Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Scams

পুলিশে, খাদ্যেও কি দুর্নীতি-জাল

বিভিন্ন দফতরে পরিব্যাপ্ত দুর্নীতির এই ময়দানে কে যে কার চেয়ে বড় খেলোয়াড়, সেটা নির্ধারণ করাও এখন তদন্তকারীদের কাছে বড় পরীক্ষা।

CBI.

রাজ্যে কমবেশি দশ বছর ধরে চলা শিক্ষা-দুর্নীতির পাশাপাশি এ বার উঠে আসছে পুলিশ দফতরের কথাও। ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:১৯
Share: Save:

অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দুর্নীতির বিষবৃক্ষ শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে পল্লবিত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কোন কোন দফতরে তার ফল ছড়ায়নি, সেটা আলাদা করাই এখন তদন্তকারীদের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে! কারণ, পুর দফতরে চাকরি বিক্রির ব্যবসা যে জমে উঠেছিল, সেটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। রাজ্যে কমবেশি দশ বছর ধরে চলা শিক্ষা-দুর্নীতির পাশাপাশি এ বার উঠে আসছে পুলিশ দফতরের কথাও। তদন্তে বেশ কিছু নথি উদ্ধারের পরে সিবিআই সূত্রের দাবি, রাজ্য পুলিশেও টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে দেদার। এখানেই না-থেমে তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতির জাল ছড়িয়েছিল রাজ্যের খাদ্য দফতরে, কেন্দ্রের অধীন রেলে, এমনকি সেনাবাহিনীতেও!

বিভিন্ন দফতরে পরিব্যাপ্ত দুর্নীতির এই ময়দানে কে যে কার চেয়ে বড় খেলোয়াড়, সেটা নির্ধারণ করাও এখন তদন্তকারীদের কাছে বড় পরীক্ষা। তদন্তকারীদের দাবি, এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গাজিয়াবাদের ‘ওএমআর শিট’ বা উত্তরপত্র প্রস্তুতকারী সংস্থার আধিকারিক নীলাদ্রি দাসকে গ্রেফতারের পরে বিভিন্ন দফতরে চাকরি বিক্রির কিছু তথ্য তাঁদের হাতে পৌঁছেছে। সিবিআই সূত্রের অভিযোগ, নীলাদ্রি ২০১৫ সাল থেকে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং এসএসসি-র তৎকালীন সচিব সুবীরেশ ভট্টাচার্যের সুপারিশে উত্তরপত্রের নম্বর বদল করতেন। ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এসএসসি-র পাঁচটি নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র বিকৃত করে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চক্রে পার্থ-সুবীরেশের সঙ্গে নীলাদ্রিও শামিল ছিলেন বলে অভিযোগ।

তদন্তকারীদের দাবি, প্রথমে পার্থ ও সুবীরেশের হয়ে কাজ করলেও ২০১৮ সালের পরে নীলাদ্রি নিজেই ‘মিডলম্যান’ বা দালালের একটি দল তৈরি করে নিয়োগ দুর্নীতি শুরু করে দেন। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তাঁর ‘নেটওয়ার্ক’ বা দুর্নীতি-জাল সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। এসএসসি-র বিভিন্ন পদ ছাড়াও রাজ্য ও কেন্দ্রের বিভিন্ন দফতরে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই দালালেরা কোটি কোটি টাকা তুলেছিলেন বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, নীলাদ্রির এই ধরনের আট জন দালালের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানায় এফআইআর করে তাঁদের গ্রেফতার করে সিআইডি। তাঁদের জেরা করেই চক্রের পান্ডা নীলাদ্রি এবং তাঁর সহযোগী অনয় সাহার কথা জানা যায়। নীলাদ্রি ও অনয়কে গ্রেফতার করা হয় ২০১৯-এর মার্চে। সেই বছরের এপ্রিলে কলকাতা হাই কোর্টে জামিন পান তাঁরা। সিবিআইয়ের খবর, ওই দুর্নীতি চক্রের সঙ্গে নীলাদ্রি ও অনয়ের যোগ নেই বলে তখন সিআইডি-র তরফে আদালতে জানানো হয়েছিল।

গত শুক্রবার নীলাদ্রিকে গ্রেফতার করে জেরার পরে সিবিআইয়ের দাবি, নীলাদ্রি যে নিজস্ব দল গড়ে বেআইনি নিয়োগ শুরু করেছেন, সেই খবর পার্থ ও সুবীরেশের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। তার পরেই সক্রিয় হয়ে ওঠে সিআইডি। এক সিআইডি-কর্তার দাবি, ঠিক পথেই তদন্ত হয়েছে। এখন বিচার প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি বিচারাধীন।

সিবিআইয়ের দাবি, সেই তদন্তে শুধু নীলাদ্রি ও অনয়ের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছিল সিআইডি। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘আগামী সপ্তাহে ওই মামলায় সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারদের তলব করা হতে পারে।’’ তদন্তকারীদের দাবি, সিআইডি-র সেই তদন্তে বিশেষ কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপ ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। “মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে নীলাদ্রিকে আড়াল করার চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে,’’ বলছেন ওই সিবিআই-কর্তা।

সিবিআইয়ের দাবি, রাজ্য পুলিশ-সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে। অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে নীলাদ্রির এক দালালের কাছে। স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য রবিবার নিজাম প্যালেসে সিবিআই হেফাজত থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে যাতায়াতের পথে নীলাদ্রি দাবি করেন, ‘‘আমি নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত নই। আমি কোনও নম্বর বাড়াইনি। পার্থ ও সুবীরেশের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই।’’

এই বিষয়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Scams CBI West Bengal Central Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy