ছবি: পিটিআই।
করোনা-রোগিণীর সরাসরি সংস্পর্শে এসেছিলেন তাঁর ছেলে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন পর্ণশ্রীর মধ্যবয়সি ওই মহিলার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার ১২ দিন পরেও তাঁর ছেলে বা স্বামীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। মহিলা কী ভাবে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন, সেই সূত্র সন্ধানের তো প্রশ্নই নেই।
ফুলবাগানের এক প্রৌঢ় কোভিড রোগিণীর মেয়ে সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী। তাঁদের বাড়িতে আরও কিছু পরিবারের বাস। মেয়ে জানান, উপসর্গ নেই, তাই কারও নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
দুই ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ফোন করে রোগিণীর শারীরিক অবস্থা কেমন, হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন আছে কি না, রোগিণী কী ভাবে সংক্রমিত হলেন, বাড়ির অন্য কারও উপসর্গ রয়েছে কি না— জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু আক্রান্তের সরাসরি সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা নমুনা পরীক্ষা থেকে বাদ পড়লেন কী ভাবে, উঠছে প্রশ্ন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, রাজ্যে কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কাজ আদৌ কতখানি গুরুত্বের সঙ্গে হচ্ছে, এই ধরনের ঘটনায় সেই প্রশ্ন থাকছেই।
মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন বা সম্প্রতি সরকারি কোভিড হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়েছেন, এমন ৩২ জন আক্রান্তের পরিবারকে ফোন করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে গাঙ্গুলিবাগান, বেহালার গোপাল মিশ্র রোড এবং কাশীপুরে বসবাসকারী আক্রান্তের আত্মীয়েরা জানান, ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’ হয়েছে। বাকিদের বক্তব্য, কী ভাবে আক্রান্ত হলেন, তা জানতে চাওয়া হলেও স্বাস্থ্য দফতরের ফোনে সংক্রমণের উৎস খোঁজার চেষ্টা হয়নি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের যে নমুনা পরীক্ষা হয়নি, পরিজনের বক্তব্যেই সেটা স্পষ্ট।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
চিনের হেইলোংচিয়াং প্রদেশে ১১ মার্চ-৯ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন কোনও আক্রান্তের খবর মেলেনি। তার পরে মাত্র ১৮ দিনের মধ্যে ৭১ জন করোনায় আক্রান্ত হন। সম্প্রতি চিনের সিডিসি (সেন্টারস ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) একটি গবেষণাপত্রে জানিয়েছে, ওই ৭১ জনের সংক্রমণের উৎস মার্কিন মুলুক থেকে ফেরা উপসর্গহীন এক মহিলা। আক্রান্তদের দেহে উপস্থিত ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সও আলাদা। ‘‘আক্রান্তের সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তার ছক তৈরি না-করলে কী হতে পারে, চিনের ওই ঘটনাই তার প্রমাণ,’’ বলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত এক প্রবীণ এপিডিমিয়োলজিস্ট।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। উত্তর ২৪ পরগনার জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক চিকিৎসক-আধিকারিক বলেন, ‘‘নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য একই ব্যক্তির আরটি-পিসিআরে পজ়িটিভ আসার পরেও র্যাপিড অ্যান্টিজেন করা হচ্ছে।’’ নমুনা পরীক্ষার মাপকাঠিতে যে গলদ আছে, তা হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া তথ্যেও লক্ষ্য করা গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের খবর, ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্তের নিরিখে ওই জেলার শীর্ষে থাকা পাঁচটি এলাকা হল হাওড়া পুরসভা (৪৬৭৫), বালি-জগাছা (৬৮৪), সাঁকরাইল (৬৬২), ডোমজুড় (৬২১) এবং আমতা-১ ব্লক (৩৮৮)। আক্রান্তের পরিসংখ্যানে শীর্ষে থাকা বালি-জগাছা (১২২৯), ডোমজুড় (১০৮৭) এবং সাঁকরাইলের (৬৭৩) নাম সব চেয়ে কম নমুনা পরীক্ষার তালিকাতেও রয়েছে! জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বার করার কাজ যে ঢিলেঢালা ভাবে চলছ, হাওড়ায় উলটপুরাণের পরিসংখ্যানই সে-কথা বলে দিচ্ছে।
কার্ডিয়োথোরাসিক সার্জন কুণাল সরকারের বক্তব্য, গোষ্ঠী সংক্রমণে সরকারি সিলমোহর পড়লে ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’ নিয়ে ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণ বোধগম্য হয়। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে কেস পজ়িটিভিটির হার সাড়ে ছয় থেকে সাত শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এই পরিসংখ্যান ঠিক হলে কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ে ঢিলেমি দেওয়ার সময় এখনও আসেনি। রোজ গড়ে তিন হাজার আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খোঁজ চালানোর বিষয়টি কষ্টকর হলেও সেটা করতেই হবে।’’
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy