ফাইল চিত্র।
কোভিড সংক্রমণে রাশ টানতে রাজ্য জুড়ে নিয়ন্ত্রণ-বিধির মেয়াদ আরও দু’সপ্তাহ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে সোমবারই। এ বার ওই একই লক্ষ্যে ফের জেলায়-জেলায় ‘কন্টেনমেন্ট জ়োন’ ঘোষণার পদ্ধতিতেই ফিরছে নবান্ন। যদিও একাধিক জেলা সূত্রে খবর, পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা ভাল থাকায় এ বার আর পুরো শহর বা এলাকাকে সম্ভবত কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে না। তার বদলে কন্টেনমেন্ট কিংবা মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে ‘লক্ষ্মণের গণ্ডি’ কাটা হতে পারে সংক্রমণ বেশি থাকা পাড়া, রাস্তা কিংবা কয়েকটি বাড়ির ক্লাস্টারের চার পাশে।
মঙ্গলবার সমস্ত জেলার জন্য এই কন্টেনমেন্ট-বিধি তৈরি করে দিয়েছে নবান্ন। মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর ওই নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে জেলায়-জেলায়। কলকাতা পুরসভাকেও তা কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে সোমবার নিয়ন্ত্রণ-বিধির মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণার সময়ই সমান্তরাল ভাবে জেলা প্রশাসনগুলিকে প্রয়োজন মতো কন্টেনমেন্ট এলাকা চিহ্নিত করে উপযুক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কী ভাবে তা কার্যকর করা হবে, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনার পরেই এই সার্বিক বিধি জারি করা হয়েছে।
ওই বিধি অনুযায়ী, প্রতিদিন সংক্রমণের যে জেলাভিত্তিক তথ্য সরকারি পোর্টালে তোলা হয়, তা থেকে বেশি সংক্রমণের এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে। এই দায়িত্ব জেলা প্রশাসনগুলির। প্রথম দফার কোভিড-যুদ্ধের মতোই সেই এলাকাগুলিকে ‘হট স্পট’ এবং ‘পকেট’ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। প্রয়োজনে ঘোষণা করতে হবে কন্টেনমেন্ট বা মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে। সংক্রমণে রাশ টানতে সেখানে কড়া নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ-বিধি আরোপ করা হবে। কোভিডের সুরক্ষাবিধি যাতে কঠোর ভাবে কার্যকর করা হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে জেলাশাসকদের।
একই সঙ্গে, আগের বারের মতো জোর দেওয়া হচ্ছে ‘টেস্ট, ট্রেস এবং ট্র্যাক’ পদ্ধতি অনুসরণে। অর্থাৎ, যে সমস্ত এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে উপসর্গযুক্ত ও উপসর্গহীন ব্যক্তিদের অনেক বেশি করে কোভিড-পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে জেলা প্রশাসনগুলিকে। সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি বুঝতে নিয়মিত নজরদারি চালাবে তারা। কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময়ে সর্বত্র যেমন করা হত।
কী করতে হবে জেলা প্রশাসনকে
• প্রতিদিনের কোভিড-তথ্য যাচাই করে অতি সংক্রমণের এলাকা চিহ্নিতকরণ
• সেই এলাকাগুলিতে কন্টেনমেন্ট বা মাইক্রো কন্টেনমেন্ট কার্যকর
• নিয়ন্ত্রণবিধির ছাড় সংশ্লিষ্ট এলাকায় কার্যকর হবে না
• জরুরি পরিষেবা কার্যকর থাকবে
• প্রয়োজনে ব্যারিকেড এবং পুলিশ মোতায়েন করে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ
• কোভিড-পরীক্ষা, সংক্রমণের শৃঙ্খল বুঝতে ‘ট্রেসিং’ এবং ‘ট্র্যাকিং’
• সংক্রমণের চরিত্র বুঝতে নিয়মিত নজরদারি
সূত্র: রাজ্য প্রশাসন
জেলা-কর্তারা জানাচ্ছেন, এ জন্য প্রয়োজনে কন্টেনমেন্ট বা মাইক্রো-কন্টেনমেন্ট এলাকাকে ব্যারিকেড করে তা অন্য এলাকার থেকে আলাদা করা হবে। সেখানে ঢোকা-বেরনোয় থাকবে বাড়তি কড়াকড়ি। তবে জরুরি যাতায়াতে কোনও বাধা থাকবে না।
ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জেলা এই বিধি-নিষেধ কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পুলিশ মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে। এক জেলা-কর্তার কথায়, “পুরো শহর বা এলাকাকে কন্টেনমেন্ট জ়োন করা হবে না। (সংক্রমণ বেশি থাকা) পাড়া, রাস্তা বা কয়েকটি বাড়ির ক্লাস্টার ধরে তা করা হবে। জরুরি পরিষেবার বিষয়টি প্রশাসন ও পুলিশ দেখবে। তবে সম্প্রতি রাজ্য সার্বিক নিয়ন্ত্রণবিধিতে যে সমস্ত ছাড় দিয়েছে, তা এই সব এলাকার জন্য প্রযোজ্য হবে না।”
হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘কন্টেনমেন্ট জ়োন চিহ্নিত করার পাশাপাশি ওই সমস্ত এলাকার বাজারে কোভিড-বিধি মানা হচ্ছে কি না, তা দেখা হবে। বেশি ভিড় হলে, প্রয়োজনে বাজার তুলে নিয়ে যাওয়া হবে ফাঁকা জায়গায়।’’
দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা নিম্নমুখী হওয়া সত্ত্বেও কেন এমন সিদ্ধান্ত?
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে দৈনিক নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আরও কমে ৩২৬৮ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তেমনই এক দিনে শুধু উত্তর ২৪ পরগনাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬৫ (রাজ্যে সব থেকে বেশি)। কলকাতায় ৩৭০। পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যথাক্রমে ৩১৩ ও ২৬৫। পশ্চিম মেদিনীপুর ও হাওড়ায় ২২৯ এবং ২১৭। কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, নদিয়া, বাঁকুড়া, হুগলিতেও দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা একশোর উপরে।
সরকারি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা যখন সারা দেশে দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন সামান্যতম ঢিল দেওয়ার কোনও অবকাশ নেই। এই পরিস্থিতিতে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ-বিধি এবং স্থানীয় কন্টেনমেন্ট বিধির জোড়া হাতিয়ার সংক্রমণের হার কমিয়ে আনায় সহায়ক হতে পারে। তাঁদের যুক্তি, অর্থনীতির স্বার্থে সার্বিক ভাবে অফিস-ব্যবসা-বাণিজ্যের মতো ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দেওয়া হলেও, গণ পরিবহণ বন্ধই রাখা হয়েছে। কোনও ধরনের জমায়েতেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ফলে বেশি মাত্রায় লোক সমাগমের সম্ভাবনা তেমন নেই। এর সঙ্গে স্থানীয় স্তরে বেশি সংক্রমণের এলাকাকে চিহ্নিত করে কঠোর নিয়ন্ত্রণবিধি প্রয়োগ করা গেলে গোড়াতেই কোভিড-শৃঙ্খল ভাঙা সম্ভব হবে।
প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, “কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা যখন রয়েছে, তখন আগে থেকে এই পদ্ধতি যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করা গেলে, সংক্রমণ শৃঙ্খল বেশ কিছুটা ভেঙে দেওয়া সম্ভব। নিয়ন্ত্রণ-বিধি পুরোপুরি তুলে দেওয়ার আগে তাই এটি খুব জরুরি পদক্ষেপ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy