Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

ঝড়ে ভাঙা ঘরে মুম্বই থেকে মরিয়া ফোন মায়ের

নিরানন্দ পার্বণের দিনে একই কথা ভেসে আসছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে।

পিটিআই-এর প্রতীকী ছবি।

পিটিআই-এর প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ০০:১৬
Share: Save:

এত কষ্ট করে যে ঘরে ফিরলেন, সেই ঘরটাই অদৃশ্য।

ইদের আগের দিনে মুম্বই থেকে সস্ত্রীক দেগঙ্গায় ঘরে ফেরেন শেখ রাজা মণ্ডল। ফোনের নেটওয়ার্ক আছে। কিন্তু কাঁচা ঘর স্রেফ স্মৃতিচিহ্ন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, আইএসআই-এর ছাত্র কয়েক জনকে সেই ধ্বংসস্তূপের ভিডিয়ো পাঠিয়ে দিয়েছেন। ধারধোর করে বাসে ঘরে ফেরেন জরিশিল্পী রাজা। আমপানের তাণ্ডব যে ঘরটাকে বেমালুম খেয়ে নিয়েছে।

ইদের দুপুরে মুম্বইয়ের আর এক জরিশিল্পী মিয়ামন মল্লিকের ফেরার ব্যাপারে অবশ্য নিশ্চয়তা পাননি স্ত্রী সেলিনা বিবি। মঙ্গলকোটের কাছে কুলসোনা গ্রামে ছেলেমেয়েদের আলুসেদ্ধভাতটুকু বেড়ে দিতে দিতে গ্রাম্য বধূ বলেন, “আমার স্বামী ফর্ম ভরলেও কবে ফিরবেন বলতে পারছেন না।”

নিরানন্দ পার্বণের দিনে একই কথা ভেসে আসছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে। লুধিয়ানায় রাজমিস্ত্রি, মালদহের রতুয়ার মহম্মদ আতাউর রহমান বা জরিমিস্ত্রি মঙ্গলকোটের নপাড়ার মহম্মদ কাফি মল্লিক মুম্বইয়ের ধারাভি বস্তি থেকে একই কথা শোনাচ্ছেন। দুজনকেই বাড়ি ফেরার চেষ্টায় পুলিশের লাঠি খেতে হয়েছে। দুজনই সার বুঝেছেন, লকডাউনের দেশে একমাত্র পয়সা থাকলেই ফেরার উপায়! কাফি শুনেছেন, আগামী মাসের ২ তারিখ ট্রেন দিতেও পারে বাংলার। কিন্তু উঠতে গেলে পুলিশকে ‘খুশি’ করতে হচ্ছে। বাড়িতে ফোন করে আতাউর রহমানের সান্ত্বনা, ওরা সকলে খুশির ইদের মিষ্টিটুকু পেয়েছে। গ্রামে চালের আটা তেলে ভেজে আন্দাসা পিঠা করেছে বৌটা। উৎসবের দিন বলে কথা! গুরুদ্বারের লঙ্গরে একবেলা খেয়ে কাটানো আতাউররাও জনা দশেক মিলে সুজি, চিনিতে মিষ্টিমুখটুকু করতে পেরেছেন।

কাল, বুধবার ফের চালু হবে বাংলায় ফেরার ট্রেন। তবু চটজলদি আশা দেখছেন না ভিন রাজ্যে বন্দি বেশির ভাগ শ্রমিক। এই ভাবেই ইদ পেরিয়ে গেল আমদাবাদের কাছে মফসসলি শহরে বাড়ি ভাঙার মিস্ত্রি হরিশ্চন্দ্রপুরের নাজমুল হক বা কেরলে এর্নাকুলামের কাছে কডনরে ইটভাটার কর্মী ডোমকলের সারিকুল মণ্ডলদের জীবনে।

ঘরে ফিরেও অনিশ্চয়তার জীবন। তবু ফিরতে হয়। কাজ ছাড়া ভিন রাজ্যে থাকার রেস্ত শেষ। ঘাটাল, কেশপুরের আব্দুস সাত্তাররা বেঙ্গালুরু থেকে বাসে ফিরেছেন কিন্তু চণ্ডীপুরে এখনও ফেরা অনিশ্চিত বেঙ্গালুরুর দরজি শেখ মিলনের। স্বরূপনগরে মেয়ে আঁখিতারাকে একবারটি ফোনে পেতে মরিয়া মুম্বইয়ের বান্দ্রার আয়া সেন্টারের খাদিজা মণ্ডল। “ঝড়ে ঘর গিয়েছে। মেয়ের কোলে দুধের শিশু। যে ভাবে হোক, ব্যবস্থা করুন। মেয়ের কাছে ফিরতেই হবে আমায়।”

কান্না আর উৎকণ্ঠায় ইদের দিন কানায় কানায় ভরে উঠেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Migrant Labourer Eid 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE