লখনউয়ে এক কিশোরীর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি: পিটিআই।
ভেবেছিলাম জীবনানন্দের কোট দিয়ে শুরু করব, পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন। তার পরে মনে হল, এ ঠিক কাব্য করার সময় নয়, আর বোধহয় জীবনানন্দের কল্পিত অসুখও ঠিক এ রকম নয়। এ অসুখ কেমন, তা কেউ তেমন জানে না। আর এইখানেই আমাদের ভয় ঘাপটি মেরে বসে আছে। যা আমাদের অচেনা, অজানা, তাকেই আমাদের যতেক ভয়। রোগের চেয়ে ভয় ছড়িয়ে যায় বেশি। ভয়ের মতো ছোঁয়াচে আর কী-ই বা আছে! তবে সকলেই ভিতু নয়, কেউ কেউ ভিতু। যেমন আমি এবং আমার মতো অনেক আমি। এই আমি-রা লড়াই করে না, কিন্তু লড়াইয়ের জয় ভোগ করে।
শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন, এই যুদ্ধে যদি তোমার মৃত্যু হয়, তবে স্বর্গবাস করবে। যদি জয়ী হও, তবে তুমি হবে পৃথিবীর অধীশ্বর। কিন্তু লড়াইটা তো করো। সেই প্ররোচনা যেন আজও বাতাসে ঘুরে ঘুরে মানুষকে কিছু বলে। আমাদের চার দিকে তো বেঁচে থাকারই ঢেউ, বেঁচে থাকারই আধিপত্য। কত কষ্ট করেও তো কত মানুষ নানা ভাবে বেঁচে থাকাটুকু ধরে রেখেছে। কত মূল্যবান এই বেঁচে থাকাটুকু, তা কি আর সকলে বুঝতে চায়! এক কবি সখেদে বলেছিলেন, ‘শত মুক্তাধিক আয়ু কালসিন্ধু জলতলে ফেলিস পামর!’
সিংহী যখন গর্জন করে, তখন তরাসে বনভূমি কেঁপে ওঠে বটে, কিন্তু তার শাবক কি সেই গর্জনে ভয় পায়? সে তো জানে যে, সে তার মায়ের ছায়াতেই রয়েছে! এই বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কও ওই মা আর তার ছা-এর। ইচ্ছে করলে প্রকৃতি তো লহমায় মুছে দিতে পারে মানুষ আর তার যতেক নির্মাণ। হয়তো বাৎসল্যের বশে করে না। কিন্তু আমরা তাকে পাত্তা দিলাম কই! আর আজ তাই মায়ের গর্জন শুনে ভয় পাচ্ছি, পৃথিবীর বিনাশ এসে গেল নাকি! যবনিকা কি কম্পমান?
আরও পড়ুন: সাইবার-হানার আশঙ্কা, সতর্কিত সব হাসপাতাল
আরও পড়ুন: ‘হাই-রিস্ক স্পটে’ করণীয়: স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা
যে কীটাণুকীট দুনিয়ার মানুষকে হাঁটু ভেঙে বসিয়ে দিয়েছে, সে এতই ছোট যে, তার ক্ষুদ্রতা অনস্তিত্বের কাছাকাছি। সাধারণ অণুবীক্ষণে তাকে দেখা যায় না। আর ওইটুকু শরীরেও রয়েছে দুর্মর চালাকি, সে নিজেকে দরকার মতো পাল্টে নেয়। সে এখন দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডারের চেয়েও বহু গুণ ভয়ঙ্কর। তার চেয়েও বেশি বিপদ হল, সে আমাদের চেনা শত্রু নয়। সব ঠিক, তবু তার গায়েও বিধাতার ‘ডেট অব এক্সপায়ারি’ লেখা আছে নিশ্চিত। শত্রু তো সে বটেই, পরাভবও তার সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তবু নত মস্তকে তাকে এক শিক্ষকের সম্মানও দিতে হবে। সে আমাদের শিখিয়ে গেল, কী ভাবে পরিচ্ছন্ন রাখতে হয় আমাদের এই পৃথিবীর বৃহৎ বাতাবরণটিকে, কোন উপায়ে দূষণমুক্ত রাখতে হবে আমাদের মহার্ঘ সমুদ্র ও নদী, কেমন করে বিভেদ ভুলে শত্রু-মিত্র জোট বাঁধতে হয়। আরও অনেক পরোক্ষ শিক্ষাও সে দিয়েছে, যা ক্রমে ক্রমে বোধগম্য হবে আমাদের কাছে। সে এক বার ‘মিউটেট’ করে এই ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের অনুমান, সে হয়তো আবার বদলে গিয়ে সংক্রমণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। তা-ই হোক। আর তার কাছে আমরা তার এই বদলে যাওয়ার পাঠটুকু নিই না কেন! নিজেকে বদলে ফেলার সময় মানুষের তো অনেক আগেই এসে গিয়েছে। শুধু অনুঘটকের দরকার ছিল, কিংবা বলা যায়, এক রাগী ও সবক শেখানোর মতো শিক্ষকের। করোনার মতো এমন যোগ্য শিক্ষক আমরা আর কোথায় পাব?
রাজপুত্র বনবাসে গিয়েছিলেন। ভোগসুখ লহমায় ত্যাগ করে বদলে নিলেন নিজেকে, মানিয়ে নিলেন নতুন পরিবেশ ও উপকরণহীন জীবনযাত্রার সঙ্গে। তিনি পারলে আমরাই বা পারব না কেন? এই যে লাগাতার গৃহবাস, এই বদল আমরা মেনে নিলাম ভয়ে। এ যদি পারি, তবে ভালবেসে বদলাতে পারি না?
নতুন বাংলা বছর দরজায় এসে দাঁড়িয়ে আছে। একটু অবাক হয়তো বা, কারণ তাকে বরণ করে নেওয়ার কেউ নেই। মরণের তাড়া খেয়ে বরণ পালিয়েছে এ বার। বইপাড়ার চেনা মিলনোৎসব নেই, বাংলাদেশে হবে না ইলিশ-পান্তাভাতের উদযাপন। হালখাতার কী হবে, কে জানে! অবশ্য এ বড় সুখের সময় নয়, উৎসব সুসময়ের জন্য তোলা থাক।
আমি রাজনীতির লোক নই। রাজনীতিতে আমি যেমন অজ্ঞ, তেমনই অনভিজ্ঞ। তবু এই কালো সময়ে দু’জনের কথা একটু বলতে ইচ্ছে করছে। এক জন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দুঃসময়ে তিনি যেন বাঘিনির মতো আগলে আছেন বাংলাকে। ‘মেরি ঝাঁসি নেহি দুঙ্গি’। যে তৎপরতায় তিনি এই সঙ্কটকালের মুখোমুখি হলেন, তার স্মৃতি সঞ্চিত থাকবে বহুদিন। আর বিশ্বের বরিষ্ঠ নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প, বরিস জনসন কিংবা ব্রাজিলের জাইর বোলসোনারোকে যখন এই সঙ্কটে বিভ্রান্ত ও ভীত দেখাচ্ছে, তখন নরেন্দ্র মোদী শান্ত ও দৃঢ়। কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই হলে ক্যাপ্টেনের কি ভয় পেলে চলে? না, ক্যাপ্টেন ভয় পাননি। ভারতবাসী লড়াইটা লড়ে যেতে পারে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy