এ রাজ্যের মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা সব্যসাচী গোস্বামীর মাধ্যমে এই বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় কমিটিতে তুলেছিলেন আকাশ। পরবর্তীতে সেই বিষয়গুলিকে হাতিয়ার করে এ রাজ্যের নিজেদের সংগঠন চাঙ্গা করার রাস্তা খুঁজছে মাওবাদীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy