Advertisement
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

বঙ্গে ‘সুপার স্প্রেডারের’ খেলায় সংক্রমণ বাড়ছে

চরিত্রগত বদলের জেরে এই স্ট্রেনটি হয়ে উঠেছে ‘সুপার স্প্রেডার’। প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৯১০ জন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র। শুক্রবার। ছবি: বিনোদ দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২৬
Share: Save:

কাশি, দুর্বলতা, সঙ্গে তীব্র শ্বাসকষ্ট। অক্সিজেনের মাত্রা নেমে গিয়েছে ৮৫ শতাংশে। তড়িঘড়ি রোগীর আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হলেও রিপোর্ট নেগেটিভ। তা হলে কি করোনা হয়নি!

সন্দেহ হল চিকিৎসকের। সিটি স্ক্যান করা হল রোগীর বুকের। দেখা গেল, দু’টি ফুসফুসই পুরো সাদা। ব্রঙ্কোস্কোপি করতেই রিপোর্ট এল, কোভিড পজ়িটিভ। চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এ বার রাজ্যে খেল দেখাচ্ছে দেশি ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ স্ট্রেন। যার অস্তিত্ব ভারতে আগেই ধরা পড়েছে। যার কারণে ওই রোগীর নাক-গলার ‘সোয়াব’ পরীক্ষা করেও রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

শুধু তাই নয়, চরিত্রগত বদলের জেরে এই স্ট্রেনটি হয়ে উঠেছে ‘সুপার স্প্রেডার’। প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৯১০ জন। এবং যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের অনেকের শরীরে এই ‘ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেনে’র হদিস মিলছে। তা উল্লেখ করে এক সংক্রমণ বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা, এই ‘সুপার স্প্রেডার’ স্ট্রেনের কারণে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার থেকে ছয় হাজারের ঘরে পৌঁছতে মাত্র সাত দিন সময় লেগেছে। ভবিষ্যতে সংক্রমণ ছড়ানোর হারও আরও বাড়বে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানাচ্ছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসটির অনেকগুলি মিউটেশন হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। কোনওটি ব্রিটেন স্ট্রেন, কোনওটি দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেন বলে পরিচিত। ভারতেও ভাইরাসটির বার বার মিউটেশন হয়েছে এবং তা নতুন স্ট্রেনে পরিণত হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের ডাবল মিউট্যান্ট স্ট্রেনটিতে দেখা যাচ্ছে, স্পাইক প্রোটিনে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মিউটেশনে ভাইরাসটিতে চরিত্রগত বদল এসেছে। সেই কারণে ভাইরাসটি আগের তুলনায় দ্রুত ছড়াচ্ছে। তা হয়ে উঠেছে সুপার স্প্রেডার। নতুন স্ট্রেনে অনেক নতুন উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। নাক-গলার বদলে সরাসরি ফুসফুসে হানা দিচ্ছে ভাইরাস। তাই আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় নেগেটিভ আসছে। একই কারণে বাচ্চাদের মধ্যেও রোগের প্রকোপ বাড়ছে।’’

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি (আইআইসিবি)-র ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, করোনাভাইরাসের় স্পাইক জিনে ‘ডাবল মিউটেশনের’ ফলে প্রোটিনের দু’টি জায়গায় পরিবর্তন হয়েছে। তার ফলে পুরনো ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছিল, তার এই পরিবর্তিত স্পাইক প্রোটিনটিকে চিনতে অসুবিধা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের আরও কিছু চরিত্রগত পরিবর্তনের ফলে ভাইরাসটির সংক্রমণের গতি বেড়ে গিয়েছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে পুরনো অ্যান্টিবডি কাজ না করার সম্ভাবনা।’’

দ্রুত সংক্রমণের এই আবহে সরকারি ও বেসরকারি উভয় স্তরের হাসপাতালেই কোভিড শয্যা বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে সরকার। স্বাস্থ্য দফতর এ দিন নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের নিউ ক্যাজ়ুয়াল্টি বিল্ডিংয়ে ২০টি সিসিইউ, ২৫টি এইচডিইউ সহ মোট ২১০ শয্যার কোভিড চিকিৎসা চালু হবে। এ ছাড়াও, আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে ১১৬ শয্যা ও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭০টি শয্যা নিয়ে করোনা রোগীর চিকিৎসা করা হবে।

এ দিন বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসে রাজ্য স্বাস্থ্য কমিশন। চেয়ারম্যান অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মূলত অনুরোধ করা হয়েছে প্রতিটি হাসপাতালে গত বারে যে সংখ্যক কোভিড শয্যা ছিল, তার থেকে অন্তত ২৫-৩০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য। এ ছাড়া, আগামী দু’সপ্তাহ পূর্ব নির্ধারিত অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কমিশন এ দিন জানিয়ে দিয়েছে, চিকিৎসা খরচ নিয়ে গত বারের মতো অভিযোগ যেন না আসে। অসীমবাবু বলেন, ‘‘এক জন রোগীও যাতে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে না যান। প্রত্যাখ্যান
চলবে না। হাসপাতালে শয্যা না থাকলে রোগীকে ন্যূনতম চিকিৎসা দিয়ে অন্য জায়গায় ব্যবস্থা করে দেওয়ার দায়িত্ব থাকবে ওই হাসপাতালেরই।’’

তবে এ দিন প্রতিষেধকের অভাবে দার্জিলিংয়ে অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়। যেখানে প্রতি দিন ৮-১০ হাজার জন প্রতিষেধক নেন সেখানে মাত্র ৩৩৫৮ জন প্রতিষেধক পেয়েছেন। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও প্রতিষেধক না পেয়ে খড়্গপুরের ৬টি পুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ক্ষোভ ছড়ায়। বিক্ষোভও হয়। এ দিন বিকেলে রাজ্যে আরও ৬ লক্ষ ডোজ় কোভিশিল্ড প্রতিষেধক এসেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Coronavirus in West Bengal coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE