প্রতীকী ছবি।
এ কেমন রোগ? অসহায় প্রশ্ন সায়েন্স সিটি সংলগ্ন নিভৃতবাস কেন্দ্রে নজরবন্দি যুবকের। বেনিয়াপুকুরের বাসিন্দা ওই যুবকের মা করোনায় আক্রান্ত হয়ে আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মায়ের সংস্পর্শ-যোগে ওই যুবক এখন সপরিবার নিভৃতবাসে। শুক্রবার তাঁর বাবারও করোনা ধরা পড়েছে। পরিবারের বাকিদের কী হবে? ১৬ মাসের কনিষ্ঠ সদস্যকে কে দেখবে? এই দুশ্চিন্তার মধ্যে মায়ের চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালের বকেয়া সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা বিল মেটানোর চাপে জর্জরিত জুতোর দোকানের যুবক ব্যবসায়ী। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বিলের টাকা জোগাড় করব, নাকি বাড়ির সদস্যদের কী হবে, তা ভাবব!’’
৯ এপ্রিল থেকে জ্বরে ভুগছিলেন প্রৌঢ়া মা। অসুস্থতার চার দিনের মাথায় তাঁর প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। স্বামী, তিন ছেলে, এক মেয়ে, বড় বৌমা এবং নাতিকে নিয়ে প্রৌঢ়ার সংসার। প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যালে। সেখানকার চিকিৎসকদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা কোভিড পরীক্ষার জন্য প্রৌঢ়াকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বলেন। বড় ছেলে জানান, আনন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে প্রৌঢ়াকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। লালারসের নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ে। স্বাস্থ্য দফতরের তত্ত্বাবধানে তাঁর স্বামী, তিন ছেলে, মেয়ে, বড় বৌমা এবং দেড় বছরের নাতিকে সায়েন্স সিটির নিভৃতবাস কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: রেশন-অশান্তি অব্যাহত, মন্ত্রীর দাবি ‘ব্যবস্থা হয়েছে’
আরও পড়ুন: সাবধান হবেন কী ভাবে, পথে নেমে পরামর্শ মমতার
ওই মহিলার বড় ছেলে বলেন, ‘‘সায়েন্স সিটিতে একটি বহুতলের চারতলায় আমাদের রাখা হয়েছে। গত দু’দিনে এই তলায় আট জনের করোনা হয়েছে।’’ নিভৃতবাসে যাওয়ার পরে মায়ের খোঁজ নিতে পারেননি ছেলে। বাবা হৃদ্রোগী। মায়ের করোনার কথা এত দিন তাঁকে জানানো হয়নি। কিন্তু সেই আড়ালও এ দিন সরে গিয়েছে। পরিবারের সব সদস্যের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এ দিন প্রৌঢ়ের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। সন্ধ্যায় বর্মবস্ত্র পরিয়ে প্রৌঢ়কে নিয়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বড় ছেলে বলেন, ‘‘বাবার চিকিৎসা কোথায় হবে, জানি না! আমাদের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসা বাকি। আমার ১৬ মাসের বাচ্চাকে কে দেখবে? এই রোগ পরিবারগুলোকে শেষ করে দিচ্ছে!’’
অসহায় এই পরিস্থিতিতে বিপর্যস্ত পরিবারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বেসরকারি হাসপাতালের বিল মেটানোর চাপ। প্রৌঢ়াকে ভর্তির সময় ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। বুধবার এক বন্ধুর সাহায্যে দেড় লক্ষ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকার বিল বাকি। প্রৌঢ়ার ছেলে বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে এত খরচ হবে, ধারণা ছিল না। কোয়রান্টিনে থাকায় অন্যত্র নিয়েও যেতে পারিনি। এত টাকা মেটাব কী ভাবে, বুঝতে পারছি না।’’ নিজেদের অবস্থার কথা স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তাকে ই-মেলে জানিয়েছেন প্রৌঢ়ার পুত্র।
বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে জানান, ওই রোগিণীকে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছিল। প্রথমে মহিলাকে নিয়ে যাওয়া হয় সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সরকারি পরিষেবায় সন্তুষ্ট না-হয়ে রোগিণীকে বেসরকারি হাসপাতালে আনা হয়। ক্লিনিক্যাল প্রোটোকল মেনে রোগিণীকে উন্নত মানের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। কী ধরনের চিকিৎসা হচ্ছে, তা জানানোও হয়েছে পরিবারকে। রোগিণী চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন এবং তাঁর চিকিৎসা বন্ধ করা হবে না বলে জানিয়েছেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বকেয়া অর্থ প্রসঙ্গে এক হাসপাতাল-কর্তা জানান, প্রৌঢ়ার স্বজনেরা কী চান, সেটাও সুস্পষ্ট ভাবে হাসপাতালকে জানানো উচিত।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy