বাইরের ট্রাক ঢোকা আটকাতে চুঁচুড়ার চকবাজার আড়ত বাঁশ দিয়ে ঘেরার তোড়জোড়। ছবি: তাপস ঘোষ
গোটা পূর্ব মেদিনীপুরকে ‘হটস্পট’ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু ফের সেখান থেকে মাছের গাড়ি আসা শুরু হয়েছে হুগলির বিভিন্ন আড়তে। চালক-খালাসিদের থেকে সংক্রমণের ভয় পাচ্ছেন ক্রেতারা। শুরু হয়েছে বিশৃঙ্খলা। তাই আড়ত বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন ব্যবসায়ীরা। পরিবর্তে স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে মাছ নিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে ব্যবসা চালানোর পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা।
জেলার সবচেয়ে বড় দু’টি আড়তের একটি রয়েছে চুঁচুড়ার চকবাজারে। সেখানকার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, লকডাউনের নিয়মকানুন মানার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কোনও সাহায্য মিলছে না। আগামী সোমবার থেকে আড়ত বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই ব্যবসায়ীরা। ‘চকবাজার মৎস্য আড়তদার সমিতি’র সম্পাদক বিশ্বনাথ বিশ্বাস জানান, জেলার একমাত্র এখান থেকেই নিলামে মাছ বিক্রি হয়। বিভিন্ন জেলা এবং ভিন্ রাজ্যের মাছের গাড়ি আসে। সেই সব জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা স্ব-ইচ্ছায় আসেন। আড়তে ফের ভিড় হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না থেকে মাছের গাড়ি আসছে।
বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘আড়তে যা ভিড় হচ্ছে, তাতে শারীরিক দূরত্ব থাকছে না। পুলিশ প্রশাসনকে বলেও সুরাহা না-হওয়ায় আগামী সোমবার থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আড়ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।” পুরশুড়ার আড়তেও সমস্যা হয়েছে। ময়না থেকে গাড়ি ঢোকাই যে প্রধান সমস্যা, তা মানছেন অন্য আড়তদাররাও। আরামবাগের আড়তদারদের পক্ষে সন্তু পাকিরার অভিযোগ, “পূর্ব মেদিনীপুর হটস্পট। ওটাই ভয়ের ব্যাপার। ময়না থেকে গাড়ি নিয়ে চালক-খালাসিরা আসছেন। কী জানি কী হয়! এলাকার ক্রেতারাও চাইছেন স্থানীয় চাষিরাই খালি মাছ নিয়ে আসুন।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, চকবাজারের আড়তদারদের ওই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে স্থানীয় প্রশাসন এবং জেলা মৎস্য দফতর হস্তক্ষেপ করে। একেবারেই বন্ধ না করে স্থানীয় চাষিদের কাছে মাছ নিয়ে আড়ত সক্রিয় রাখতে বলা হয়। জেলা মৎস্য আধিকারিক চিন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “পূর্ব মেদিনীপুরের ময়না থেকে মাছের গাড়ি ঢোকায় লোকজন সংক্রমণের আতঙ্কিত হয়ে কিছু আড়ত বন্ধ করতে চাইছেন। চকবাজার এবং পুরশুড়া আড়তে সমস্যা হয়েছে। আমি কথা বলেছি। বিষয়টা স্থানীয় প্রশাসনেরও নজরে আনা হয়েছে।”
পরিবহণ সমস্যার কারণে লকডাউনের প্রথম পর্বে বিভিন্ন জেলা এবং বাইরের রাজ্য থেকে মাছ সরবরাহ বন্ধ হয়েছিল। জেলার উৎপাদিত মাছই বাজার সামলাচ্ছিল। কিন্তু ফের ক’দিন ধরে বাইরের মাছ আসা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ময়না থেকে বহু গাড়ি ঢুকছে। জেলা মৎস্য দফতর সূত্রে জানা যায়, হুগলিতে প্রায় ৩১টি আড়ত আছে। চকবাজার ছাড়া অন্য বড় আড়তটি রয়েছে শ্রীরামপুরে। বছরভর দুই আড়তে প্রতিদিন গড়ে ভিন্ রাজ্য এবং ভিন্ জেলা থেকে প্রায় ২৫০ কুইন্টাল থেকে ৩০০ কুইন্টাল মাছ আসে।
হাওড়ার মাছের আড়ত অবশ্য আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার জেরে জেলায় পুকুরের মাছের চাহিদা বেড়েছে। মৎস্যজীবীরা জানান, প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় বাজারে মাছ বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ভিড় বাড়ছিল। সকাল ৯টা বাজলেই অনেক জায়গায় পুলিশ বাজার বন্ধও করে দিচ্ছিল। ফলে, সেখানেও বিক্রি ভাল জমছিল না। সমস্যার সমাধানে হাওড়ার মৎস্য সমবায়ের উদ্যোগে পাড়ায় পাড়ায় মাছ বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে সুবিধা হচ্ছে গৃহস্থেরও। মৎস্যজীবীরা মাস্ক পরে টাটকা মাছ নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন।
‘রাসমণি ফিশারমেন্স সমবায়’-এর কর্তা বিশ্বনাথ মান্না বলেন, ‘‘পুকুরের মাছ পেয়ে খুশি হচ্ছেন মানুষ। তাঁরা এখন মানছেন, পুকুর বোজানো হলে কী ক্ষতি হয়। পুকুরের মাছ চুরি বা নষ্ট করা হলে পুলিশ যদি শাস্তির ব্যবস্থা করে, তা হলে মৎস্যজীবীদের একটা বড় সমস্যার সুরাহা হয়।’’
তথ্য সহায়তা: তাপস ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy