প্রতীকী ছবি।
প্রায় প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে কোভিডে মৃত্যুর সারি। অথচ হাসপাতালে বেড, অক্সিজেন বাড়ন্ত। পর্যাপ্তের ধারেকাছে নেই প্রতিষেধকও। এই অবস্থায় কোভিড ব্যবস্থাপনা আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে নির্দেশ দিল রাজ্য।
কিন্তু প্রথম দফার সংক্রমণের কামড় কমার পরে বেশ কিছুটা শিথিল হয়ে যাওয়া সেই ব্যবস্থাপনা দ্রুত আগের জায়গায় ফেরাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরকে। সোমবার দফায় দফায় বৈঠক করেছেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশাসনের অন্য কর্তারা। বৈঠক হয়েছে কলকাতা ও শহরতলির প্রধান বেসরকারি হাসপাতালগুলির কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। স্বাস্থ্য-কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, শয্যার সংখ্যা বাড়ানো এবং প্রত্যেক রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করাই চ্যালেঞ্জ।
সোমবার রাজ্যে নতুন করে ৮,৪২৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। রবিবার তা ছিল ৮,৪১৯ জন। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘এক দিন এই কম বৃদ্ধির হারে আত্মতুষ্টির
জায়গা নেই। আচমকা দেখবেন, দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।’’
এ দিন শীর্ষ আমলাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে পূর্ব ভারতে বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভয়ঙ্কর। তাই আরও বেশি করে আমাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এ বার সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা বেশি। তাই ক্রিটিক্যাল কেয়ার শয্যা বাড়ানোর বিষয়েও কথা হয়েছে।’’ তিনি জানান, যে হারে প্রতিদিন সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-শয্যা বাড়াতে লবি, পার্কিংয়ের জায়গাকেও করোনা চিকিৎসার জন্য ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতিষেধক কেন্দ্রগুলি হাসপাতাল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়ে কোভিড-শয্যা বাড়ানো যায় কি না, তাও উঠে এসেছে বৈঠকে।
এ ছাড়া, অতি জরুরি নয়, এমন অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসা কিছু দিনের জন্য স্থগিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হোটেলগুলির শয্যাকে দ্রুত কোভিড-বেডে রূপান্তরিত করার বিষয়টিও বৈঠকে উঠেছে। রূপকের আশঙ্কা, ‘‘চাহিদার তুলনায় শয্যা কম। যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে শয্যার অভাবে স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জোগাড়।’’
রাজ্য জুড়ে প্রতিদিন শয্যা পাওয়া নিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে রোগীর পরিজনদের। এই পরিস্থিতিতে মেডিক্যাল কলেজ এবং রাজ্যের সমস্ত স্টেট জেনারেল হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ড খোলার আবেদন জানানোর পাশাপাশি মুখ্যসচিবকে দেওয়া চিঠিতে ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর দাবি, বেসরকারি হাসপাতালের ৫০ শতাংশ শয্যা কোভিড চিকিৎসায় ব্যবহার হোক। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা ২০ জন চিকিৎসক মিলে টেলি-মেডিসিন পরিষেবা চালু করছি।’’ সমস্ত মহকুমা এবং তার উপরের স্তরের সরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার দাবি তুলেছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-ও।
সংগঠনের তরফে কৌশিক লাহিড়ি জানান, মাস্ক না-পরলে শাস্তি, অক্সিজেনের অভাবে কারও মৃত্যু না-হওয়ার নিশ্চয়তা, দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা চালুর জন্য আরটিপিসিআরের পাশাপাশি সমস্ত চিকিৎসা কেন্দ্রে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার দাবি তোলা হয়েছে। যদিও সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে কোভিড ওয়ার্ড চালুর পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই করেছে রাজ্য সরকার। বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ শতাংশ শয্যা বাড়ানো নিয়ে সম্প্রতি বৈঠক করেছে স্বাস্থ্য কমিশন। সেখানে ২৫টি করে শয্যা স্বাস্থ্য দফতরের হাতে থাকবে।
নিভৃতবাসে থাকা করোনা রোগীদের টেলি-মেডিসিন পরিষেবা দিতে টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে রাজ্য। তাতে খামতি না-রাখার লক্ষ্যে এ দিন এসএসকেএমে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্য-কর্তা এবং হাসপাতালের আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর, বৈঠকে স্থির হয়েছে, আগের মতো এ বারও এসএসকেএমেই থাকবে ওই টেলিমেডিসিন ব্যবস্থা। তিনটি শিফটে এত দিন সেখানে ১৮ জন করে চিকিৎসক থাকতেন। এ বার প্রথম দু’টি শিফটে ৩৬ জন করে থাকবেন। রাতে থাকবেন ১৪ জন। প্রতি শিফটে ৬ জন ভিডিয়ো কনফারেন্সে চিকিৎসা করবেন।
সকালে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব। দৈনিক ট্রেন ও যাত্রীর সংখ্যা, কোন স্টেশনে কেমন ভিড় ইত্যাদি সম্পর্কে রেলের কাছে তথ্য চেয়েছেন রাজ্যের আধিকারিকেরা। রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দিনে ১২০০-র বেশি লোকাল ট্রেন হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে চলছে। করোনার আগে দিনে গড়ে প্রায় ৩৪ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করতেন। এখন করছেন ২৬-২৯ লক্ষ। রাজ্যে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিকের ফিরে আাসার সম্ভাবনা কেমন, সে সম্পর্কে রেল রাজ্যের কাছে জানতে চেয়েছে বলে খবর। রাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তেমন পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy