মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
লকডাউন ১৪ এপ্রিলের পরেও বাড়তে পারে। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বুধবার এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে লকডাউনের মধ্যে সাধারণ মানুষের যাতে অসুবিধা না হয়, তা দেখার কথা বললেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিকেলের সাংবাদিক বৈঠকে মমতার মন্তব্য, ‘‘কড়াকড়ি হোক, কিন্তু বাড়াবাড়ি যেন না হয়।’’
মমতা এ দিন জানান, রাজ্যে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ জন। এনআরএসের চিকিৎসক, নার্স স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনার পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। রাজ্যের হিসেবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা মঙ্গলবারের চেয়ে দু’জন বেড়ে হয়েছে ৭১। মৃত ৫ জন। নতুন কোনও মৃত্যু হয়নি। বুধবারের সাংবাদিক বৈঠকে এই তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বেলেঘাটা আইডি-তে এখন ১৬ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তাঁদের মধ্যে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন জন। তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’’ অন্য দিকে এনআরএস হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ৩০ জন চিকিৎসক, ৫ জন নার্স এবং ২ স্বাস্থ্যকর্মীর কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের সংসদীয় দলনেতাদের সঙ্গে এ দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বৈঠকে লকডাউন ১৪ এপ্রিলের পরেও বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন মোদী। সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘লকডাউন নিয়ে আমরা তো কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। কেন্দ্র যে ভাবে বলবে, সে ভাবেই আমরা চলব। কেন্দ্র নির্দিষ্ট করে কিছু বললে, তবেই আমরা এ বিষয়ে বলতে পারব। তবে লকডাউনের সময় যাতে সাধারণ মানুষের কোনও সমস্যা না হয়, তাও দেখতে হবে। কড়াকড়ি হোক, কিন্তু বাড়াবাড়ি যেন না হয়।’’
আরও পড়ুন: লকডাউনের সময়সীমা বাড়বে, সর্বদলীয় বৈঠকে ইঙ্গিত মোদীর
এই প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘১৯ মে পর্যন্ত সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই সময়ের মধ্যে খুব সতর্ক থাকতে হবে।’’ কিন্তু নির্দিষ্ট ওই তারিখটির কথা কেন বললেন? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘‘সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৪৯ দিন লকডাউন করলে করোনার বিরুদ্ধে ভাল সাফল্য পাওয়া যায়। সেই হিসেবেই ১৯ মে-র কথা বলেছি।’’
দিল্লিতে তবলিগ জামাতে যোগ দেওয়া নিয়ে অনেকে গুজব, ফেক নিউজ ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘দেশে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে ২৪ মার্চ। তার আগেই তবলিগ জামাত হয়েছে। আমরা খবর পাওয়ার পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি। যাঁরা যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে চিহ্নিত করে কোয়রান্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে অনেকে গুজব ছড়াচ্ছেন, সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছেন। দুর্যোগ, মহামারি এলে জাত-পাত দেখে আসে না। তাই এই সব গুজব বা ভুয়ো খবর ছড়াবেন না।’’
আরও পড়ুন: ইতিমধ্যে কাজ গিয়েছে ৯০ লক্ষের, অদূর ভবিষ্যতে ঘন অন্ধকার দেখছে সব সমীক্ষাই
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন লকডাউনের আওতা থেকে ফুল-কে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার জেরে সংক্রমণ যাতে আরও না ছড়ায়, এ দিন সে বিষয়ে সাবধান করেছেন তিনি। বলেন, ‘‘ছাড় দেওয়ার মানে গায়ে গা ঘেঁষে বেচা-কেনা করা নয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ফুলের বেচা-কেনা করুন।’’ এ ছাড়া আরও কোন কোন পণ্য, বা ক্ষেত্র ছাড়ের আওতায় আনা যেতে পারে তা পর্যালোচনা করতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া নানা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে অর্থনীতি এবং মূল্যবৃদ্ধি-কালোবাজারি নিয়ন্ত্রণে পরামর্শ দিতে আরও দু’টি বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরি হয়েছে।
বুধবারের সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন, দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী ও সুকুমার মুখোপাধ্যায়। তাঁরা চিকিৎসা ও সাবধানতা সম্পর্কে তাঁদের মতামত জানান। অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় প্লাজমা চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু হয়েছে। মোটামুটি ভাবে সেই বিষয়টি স্বীকৃতও হয়েছে। এ বার আমাদের রাজ্যেও সেই পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করার চিন্তাভাবনা চলছে।’’
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ, সংগঠন, ক্লাব, সংস্থা মুখ্যমন্ত্রীর করোনা মোকাবিলার তহবিলে অর্থসাহায্য করেছেন। তাঁদের এ দিন ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy