প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে করোনাই মূল বিষয় হবে ধরে নিয়ে এখন থেকেই যুদ্ধে নেমে পড়েছে বিজেপি। যেখানে তাদের অন্যতম হাতিয়ার দলের আইটি এবং মিডিয়া সেল।
লকডাউন বিধি মানতে গিয়ে প্রায় সব দলেরই রাজনৈতিক কাজের চালু ধরন বন্ধ। এই সময়ে বিজেপি আরও বেশি করে শানিয়ে নিচ্ছে তাদের আইটি-মিডিয়া হাতিয়ার। অবশ্য পাল্টা কোমর বাঁধছে তৃণমূলও। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সাহায্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকছে তারাও।
করোনা-পূর্ব সময়ে এনআরসি এবং সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের ফলে এ রাজ্যে বেকায়দায় পড়েছিল বিজেপি। কিন্তু এখন করোনা এবং তার আর্থ-সামাজিক প্রভাব মোকাবিলায় তৃণমূল সরকারের ভূমিকা নিয়ে যে সব অভিযোগ তাদের কানে আসছে, সেগুলি সত্য, মিথ্যা, অর্ধসত্য যা-ই হোক, সব ক’টিকে সমান গুরুত্ব দিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রচার করাই বিজেপির কৌশল— এমনটা মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। যেমন, কয়েক দিন আগে বিজেপির টুইট করা ভিডিয়োয় বসিরহাটের এক ব্যক্তিকে অনাহারে দিন কাটানোর কথা বলতে শোনা যায়। পরে তাঁকেই অন্য একটি ভিডিয়োয় বলতে দেখা যায়, তিনি যাত্রাশিল্পী। তাঁকে দিয়ে অনাহারে থাকার অভিনয় করানো হয়েছিল। আসলে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করেন, করোনা-যুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘সাফল্যের’ এক ইঞ্চি জমিও দেওয়া চলবে না।
আরও পড়ুন: ফের মৃত্যু ন’জনের, রাজ্যে মোট করোনা-আক্রান্ত ১৬৭৮
কী ভাবে আইটি-র ঘর সাজাচ্ছে বিজেপি? রাজ্য দলের আইটি সেলের সহ আহ্বায়ক জয় মল্লিক জানান, তাঁদের রাজ্য স্তরে ১২ জন বেতনভুক কর্মী আছেন। এ ছাড়া, জেলা, মণ্ডল এবং বুথ মিলিয়ে আছেন প্রায় ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। পাশাপাশি, সব নির্বাচনের আগে রাজ্য থেকে বুথ পর্যন্ত বহু অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘দূরত্ব রেখে প্রচার করতে হলে আইটি, মিডিয়া সেলে জোর দিতেই হয়। করোনা নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সব ধরনের অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল প্রচার করা হচ্ছে।’’
এর মোকাবিলায় তৈরি তৃণমূলও। গত জুলাই থেকে তৃণমূলের প্রচারের দায়িত্ব প্রশান্তের সংস্থা আইপ্যাকের হাতে। ‘দিদিকে বলো’ ও ‘বাংলার গর্ব মমতার রাজ্যব্যাপী প্রচারের খুঁটিনাটিও ঠিক করে দিয়েছে তারা। করোনা পর্বেও আইপ্যাক নিজেদের মতো করে রাজ্য সরকারের সাফল্য তুলে ধরছে এবং বিরোধী প্রচার খণ্ডনের চেষ্টা করছে। যার একটা বড় অংশ রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেক্টর ফাইভে প্রশান্তের অফিসেই আইপ্যাকের কর্মীরা একেবারে নীচের স্তর পর্যন্ত এই পরিকল্পনা পরিচালনা করছেন। জেলায় জেলায় ভারপ্রাপ্ত আইপ্যাকের পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় বিষয়েও প্রচার চলছে।
অন্য দিকে, দিলীপবাবু থেকে শুরু করে বিজেপির আইটি সেলের সর্বভারতীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অমিত মালবীয় এবং আইটি-র কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যা নিয়ে ‘কারচুপি’, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা বর্ম না-পাওয়া এবং সঙ্কটকালে গরিব মানুষের রেশন-বঞ্চনার অভিযোগ যথেচ্ছ ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছেন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে। যার মধ্যে বেশ কিছু অতিরঞ্জিত বা ‘সাজানো’ বলে অভিযোগ।
বস্তুত, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি পুরনো ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, অমিত শাহই বিজেপি কর্মীদের ভুয়ো খবর ছড়াতে উৎসাহ দিচ্ছেন। ওই ভিডিয়োয় শাহকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘‘আমরা জনতাকে আমাদের ইচ্ছেমতো বার্তা দিতে পারি, তা মিষ্টি বা টক, সত্য বা মিথ্যা, যা-ই হোক। আমরা এটা করতে পারি, কারণ, আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ৩২ লাখ লোক আছে।’’
বিজেপির এই প্রচার কৌশল নিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি-সহ সব বিরোধীই এই সঙ্কটকালেও শুধু নিজেদের দলের স্বার্থেই কাজ
করছে। আর বিজেপির প্রচার দেখে মনে হয়, সত্য, মিথ্যার পরোয়া না-করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে এখনই নির্বাচন করে রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে চাইছে তারা। মানুষের সঙ্কট তাদের কাছে গুরুত্বই পাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় দলের পর্যবেক্ষণে এবং বিজেপির স্থানীয় থেকে শীর্ষ স্তর পর্যন্ত নেতাদের প্রচারে একটা নির্দিষ্ট নকশা আছে। আমরাও প্রত্যেকটার জবাব দিচ্ছি। তবে আমাদের প্রচার করতে হচ্ছে কাজ করার পরে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy