প্রয়াত সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী। ফাইল চিত্র।
সিপিএম নেতা, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তী (৭৮) প্রয়াত হলেন। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ তিনি বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে মারা যান। সেখানেই গত কয়েক দিন ধরে চিকিৎসা চলছিল কোভিড পজিটিভ শ্যামলবাবুর। কিডনির সমস্যার কারণে তাঁর ডায়ালিসিস চলছিল। আজ সকালের পর থেকে দু’বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। এর পর দুপুরে মারা যান সিটুর প্রাক্তন সভাপতি। যে হেতু তিনি কোভিড পজিটিভ ছিলেন, তাই প্রোটোকল মেনেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে সিপিএম সূত্রে জানানো হয়েছে।
দিন কয়েক আগে জ্বর এবং বুকে ‘কনজেশন’ নিয়ে শ্যামলবাবু ভর্তি হয়েছিলেন উল্টোডাঙার একটি নার্সিংহোমে। গত ৩০ জুলাই শ্যামলবাবুর কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ৩১ তারিখ তাঁকে বাইপাসের ধারের এই বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। শ্যামলবাবুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকায় সেখানে তাঁকে অক্সিজেন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। ছিল নিউমোনিয়াও। কিডনির সমস্যার জন্য ডায়লিসিস চলছিল। ৩ তারিখ থেকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয় তাঁকে। এ দিন ডায়ালিসিস হওয়ার পর দু’বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তখনই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, শ্যামলবাবুর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক। ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার সুদীপ্ত মিত্র বলেন, “শ্যামল চক্রবর্তীর করোনা চিকিৎসা চলছিল। সেই সঙ্গে তাঁর দু’টি ফুসফুসেই নিউমোনিয়া হয়েছিল। কিডনির সমস্যা ছিল। ডায়লিসিসের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। দুপুর পৌনে ২ টো নাগাদ মারা যান।”
শ্যামলবাবুর চিকিৎসক অজয় সরকার জানিয়েছেন, প্রথমে তাঁর নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তার পর কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শ্যামলবাবুর কো-মর্বিডিটি ছিল বলে জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। তাঁর কথায়, ‘‘ক্রিয়েটিনিন বেশি ছিল। তবে গত দু’দিন তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল। ভেন্টিলেশনে ছিলেন। আজ প্রথমে একটা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। কিন্তু সেটার পর সামলে নিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় অ্যারেস্টের পর তাঁকে আর ফেরানো গেল না।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শ্যামল চক্রবর্তীর প্রয়াণে শোকবার্তা জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর মৃত্যুতে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। শ্যামলবাবু সিটু-র রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে রাজনৈতিক জগতের ক্ষতি হল।’’
আরও পড়ুন: আক্রান্তকেও ‘নেগেটিভ’ রিপোর্ট দিয়েছিল বাঙুর
শ্যামলবাবুর মেয়ে অভিনেত্রী ঊষসী চক্রবর্তী বাবার মৃত্যুর পর জানিয়েছেন, তিনি একটি সিরিয়ালের শুটিঙে গিয়েছিলেন। তখনই হাসপাতাল থেকে তাঁকে জানানো হয় মৃত্যুর কথা। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো শুটিং করতে গিয়েছিলাম। শুনলাম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। ওঁকে আর বাঁচানো যায়নি। মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে ফোন করেছিলেন। সীতারাম ইয়েচুরি, বৃন্দা কারাত ফোন করেছেন। ওঁরা তো বাবার সহকর্মী ছিলেন। ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও কী ভাবে সততার সঙ্গে রাজনীতি করা যায়, বাবা তার উদাহরণ। দলের তরফে সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, শমীক লাহিড়ী বাবার শেষকৃত্যের বিষয়টি দেখছে।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন শ্যামলবাবু। সিটু-র সর্বভারতীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং পশ্চিমবঙ্গ কমিটির প্রাক্তন সভাপতির ছিলেন। রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। রাজ্যের মন্ত্রী হয়ে পরিবহণ দফতরের দায়িত্বও সামলেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘বড় ভাল ব্যবহার ছিল। আমার মা যাদের ভালবাসতেন বাড়িতে গেলে, শ্যামল তাঁদের অন্যতম।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘বেলা দুটো নাগাদ আমাদের পার্টির প্রবীণ নেতা কমরেড শ্যামল চক্রবর্তীর জীবনাবসান হয়েছে। পর পর দু’বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। প্রথম অ্যাটাকের পর কিছুটা সামলে নিলেও দ্বিতীয় আ্যটাকের পর সব কিছু শেষ হয়ে যায়। আমাদের সব পার্টি অফিসে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।’’
আরও পড়ুন: আক্রান্ত এবং মৃত্যুর রেকর্ডের মধ্যে রাজ্যে দ্বিতীয় বার করোনা সংক্রমণে উদ্বেগ
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, “রাজ্যের বামপন্থী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী। ছাত্র আন্দোলনে যেমন ছাপ ফেলেছিলেন, তেমনই সর্বভারতীয় স্তরে শ্রমিক আন্দোলনেও প্রথম সারির নেতা ছিলেন। অসুস্থ হলেও যুক্ত ছিলেন নানা কর্মসূচির সঙ্গে। বামপন্থী আন্দোলনের অপূরনীয় ক্ষতি।”
শোকপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি মর্মাহত। ব্যক্তিগত ভাবে চিনতাম। ছাত্র আন্দোলন থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করার সময় দেখেছি। উনি নিষ্ঠাবান নেতা ছিলেন।”
কংগ্রেস নেতা তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীও শোকপ্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “কমিউনিস্ট নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর মৃত্যু আমাকে অত্যন্ত বেদনাহত করল। তিনি প্রকৃত অর্থে এক জন জনদরদি শ্রমিক নেতা ছিলেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy