ফাইল চিত্র।
দ্বিতীয় দফায় প্রবল প্রতাপে ফিরে আসা কোভিড আবহে সরকারি দফতরে দূরত্ব-বিধি পালন, নিয়মিত জীবাণুনাশ, কর্মীদের দৈনিক হাজিরা নিয়ন্ত্রণ-সহ এক গুচ্ছ বিধি ফের চালু করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে কী হবে, তা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিভ্রান্ত। সংক্রমণ কমায় ১২ ফেব্রুয়ারি স্কুলগুলিতে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের সশরীরে ক্লাস চালু হয়েছিল। তার পরে করোনার দাপট আবার ভয়াবহ ভাবে বাড়লেও স্কুল বন্ধ রাখার কোনও নির্দেশিকা দেয়নি রাজ্যের শিক্ষা দফতর। তাই স্কুল বন্ধ করা যাবে কি না বা শিক্ষক ও পড়ুয়াদের হাজিরা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না, বেশির ভাগ স্কুল-কর্তৃপক্ষ সেই বিষয়ে অন্ধকারে। এই অবস্থায় স্কুলে এলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রবল।
বিভিন্ন স্কুল সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পরিস্থিতি সব থেকে বেশি ঘোরালো উত্তর ২৪ পরগনায়। বারাসতে মেয়েদের একটি স্কুলে এক সঙ্গে চার জন শিক্ষিকা আক্রান্ত। কিন্তু জেলা স্কুল পরিদর্শকের কোনও নির্দেশ না-মেলায় স্কুল বন্ধ করা হবে কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।
একটি সরকারি সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্রসচিবের নির্দেশিকা সব সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রেই জারি করা হয়েছে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী স্কুল-কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘স্কুল বন্ধের কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী স্কুলগুলি নিজেরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং আমাদের জানাতে পারে। পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যকেই সব থেকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে।’’ পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী স্কুলগুলিকে সিদ্ধান্ত নিতে বলছেন। আমরা চাই, শিক্ষা দফতরই স্কুল বন্ধের নির্দেশিকা জারি করুক। নইলে কী পরিস্থিতিতে কোন স্কুল কবে কত দিন খোলা থাকবে এবং কোন স্কুল বন্ধ থাকবে, তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ বাধবে।’’
প্রশ্ন উঠছে স্যানিটাইজ়েশন বা জীবাণুনাশ নিয়েও। স্কুল-কর্তৃপক্ষ যথাযথ ভাবে জীবাণুমুক্তির কাজ করাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে শিক্ষকদের একাংশ সন্দিহান। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘‘বিশেষত গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে স্যানিটাইজ়েশনের কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব পড়েছে গ্রামাঞ্চলেও। অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন। স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমশই কমছে।’’ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, যে-সব স্কুলে ভোটকেন্দ্র এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর শিবির হয়েছে, ভোটের শেষে সেই সব প্রতিষ্ঠানে যথাযথ স্যানিটাইজ়েশন দরকার। সেটাও ঠিকমতো হচ্ছে না। হাওড়ার মৌড়িগ্রামের একটি স্কুলের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘এখানে ভোট হয়েছে ১০ এপ্রিল। স্কুল খুলেছে ১৩ তারিখে। অথচ ভোটের জন্য যে-সব চেয়ার-টেবিল সরানো হয়েছিল, সেগুলি ডাঁই করে রাখা হয়েছিল ১৭ তারিখ পর্যন্ত। সে-ভাবে জীবাণুনাশও করা যায়নি।’’
কোভিড পরিস্থিতিতে স্কুল পরিচালনায় কিছু নতুন নিয়মের দাবি তুলে শিক্ষা দফতরের দারস্থ হয়েছে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি।
ওই সংগঠনের সভাপতি গৌতমকুমার মহান্তি ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্রের বক্তব্য, দ্রুত শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও শিক্ষার্থীর জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা, সরকারি অফিসের মতো স্কুলেও দৈনিক ৫০% শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উপস্থিতির নিয়ম চালু করা দরকার। করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের ১৫ দিনের ‘কোয়রান্টিন লিভ’, পড়ুয়া-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর করোনা পরীক্ষার প্রস্তাবও দিয়েছেন তাঁরা। ‘‘কয়েক জন পড়ুয়া ও শিক্ষকের করোনা হওয়ায় কিছু স্কুল নিজেরা সাময়িক ভাবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্কুলশিক্ষা দফতর পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে স্কুল বন্ধ রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি,’’ বলেন স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy