পুলিশের গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় প্রসূতিকে। —নিজস্ব চিত্র।
স্ত্রী-কে নিয়ে কী ভাবে হাসপাতাল পৌঁছবেন, তা কিছুতেই ভেবে উঠতে পারছিলেন না সুরেন্দ্র গুপ্ত। বুধবার সকাল থেকেই স্ত্রী জ্যোতিদেবী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন। কিন্তু হাতে টাকাপয়সা প্রায় নেই বললেই চলে। কয়েক দিন তো ঘরেই বসে। তার উপর এই করোনা-আবহ— সাহায্য করারও কেউ নেই। তা-ও নিজে নিজেই অনেকটা চেষ্টা করেছিলেন। ট্রেন বন্ধ। প্রাইভেট গাড়ি করে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। সকাল থেকে তিনি অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য পায়ে হেঁটে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু, কোনও উপায় হয়নি। শেষমেশ সোনারপুর স্টেশনের কাছে গিয়ে এক প্রকার হতাশ হয়ে বড় রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন স্থানীয় সুকান্ত সরণির বাসিন্দা সুরেন্দ্র।
সকাল তখন সাড়ে ১১টা। বন্ধ স্টেশন এলাকার ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন সোনারপুর থানার আইসি সঞ্জীব চক্রবর্তী। হতাশ এবং উদভ্রান্ত ভাবে এক জনকে ও ভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনি গাড়ি থামান। জানতে চান কী হয়েছে? সুরেন্দ্র তখন তাঁকে জানান, তাঁর স্ত্রী বাড়িতে প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স পাননি। প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করার টাকা নেই। সমস্ত কিছু বন্ধ বলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন, যদি কোনও গাড়ি তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
এর পরেই সঞ্জীব নিজের গাড়িতে তুলে নেন সুরেন্দ্রকে। পৌঁছন সুকান্ত সরণিতে সুরেন্দ্রর বাড়িতে। কাতরাতে থাকা সুরেন্দ্রর স্ত্রীকে তাঁর দুই প্রতিবেশীর সাহায্যে এর পর নিজের গাড়িতে তোলেন আইসি। রওনা দেন সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে উদ্দেশে। কিন্তু, মাঝপথে গাড়িতেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন জ্যোতিদেবী। সঞ্জীব জানিয়েছেন, মা এবং সদ্যোজাত দু’জনেই হাসপাতালে ভর্তি, তবে সুস্থ আছেন।
আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে আটকে ২৭ বাঙালি, উদ্ধার পেতে কাতর আর্তি নবান্নের কাছে
মেয়ে হওয়ায় ভীষণ খুশি সুরেন্দ্র। পাশাপাশি পুলিশের এমন ভূমিকার প্রশংসাও করছেন তিনি। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে কোনও কাজ নেই। বাড়িতেই বসে। টাকাপয়সাও নেই। সকাল থেকে আমার স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রণা ওঠে। অ্যাম্বুল্যান্স পাইনি। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখনওই দেবদূতের মতো হাজির হয়েছিলেন ওই অফিসার। ওঁকে অনেক ধন্যবাদ। উনি না থাকলে আজ যে কী হত! চির দিন ওঁর প্রতি কৃত়জ্ঞ থাকব।’’
আরও পড়ুন: করোনা ত্রাণে আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য চেয়ে আর্জি মমতার
আর সঞ্জীব বলছেন, ‘‘পুলিশও তো মানুষ। ওই ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছিলাম, তিনি পেশায় তিনি হকার। ডান হাতটা নেই। শিয়ালদহ স্টেশনে চানাচুর বিক্রির কাজ করেন। গত কয়েক দিন ধরে ট্রেন বন্ধ। তাই কাজও বন্ধ। কাছে টাকা নেই। অথচ স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠেছে। হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কথাগুলো শুনেই গিয়েছিলাম ওঁর বাড়ি।’’ তবে তার আগে নিজের গাড়িটা ভাল করে ধুয়ে নিয়েছিলেন বলে জানান সঞ্জীব। পাশাপাশি সোনারপুর হাসপাতালেও তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে রেখেছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালে ডাক্তাররা তৈরিই ছিলেন। কিন্তু আমার গাড়িতেই প্রসব হয়ে যায়। ওই অবস্থাতেই জ্যোতিদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দু’জনেই ভাল আছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy