মাস্ক না পরায় আটক এক ব্যক্তি। ছবি পিটিআই।
‘খেলা হবে!’
ভোট-ময়দানে বহুলচর্চিত এই দু’টি শব্দ। রাজনৈতিক বিষয়ের বাইরে গিয়ে, ওই শব্দবন্ধের সূত্র ধরেই চিকিৎসক থেকে সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ‘খেলা তো শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে খেলছে করোনা। ফলাফল আরও ভয়ানক হতে চলেছে!’
করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা যে প্রতিদিন বাড়ছে, তা সকলের কাছেই স্পষ্ট। দৈনিক আক্রান্ত তিন থেকে ছ’হাজারের ঘরে পৌঁছতে সময় লাগল মাত্র সাত দিন। গত ৯ এপ্রিল রাজ্যে দৈনিক আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৬৪৮ জন। ১৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার আক্রান্ত হয়েছেন ৬৭৬৯ জন। এ দিন ছিল নববর্ষ। গত বছরের এই দিনে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যাটা ছিল ১৩২ জন। এসএসকেএম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান তথা রাজ্যের কোভিড মনিটরিং দলের এক নোডাল অফিসার চিকিৎসক সৌমিত্র ঘোষ বলেন, ‘‘সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। কারণ, এ ভাবে যদি আক্রান্তের রেখচিত্র উপরের দিকে উঠতে থাকে, তা হলে আগামী ৫-৭ দিনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে।’’
দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা যত বাড়ছে, রাজ্যের প্রতিটি কোভিড হাসপাতালে ততই শয্যা সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বার বার জেলা প্রশাসন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক চলছে। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের সুপার আশিস মান্না জানান, কোভিড প্রোটোকল মেনে রোগী পরিষেবায় যাতে খামতি না-থাকে, তার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের তরফে যথেষ্ট সহযোগিতা করা হচ্ছে। গত তিন দিনে ওই হাসপাতালে কোনও করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঘটেনি। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিয়ে ১০০-র বেশি শয্যা বিশিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে আজ, শুক্রবার বৈঠক করবে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। আজ আরও কয়েক লক্ষ ডোজ় প্রতিষেধকও আসার কথা।
তবে মৃত্যুহার কম দেখে এখনই নিশ্চিন্তির কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন শহরের এক কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসক। তাঁর কথায়, ‘‘গত বারের থেকে এ বার সঙ্কটজনক রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সবে তো দু’সপ্তাহ হল আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। আর সপ্তাহ পাঁচেক যাক, তার পরেই মৃত্যুর হার টের পাওয়া যাবে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কায় শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজ্য জুড়ে এখন বাজছে ভোটের দামামা। সেই শব্দ ভেদ করে মানুষের কানে কতটা করোনা সচেতনতার প্রচার পৌঁছচ্ছে, তা নিয়েও সংশয়ে আছেন অনেকেই। এক বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, ‘‘ভোটের ময়দানে যে কোনও সভায় বক্তব্য শুরুর আগে রাজনৈতিক নেতারা যদি বলতেন, ‘আপনারা আগে সকলে মাস্ক পড়ুন, তারপরে আমি বক্তৃতা দেব, তা হলে হয়তো আজ এতটা খারাপ দিন দেখতে হত না।’’ যদিও নাগরিকেরা নিজ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না বলেই মত এম আর বাঙুর হাসপাতালের সুপার শিশির নস্করের। তিনি বলছেন, ‘‘প্রাকৃতিক নিয়মে যেমন সূর্যোদয় ও অস্ত যায়, তেমনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটা সময়ে নির্বাচন এসেছে। কিন্তু করোনা বিধি শিথিলের কথা তো কোনও চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ বলেননি। একশ্রেণির মানুষকে যদি মিটিং-মিছিলে যেতেই হয়, তা হলে তিনি মাস্ক পরা, স্যানিটাইজ় করার মতো ন্যূনতম করোনা বিধি কেন মানছেন না?’’
সম্প্রতি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডিসিভিয়ারের জোগানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এ দিন ওই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নিয়ে বৈঠকে বসে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সিদ্ধান্ত হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও ওষুধ সংস্থার মধ্যে সেতু বন্ধনের কাজ করবে স্বাস্থ্য দফতর। যাতে করোনা রোগীর চিকিৎসায় ওষুধ পেতে কোনও সমস্যা না হয় হাসপাতালগুলির। আগামী সপ্তাহ থেকে রেমডিসিভিয়ারের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলেও এ দিন আশ্বাস দিয়েছে ওষুধ প্রস্তুত সংস্থাগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy