Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
জরুরি পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিপাকে
Coronavirus in West Bengal

করোনা নিয়ে রটনার জেরে একঘরে স্বাস্থ্যকর্মী

প্রসঙ্গত, করোনা-যোদ্ধাদের উপরে হামলা এবং কাজে বাধাদান নিয়ে বুধবারই অধ্যাদেশ জারি করেছে কেন্দ্র।

সামাজিক হেনস্থার শিকার এই হাসপাতালের কর্মীই। —নিজস্ব িচত্র

সামাজিক হেনস্থার শিকার এই হাসপাতালের কর্মীই। —নিজস্ব িচত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫৮
Share: Save:

ফের করোনা নিয়ে গুজবের জেরে একটি পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ উঠল। এ বার ব্যারাকপুরে। সম্প্রতি রানাঘাটের বাসিন্দা, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের এক মহিলা কর্মীকে পাড়ায় একঘরে করার অভিযোগ উঠেছিল বাসিন্দাদের একাংশের বিরুদ্ধে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, ওই মহিলা যে হেতু আইডি-তে কাজ করেন, তাঁর থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। শেষে বিষয়টিতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এ বার খাস ব্যারাকপুরে এমন ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পরিবারটি। অভিযোগ, তাদের বাড়ির এক সদস্য করোনা পজ়িটিভ, এই মর্মে গুজব ছড়ানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে, ওই ব্যক্তি ব্যারাকপুরেরই একটি সরকারি হাসপাতালের কর্মী।

প্রসঙ্গত, করোনা-যোদ্ধাদের উপরে হামলা এবং কাজে বাধাদান নিয়ে বুধবারই অধ্যাদেশ জারি করেছে কেন্দ্র। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে বাধা দেওয়া হলে ওয়ারেন্ট ছাড়াই অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে বলে তাতে বলা হয়েছে। তার পরেও এমন ঘটনায় বিপাকে ওই পরিবারের সদস্যেরা।

এই গুজব-কাণ্ডে অভিযোগ উঠেছে এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। পুলিশ মৌখিক আশ্বাস দিলেও লিখিত অভিযোগ নেয়নি থানা। এ দিকে, গুজবের জেরে পাড়ার
কোনও দোকান ওই পরিবারকে জিনিসপত্র বিক্রি করছে না। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন অভিযুক্ত কাউন্সিলর দেবাশিস দে। ব্যারাকপুরের ডিসি (সেন্ট্রাল) আমনদীপ জানান, তিনি অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন।

আরও পড়ুন: কাজ নেই, বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন নৌ-শিল্পীরা

ব্যারাকপুরের মণিরামপুর এলাকার বাসিন্দা গৌতম চক্রবর্তী বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালের কর্মী। দিন তিনেক আগে ওই হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসকের করোনা ধরা পড়ে। তার পরেই কোয়রান্টিনে পাঠানো হয় ১০ চিকিৎসক-সহ মোট ৭০ জনকে। তবে বাকিদের কাজে আসতে বলা হয়েছে।

গৌতমবাবু জানান, মঙ্গলবার এক পুলিশকর্মীকে নিয়ে দেবাশিসবাবু তাঁদের বাড়ি এসে তাঁকে বেরোতে বারণ করেন। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আমি ডিউটিতে যাওয়ার কথা বললে কাউন্সিলর বলেন, হাসপাতাল সিল করে দেওয়া হয়েছে। আমাকে হোম কোয়রান্টিনে থাকতে হবে। তার পরেই আমি সুপারকে ফোন করে জানতে পারি, হাসপাতাল সিল করা হয়নি।’’

আরও পড়ুন: স্বচ্ছতা রাখতে রেশন দোকানে সিসিক্যামেরা

এর পরেই বৃহস্পতিবার সকালে গৌতমবাবুর পরিবারের তরফে থানায় ফোন করা হয়। দুপুরে আইসি দেবকুমার সাধুখাঁ গৌতমবাবুদের বাড়িতে আসেন। সঙ্গে ছিলেন কাউন্সিলর এবং উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক। ওই স্বাস্থ্য আধিকারিক হাসপাতালের কাগজ দেখে গৌতমবাবুকে জানান, কাজে যোগ দিতে তাঁর অসুবিধা নেই। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিসবাবুকে জিজ্ঞাসা করেন, কেন তিনি আমাকে করোনা-আক্রান্ত বলে রটাচ্ছেন? কাউন্সিলর তখন বলেন, তিনি নন। অন্য কেউ রটিয়েছেন। কিন্তু আমার পরিচিতেরা জানিয়েছেন, আমি করোনা-আক্রান্ত বলে কাউন্সিলরই তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ করেছেন। সব শুনে ওই পুলিশ আধিকারিক আমাকে কাজে যোগ দিতে বলেন।’’

কিন্তু এত কিছুর পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। পাড়ার পরিচিতেরা কথা বলছেন না গৌতমবাবুদের সঙ্গে। তাঁরা সব চেয়ে মুশকিলে পড়ছেন মুদিখানার জিনিস কিনতে গিয়ে। গৌতমবাবুর ছেলে কৌশিক বলেন, ‘‘জিনিস কিনতে তো পারিইনি। উল্টে কেউ জানতে চাইছেন বাবা কোথায় ভর্তি, কেউ আবার জানতে চাইছেন বাবাকে পুলিশ কোয়রান্টিনে পাঠিয়েছে কি না।’’ গৌতমবাবু আরও জানান, থানা থেকে তাঁদের বলা হয়, তাঁরা অভিযোগ জমা নিয়ে রেখে দিচ্ছে। কিছু দিন পরে সেই অভিযোগ দেখা হবে।

হাসপাতালের সুপার সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোনও অসুবিধা যাতে না-হয়, তার জন্য ওই কর্মীকে তাঁর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নথিপত্র তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তার পরেও এমন ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’’ আর দেবাশিসবাবু বলছেন, ‘‘আমি কিছু রটাইনি। ওই পরিবার দোকানে জিনিস কিনতে না-পারলে আমাকে বলুক। টিভির খবরে দেখেছিলাম, ওই হাসপাতাল সিল করে দেওয়া হয়েছে। তাই বলেছিলাম।’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy