Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Corona

রাজ্যে অক্সিজেন ঘাটতির নেপথ্যে রয়েছে ‘অকারণ আতঙ্ক এবং ভ্রান্ত ধারণা’ও

শিল্পমহল সূত্রের খবর, ভারতে এখন দৈনিক ৭৭০০ টন অক্সিজেন উৎপাদন হয়। কিন্তু চাহিদা ১০ হাজার টন। ফলে সেই ঘাটতি সমস্যা বাড়াচ্ছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২১ ০৬:২০
Share: Save:

করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা আগে আঁচ করা যায়নি। তার উপরে নাগরিকদের একাংশের ‘অকারণ আতঙ্ক এবং ভ্রান্ত ধারণা’ও রাজ্য জুড়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার ঘাটতির নেপথ্যে অন্যতম কারণ বলে দাবি চিকিৎসক এবং সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের। তাঁরা সকলেই বলছেন, রাজ্যে যে পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন হয়, তা এই মুহূর্তে চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।

কিন্তু তার পরেও আকাল কেন? ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটার দাবি, ‘‘নাগরিকদের একাংশ আতঙ্কে, অপ্রয়োজনীয় ভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে ঘরে রেখে দিচ্ছেন। ফলে সেগুলি রিফিলের সুযোগ মিলছে না। কোনও হাসপাতালে সিলিন্ডার থাকলে ফের অক্সিজেন ভরার সুযোগ থাকত।’’ তবে মানুষের আতঙ্ক কাটানোর দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের বলেই দাবি মানসবাবুর।

শিল্পমহল সূত্রের খবর, ভারতে এখন দৈনিক ৭৭০০ টন অক্সিজেন উৎপাদন হয়। কিন্তু চাহিদা ১০ হাজার টন। ফলে সেই ঘাটতি সমস্যা বাড়াচ্ছে। কিন্তু বঙ্গে বিভিন্ন সংস্থার মোট দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ৪৭০ টন। এখনও পর্যন্ত চাহিদা ২৭০ টন। গত সপ্তাহে তা ছিল ১৫০ টন। তখনই স্বাস্থ্য দফতর ওই উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির মধ্যে বৈঠকে চাহিদা ৩০০ টনে পৌঁছনোর সম্ভাবনা ও তার প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।

উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি নিজেরাও সরাসরি হাসপাতালের মতো কিছু বড় ক্রেতাকে অক্সিজেন বিক্রি করে। আবার ডিলারদেরও বিক্রি করে। ডিলারেরাও হাসপাতাল, নার্সিংহোম, ওষুধের দোকান, অ্যাম্বুল্যান্স সংস্থা, বা অনুমোদিত অক্সিজেন জোগানের ব্যবসায় যুক্তদের তা বিক্রি করেন। তাঁরা হয় ডিলারদের কাছে থেকেই সিলিন্ডার কেনেন বা সিলিন্ডার নিয়ে এসে ডিলারদের কাছ থেকে গ্যাস ভরে নিয়ে যান। সূত্র বলছে, কলকাতায় হাসপাতাল ও বাড়িতে অসুস্থ মিলিয়ে দৈনিক ৭-৮ হাজার ছোট-বড় সিলিন্ডারের প্রয়োজন পড়ে। গোটা রাজ্য ধরলে তা কমপক্ষে তিন গুণ বেশি হবে। সেই সিলিন্ডারের চাহিদা ও জোগানে অল্প কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। তবে তা ‘মারাত্মক’ নয় বলেই সংস্থাগুলির দাবি।

তা-ও সঙ্কট বাড়ছে, কারণ, পরিস্থিতি আগাম আঁচ করা এবং সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করায় সংশ্লিষ্ট প্রায় সব পক্ষেরই ঘাটতি ছিল। ফলে ডিলারেরাও বাড়তি সিলিন্ডারের বরাত দেননি। উপরন্তু, আতঙ্কে বাড়িতে বা কিছু হাসপাতালেও সিলিন্ডার মজুত করার প্রবণতায় সিলিন্ডার যে ভাবে হাত ঘোরে, তা-ও আটকে গিয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে সিলিন্ডার তৈরি হয় না। মূলত উত্তর ভারত থেকেই আনেন এখানকার ডিলারেরা। সম্প্রতি বাড়তি সিলিন্ডারের বরাত দেওয়া হলেও স্বাভাবিক ভাবেই তা সহজে মিলছে না।

পাশাপাশি এমন ক্ষেত্রে যে বাড়তি পুঁজির দরকার হয়, তাতে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। কিছু বড় উৎপাদক সংস্থা যেমন একই সঙ্গে লিকুইড ট্যাঙ্ক, সিলিন্ডার, সিলিন্ডার জোগানের গাড়ি, সব ক্ষেত্রেই একসঙ্গে লগ্নি করে, অনেক সংস্থা বা ডিলারেরা সেই হারে টাকা ঢালেন না। এখন হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় সেই হারে বাড়তি পরিকাঠামোয় পুঁজির জোগানে তাই টান পড়ছে কোথাও কোথাও।

কলকাতার এক ডিলার শ্রীদাম চৌধুরীর দাবি, তাঁদের ক্রেতা হাসপাতাল-নার্সিংহোমের দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ ছাড়া অন্য অনেকেই চাহিদার নামে দরকার না থাকলেও সুযোগ নিচ্ছে বা সিলিন্ডার মজুত করে রাখছেন। দুইয়ে মিলে জোগানের সমস্যা হচ্ছে। তাই খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রে (যেমন অ্যাম্বুল্যান্স ইত্যাদি) সঠিক নথি না দেখালে অক্সিজেনের জোগান দেওয়া হবে না বলে ক্রেতাদের তাঁরা জানিয়েছেন। কিন্তু সিলিন্ডারের বরাত আগে কেন দেওয়া হয়নি? তাঁদের তরফে যে সংস্থা সিলিন্ডার কেনে, তারা মাসখানেক আগেই গুজরাতে বরাত দিয়েছিল বলে দাবি শ্রীদামের। তবে সেই বরাতও যে প্রায় শিয়রে সমন অবস্থায় দেওয়া হয়েছে তা স্পষ্ট ওই ডিলারের কথাতেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Oxygen Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE