ফাইল চিত্র
স্বাস্থ্য ভবনের প্রায় প্রতিটি বিভাগের আধিকারিকেরা কোভিড কর্মসূচিতে ব্যস্ত। বুধবার জানতে চাওয়া হয়, লকডাউনের হাফ সেঞ্চুরি রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবায় কী প্রভাব ফেলেছে? যা প্রতিক্রিয়া এল, তাতে স্পষ্ট, দু’মাস ধরে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে রয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা!
মা-শিশুর স্বাস্থ্য, কমিউনিকেব্ল ডিজ়িজ়, নন-কমিউনিকেব্ল ডিজ়িজ়-সহ প্রায় সব বিভাগের অফিসারদেরই বক্তব্য, ‘করোনার ধাক্কা মারাত্মক!’ স্বাস্থ্য দফতরের খবর, টিকাকরণ-সহ ‘রিপ্রোডাক্টিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেল্থ’ প্রকল্পের কাজ থমকে গিয়েছে। গত দু’মাস ধরে টিকাকরণ হয়নি বললেই চলে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের হারও তথৈবচ। প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় প্রসূতি-মৃত্যুর হার ৯৪। তা ৮০-র নীচে নামানোর লক্ষ্যে কাজ করছিল স্বাস্থ্য দফতর। ২০১৭-র তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত রিপোর্টে রাজ্যে প্রতি হাজারে শিশু-মৃত্যুর হার ২২ (দেশের নিরিখে বঙ্গ সপ্তম)। তা ১৬-য় নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু করোনা-আবহে সেই সব লক্ষ্যমাত্রা শিকেয় উঠেছে। এ দিনই মা-শিশুর স্বাস্থ্যের সঙ্গে সংক্রান্ত কর্মসূচিতে গতি আনতে জেলার সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠক করেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল অব ক্যানসার, ডায়াবিটিস, কার্ডিয়োভাস্কুলার ডিজ়িজ়েস অ্যান্ড স্ট্রোক (এনপিসিসিএস) কর্মসূচি পরিচালিত হয় এনসিডি (নন-কমিউনিকেব্ল ডিজ়িজ়) সেলের মাধ্যমে। রাজ্যের আটটি জেলার আর্সেনিক নিয়ন্ত্রণ এবং ছ’টি জেলার ফ্লুরোসিস প্রকল্পও এই সেলের আওতায়। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানান, কন্টেনমেন্ট জ়োন তো বটেই, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দক্ষিণ দিনাজপুরের মতো গ্রিন জ়োনের জেলাতেও গত দু’মাসে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার রোগীদের খুঁজে বার করার কাজ চালানো যায়নি। এক স্বাস্থ্য অফিসার বলেন, ‘‘আমরাও থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া রোগীদের রক্ত জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।’’ অন্য এক অফিসার বলেন, ‘‘লকডাউনের মধ্যে চার হাজার টাকা অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে এসেও ক্যানসার রোগী কেমোথেরাপি পাননি। ডায়াবিটিসের রোগীকে এক মাসের ওষুধ দেওয়া হয়। অসংখ্য রোগী সেই ওষুধ নিতে আসতে পারেননি।’’ অফিসারদের একাংশের বক্তব্য, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রোগীদের সঙ্গে একটা যোগাযোগ তৈরি হয়। সে-ভাবেই বছরভর রোগ নিয়ন্ত্রণের কাজ চলে। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
আরও পড়ুন: রেড রোডে বা মাঠে ইদের নমাজ নয়
যক্ষ্মা সেলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘লকডাউনে রোগীরা হাসপাতালে আসতে না-পারায় ডায়াগনসিস হচ্ছে না। কারা যক্ষ্মা নিয়ে বসে আছেন, তা স্পষ্ট নয়। নমুনা সংগ্রহ না-হওয়ায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর কোন ওষুধে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স রয়েছে, তা-ও বুঝতে পারছি না।’’
করোনাভাইরাসের প্রকোপে কাবু জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি। এক স্বাস্থ্য অফিসার জানান, রাজ্যের ছ’টি জেলায় ফাইলেরিয়া রয়েছে। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে মাল্টিড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ৭৫% থেকে বেড়ে ৮৭% হয়েছিল। ওই অফিসার বলেন, ‘‘রাজ্যকে ফাইলেরিয়া-মুক্ত করার পথে অনেক এগিয়েও পিছিয়ে পড়লাম।’’ স্বাস্থ্য দফতরের এক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জানান, কালাজ্বরে ‘অ্যাক্টিভ কেস’ খোঁজার কাজ আটকে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এক বার কালাজ্বরে আক্রান্ত হলে দু’বছরের মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত। কালাজ্বর, ম্যালেরিয়া রোধে ইন্ডোর রেসিডুয়াল স্প্রে-ও হচ্ছে না। হাইড্রোসিলের অস্ত্রোপচার বন্ধ।’’ এক অফিসার জানান, বাড়ি বাড়ি কুষ্ঠরোগী খুঁজে বার করার কাজ থমকে রয়েছে। ডিসঅ্যাবিলিটি প্রিভেনশন অ্যান্ড মর্বিডিটি রিডাকশনের শিবির হচ্ছে না। এক অফিসার বলেন, ‘‘কমিউনিকেবল ডিজ়িজ় হওয়ায় রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।’’
করোনায় প্রাপ্তিও আছে কিছু। এক শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তা জানান, সচেতনতা সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি। সেই জন্য জলবাহিত রোগের প্রকোপ কমেছে। পরিকাঠামো নির্মাণের দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। ৬৮টি কোভিড হাসপাতাল, ৯০৭টি সিসিইউ শয্যা, ৩১০টি ভেন্টিলেটর, ১৫৮টি বাইপ্যাপ, ডায়ালিসিস ইউনিট, বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিক্যাল গ্যাস পাইপলাইনের পরিকাঠামো তারই অঙ্গ। ওই শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘বিভিন্ন কর্মসূচি পিছিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কারও কিছু করার ছিল না। সব কিছুর দু’টি দিক থাকে। করোনা পরিস্থিতি থেকেও নিশ্চয়ই প্রাপ্তি কিছু রয়েছে। পরে হয়তো তা বুঝব।’’
আরও পড়ুন: আইন বদল রুখতে প্রধানমন্ত্রীকে আর্জি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy