প্রতীকী ছবি।
জয়নগরের করোনা সন্দেহভাজন যুবকের মৃত্যুর ৭২ ঘণ্টা পরেও ‘রেফার রোগ’ সারাতে পারল না রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। সোমবার টাইফয়েডে আক্রান্ত ওই যুবককে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। সে দিনই স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ পুরোপুরি কোভিড হাসপাতাল। করোনা সন্দেহভাজনদের সেখানে পাঠানোর কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে সেই কাজ বন্ধ হয়নি। ফলে বন্ধ হয়নি রোগী ও তাঁর পরিজনদের হয়রানিও। মঙ্গলবার গভীর রাতে সেই হয়রানির শিকার হয়েই এখন হাওড়া স্টেট জেনারেল মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ৫৪ বছরের এক প্রৌঢ়।
হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের বাসিন্দা দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘদিন কিডনির অসুখে আক্রান্ত। তাঁর স্ত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডায়ালিসিস শেষে দেবাশিসবাবু চেষ্টা করেও আর উঠতে পারছিলেন না। ডানকুনির একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সিটি স্ক্যান করানোর পরে রোগী ‘সেরিব্রাল স্ট্রোকে’ আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে পৌঁছনোর পরে প্রৌঢ়ের বুকের এক্স-রে করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা। এক্স-রে প্লেট দেখে চিকিৎসকেরা জানান, রোগীর বুকে জল জমেছে। এর পরই কোভিড সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ বা এম আর বাঙুরে নিয়ে যাওয়ার কথা লিখে দেওয়া হয়।
কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই বলেছেন, ওই দুই হাসপাতালে শুধু কোভিড পজ়িটিভ রোগীদেরই ভর্তি করানো যাবে। ফলে মঙ্গলবার রাত ১টা নাগাদ দেবাশিসবাবুকে নিয়ে তাঁর পরিজনেরা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে পৌঁছলে তাঁদের স্বাস্থ্য দফতরের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়। অর্পিতা জানান, মেডিক্যালে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার সময় একাধিক সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে তাঁরা যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কোথাও বেড না-পেয়ে শেষে হাওড়া জেলা হাসপাতালে স্বামীকে ভর্তি করেন তিনি। রোগী প্রত্যাখ্যান প্রসঙ্গে মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে কোনও বেড ছিল না।
বুধবার অর্পিতা বলেন, ‘‘স্বামীকে আইসিইউয়ে রাখা প্রয়োজন। কিন্তু কোভিড পরীক্ষা না-হওয়ায় তা-ও দেওয়া যাচ্ছে না।’’ তাঁদের পারিবারিক বন্ধু জিষ্ণু বসু বলেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজে যদি শুধু পজ়িটিভ রোগীদেরই ভর্তি করা যাবে, তা হলে সেখানে রেফার করা হল কেন? কারও মধ্যে তো সমন্বয়ই নেই!’’
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রসঙ্গে এসএসকেএমের উপাধ্যক্ষ তথা সুপার রঘুনাথ মিশ্র জানান, আগে সারি (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন) রোগীদের মেডিক্যাল কলেজ বা বাঙুরে পাঠানোর নিয়ম ছিল। এখন এ ধরনের রোগীদের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস বা আরজিকরে পাঠানোর কথা। তাঁর কথায়, ‘‘ওই রোগীকে মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো ঠিক হয়নি। আগের অভ্যাস মতো চিকিৎসকদের একাংশ এটা করে ফেলছেন। প্রোটোকলের অন্যথা যাতে না হয় তা চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
এ দিনই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বক্ষ বিভাগে ৮০টি, চর্মরোগ বিভাগে ১৮ এবং অস্থি বিভাগের (মহিলা) ১২টি মিলিয়ে মোট ১১০ শয্যার কোভিড ওয়ার্ড তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে চারটি আরসিইউ (রেসপিরেটরি কেয়ার ইউনিট)-সহ শতাধিক শয্যার ওয়ার্ড চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy