কুরিয়র সংস্থার চালানে অ্যাসিড সল্টের উল্লেখ। ইনসেটে, কেরামত আলি। —নিজস্ব চিত্র।
একটি কুরিয়র সংস্থার ডানকুনির গুদামে উত্তরপ্রদেশ থেকে এসে পৌঁছত বস্তা বস্তা ‘মুলতানি মাটি’। অন্তত তেমনই প্রচার ছিল কুরিয়র সংস্থার অন্দরে। কিন্তু দত্তপুকুরের মোচপোলে বিস্ফোরণে ন’জনের মৃত্যুর পরে জানা গেল, যেগুলি মুলতানি মাটি বলে দাবি করছেন কুরিয়র সংস্থার সাধারণ কর্মীরা, তা আদতে রাসায়নিক যৌগ! যা বিস্ফোরক তৈরির সহায়ক বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের একাংশের। যদিও সংস্থার রসিদে ওই যৌগ—অ্যাসিড সল্টের নাম লেখা থাকত।
চালানে লেখা রয়েছে অ্যাসিড সল্ট আর তাঁরা জানতেন মুলতানি মাটি! বিশ্বাসযোগ্য? এক পদস্থ কর্মী দাবি করেন, ‘‘আমরা তো জানতাম, বস্তায় করে মুলতানি মাটি আসছে। কেরামত আলি নামে এক ব্যক্তি বস্তাগুলি নিয়ে যেতেন।’’ বিস্ফোরণে কেরামতের মৃত্যু হয়েছে শুনে প্রায় আঁতকে উঠলেন তিনি। বললেন, ‘‘এ তো ভয়াবহ। আমরা তো জানতাম ওঁর মুলতানি মাটির ব্যবসা। কুরিয়রে উত্তরপ্রদেশ থেকে মুলতানি মাটি আনিয়ে গুদামে নিয়ে যান।’’
তদন্তে উঠে এসেছে, এই কুরিয়র সংস্থাটি আদতে দিল্লির। তাদের একটি চালান থেকে দেখা যাচ্ছে, সংস্থার ডানকুনির গুদামে বস্তা ভর্তি করে প্রায় ৫০০ কেজি অ্যাসিড সল্ট এসেছিল মার্চ মাসে। এটি এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ। ওই বস্তা ‘বুক’ করা হয়েছিল কেরামতের নামে। এলাকায় কেরামতের সম্পর্কে নানা রটনা রয়েছে। কেউ জানিয়েছেন, কেরামত ছিলেন মূল চক্রীদের হাতের পুতুল। কেউ জানাচ্ছেন, কেরামতই ছিলেন এলাকার সর্বেসর্বা। সংশ্লিষ্ট কুরিয়র সংস্থার ডানকুনির অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বেশ কয়েক বার কেরামতকে গুদাম থেকে বস্তা সংগ্রহ করতে দেখেছেন লোকজন।
কুরিয়র সংস্থার ওই চালানটিতে দেখা যাচ্ছে, ৫০০ কেজি অ্যাসিড সল্ট এসেছিল উত্তরপ্রদেশের হাথরসের কমলা বাজার থেকে। যদিও চালানে যে ফোন নম্বর দেওয়া, বৃহস্পতিবার তাতে ফোন করলে দেখা যায়, নম্বরটির অস্তিত্ব নেই। সূত্রের খবর, সম্ভবত কোনও তদন্ত হলে যাতে প্রাপকের খোঁজ সহজে না মেলে, তার জন্যই এমন ফোন নম্বরের ব্যবহার।
এই অ্যাসিড সল্ট কী?
পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ জানান, অ্যাসিড সল্ট বিস্ফোরক নয়। তবে, বিস্ফোরক তৈরিতে বড় ভূমিকা নিতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘বাজিই হোক কিংবা বোমা, অ্যাসিড সল্ট দহন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। একই সঙ্গে এর ব্যবহারে বিস্ফোরণও শক্তিশালী হয়। সব চেয়ে তীব্র ক্ষমতার বিস্ফোরক টিএনটি-র চেয়ে অ্যাসিড সল্ট থেকে তৈরি বিস্ফোরকের তীব্রতা ৪০ শতাংশ কম। তাই এই ধরনের রাসায়নিক বহনের আগে কুরিয়র সংস্থাগুলির সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।’’
পরিবেশপ্রেমীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত জানান, বাজি তৈরির জন্য যে ধরনের রাসায়নিক বা উপাদান আইনি ভাবে স্বীকৃত, অ্যাসিড সল্ট সেই তালিকায় পড়ে না। ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্নার কথায়, ‘‘অ্যাসিড সল্ট নিরি স্বীকৃত রাসায়নিক নয়। এত বড় বিস্ফোরণের পরে অ্যাসিড সল্টের তথ্য সামনে এল। ৫০০ কেজি অ্যাসিড সল্ট কোন কাজে ব্যবহার হয়েছে, সেই তথ্যও সামনে আসা উচিত।’’
মোচপোলে বিস্ফোরণস্থলের পাশেই কেরামতদের ভাড়া নেওয়া গুদাম থেকে মিলেছে ভিন্ রাজ্যের ছাপ মারা বস্তা। যাতে ছিল প্রচুর বাজি। গ্রাম সূত্রের খবর, বিস্ফোরণের আগে উত্তরপ্রদেশ থেকে প্রচুর রাসায়নিক ঢুকেছিল মোচপোলে। যা মজুত করা হয়েছিল শামসুল আলির (বিস্ফোরণে মৃত) জমিতে তৈরি ওই গুদামে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy