ছবি পিটিআই।
সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে সম্ভাবনাটা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের একাংশের আশঙ্কাই সত্যি হল। এ রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত মণিপুরের বাসিন্দা ১৮৫ জন নার্স ইতিমধ্যে বাড়ি চলে গিয়েছেন। শহরের বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্দরের খবর, ত্রিপুরা এবং ওড়িশার নার্সরাও একই পথে হাঁটতে চলেছেন। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলির বক্তব্য, অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান না-করলে সব ধরনের রোগীদেরই পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে।
আমরি গ্রুপের সিইও তথা অ্যাসোসিয়েশন অব হসপিটালস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া জানিয়েছেন, তাঁরা এ বিষয়ে আজ, শনিবারই সরকারকে চিঠি দেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের আশঙ্কা, এর পরে অন্য রাজ্যের বাসিন্দা নার্সেরাও একই পথ অনুসরণ করতে পারেন। তার ফল হবে মারাত্মক।’’ প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক এ দিন বলেন, ‘‘এ বিষয়ে লিখিত ভাবে জানানো হলে আমরা খতিয়ে দেখব। বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের সাহায্য নিয়ে কী ভাবে এর মোকাবিলা করা যায়, সরকার সেটা দেখবে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে সরাসরি জড়িত কর্মীরা আদৌ চলে যেতে পারেন কি না, সেটাও দেখা দরকার।’’
একের পর এক নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে অনুমান করছিলেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের একাংশ। তাঁদের পর্যবেক্ষণ ছিল, যাবতীয় সাবধানতা অবলম্বন করেও নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ রাজ্যে বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নার্সদের একটি বড় অংশ ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। কলকাতায় করোনা-সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় তাঁদের পরিজনেরা সন্তানের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি, কোনও হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা ধরা পড়েছে জানার পরে সমাজের একাংশের কাছে যে দুর্ব্যবহার তাঁরা পেয়েছেন, তাতেও অভিভাবকদের উদ্বেগ বেড়েছে।
এ রাজ্যে কর্মরত ইচ্ছুক নার্সদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য সম্প্রতি ‘ট্রানজ়িট পাস’ ইস্যু করে মণিপুরের স্বরাষ্ট্র দফতর। যা নিয়ে মঙ্গলবার ১৮৫ জন নার্স মণিপুর সরকারের তত্ত্বাবধানে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। সেই তালিকায় চার্নকের ২৭, পিয়ারলেসের ২৫, ফর্টিসের ১৬, অ্যাপোলো গ্লেনেগলসের ১০, আর এন টেগোরের ৯, মেডিকার ৩, আইআরআইএসের ৬ এবং আমরির ৮ জন-সহ শহরের বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের নাম রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সকলে যে পদত্যাগপত্র দিয়ে গিয়েছেন, তা নয়।
কলকাতায় অন্তত ১৮টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের হেলথ কেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান প্রশান্ত শর্মা জানান, বেসরকারি হাসপাতালগুলির ১৫ শতাংশ নার্স উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দা। ৩০-৪০ শতাংশ দক্ষিণ ভারতের কেরল-কর্নাটক থেকে কাজ করতে আসেন। ওড়িশা থেকেও এখন অনেকে এ রাজ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে সেবিকা হিসেবে কর্মরত।
চার্নকের জেনারেল ম্যানেজার ঈপ্সিতা কুণ্ডু জানান, মণিপুরের পাশাপাশি তাঁদের হাসপাতাল থেকে ত্রিপুরার বাসিন্দা ১৩ জন নার্স কলকাতা ছাড়ছেন। পিয়ারলেসের সিইও সুদীপ্ত মিত্র জানান, তাঁদের হাসপাতালে ওড়িশার বাসিন্দা ২০ জন নার্স রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা নার্সরাই শহরের বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবা ধরে রেখেছেন। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত ৩০০ জন নার্স মণিপুরের বাসিন্দা। ওড়িশা-ত্রিপুরা ধরলে সংখ্যাটা দ্বিগুণ।’’
এ রাজ্যের বাসিন্দা নার্সদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত। বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষদের বক্তব্য, করোনার চিকিৎসার পরিষেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হচ্ছেন। নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশকে কোয়রান্টিনে পাঠিয়ে বাকিদের দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ভিন্ রাজ্যের নার্সরা চলে গেলে পরিষেবা চালু রাখাই মুশকিল হবে।
পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, তা মানছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাব্যক্তিরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy