সই জাল (চিহ্নিত)। ভুয়ো কোভিড-রিপোর্টও।
বিপুল রোগীর চাপে করোনার আরটিপিসিআর রিপোর্ট পেতে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি সময় লাগছে। এ দিকে, মরিয়া রোগী দ্রুত রিপোর্ট চাইছেন। সেই অসহায়তার সুযোগ নিয়ে খোদ সরকারি মেডিক্যাল কলেজে জাল রিপোর্ট চক্রের রমরমা কারবারের অভিযোগ উঠেছে নদিয়া জেলায়। তোলপাড় শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে।
নদিয়ার একমাত্র মেডিক্যাল কলেজ জওহরলাল নেহরু হাসপাতাল। এটি রাজ্য স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। গোটা জেলার মধ্যে একমাত্র এখানেই কোভিড নির্ণয়ে আরটিপিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। বছরখানেক আগে কোভিডের জন্য এখানে অস্থায়ী ভাবে কয়েক জন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিযুক্ত হন। তাঁদের একাংশ এই চক্রে জড়িত বলে অভিযোগ।
তাঁরা হাসপাতালের সুপারের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে কোভিড রিপোর্টের জন্য ব্যবহৃত সুপার অফিসের নামাঙ্কিত ফর্ম ডাউনলোড করেছেন। তার পর সেখানে নিজেদের ইচ্ছামতো রিপোর্টে ‘পজিটিভ’ বা ‘নেগেটিভ’ লিখে নীচে মেডিক্যাল অফিসারের সই জাল করে রোগীর বাড়ির লোককে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, আশপাশের অঞ্চলের কিছু ওষুধের দোকানও ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত। তাঁরাই রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে হাসপাতালের এক শ্রেণির অসাধু ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। রিপোর্ট প্রতি ২-৩ হাজার টাকায় রফা হচ্ছে। রোগীর পরিবারের দাবি, এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। চক্রের পাণ্ডারা সেই আশ্বাস দিয়েই টাকা নিচ্ছে। তারপর আসল রিপোর্টের জায়গায় ডাউনলোড করা ফর্মে যেমন খুশি রিপোর্ট লিখে, জাল সই করে এক দিনের মধ্যে দিয়ে দিচ্ছেন। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেগেটিভ রিপোর্ট পজিটিভ এবং পজিটিভ রিপোর্ট নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছে!
পর-পর কয়েকটি ঘটনায় রোগীর বাড়ির লোক ঘুষ দিয়ে হাসপাতাল থেকে আগেভাগে যে রিপোর্ট পেয়েছেন তার সঙ্গে পরবর্তীতে সরকার থেকে এসএমএস মারফৎ পাঠানো রিপোর্ট মেলেনি। বিভ্রান্ত হয়ে এই রকম কয়েকটি পরিবার হাসপাতালে অভিযোগ জানানোর পর গোটা বিষয়টি সামনে আসে গত মঙ্গলবার। পুলিশকে জানানো হয়।
বুধবার এই বিষয় নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় রাম নামে এক ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে কল্যাণী থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাঁকে এ দিন গ্রেফতার করা না হলেও তাঁর কাছ থেকে অনেক নাম ও তথ্য জানা গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে তদন্ত শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভি এসআর অনন্তনাগ বলেন, ‘‘মানুষের জীবন নিয়ে এরা ছিনিমিনি খেলছে। বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি আমরা। জেলার অন্য কোনও হাসপাতালে এই কাণ্ড হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গিয়েছে, শুধু জাল রিপোর্টই নয়, কোভিড টেস্টে প্রয়োজনীয় লালারস ও নাকের রসের নমুনা যে ‘ভাইরাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়াম’ (ভিটিএম)-এ সংগ্রহ করা হয় সেটাও টাকা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেআইনি ভাবে অনেকের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা! হাসপাতালে এসে লাইন দিয়ে পরীক্ষা করানোর ঝামেলা থেকে বাঁচতে অনেকে সেই টাকা দিচ্ছেন।
হাসপাতালের সুপার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, “এই রকম ঘটনা ঘটেছে। আমি বৃহস্পতিবার সবাইকে ডেকেছি। এটা চলতে পারে না।” তাঁর পাসওয়ার্ড কী ভাবে জেনে নিয়ে ফর্ম ডাউনলোড করা হল? সুপার বলেন, “এদের আমি বিশ্বাস করতাম। সেই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে যদি এইরকম দুর্নীতি হয় তা হলে কী বলা যায়। তবে এদের ছাড়া হবে না। এর সঙ্গে আর কারা-কারা জড়িত বার করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যে ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে পুলিশ বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সেই মৃত্যুঞ্জয় রামের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘‘কাঁচরাপাড়ার এক ওষুধের দোকানের অরূপ নামে একটি ছেলে আমার পরিচিত। ও জোর করেছিল বলে আমি ভিতর থেকে রিপোর্ট বের করে দিয়েছিলাম। এর জন্য আমি টিকা নিইনি, অরূপ নিয়েছিল। সই আমি করিনি। হয়তো অরূপই করেছিল। ভিটিএম আমাদের কিছু না-জানিয়ে অরূপই পেশেন্টের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy