Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

Corona Virus: ‘বিধি ভাঙার মাসুল চোরাবালি’, ফের করোনা বাড়ছে বঙ্গে

কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের সদস্য, শল্যচিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানান, এখন করোনা পরীক্ষা কম হচ্ছে।

বিপন্ন: সপ্তমীর সন্ধ্যায় আহিরীটোলার এক মণ্ডপে। ছোট থেকে বড়, মাস্ক নেই অনেকেরই। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

বিপন্ন: সপ্তমীর সন্ধ্যায় আহিরীটোলার এক মণ্ডপে। ছোট থেকে বড়, মাস্ক নেই অনেকেরই। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৩৬
Share: Save:

সে কিছুটা ঝিমন্ত ঠিকই, তবে ঘুমন্ত বা মৃত মোটেই নয়। সুরক্ষা বিধির তোয়াক্কা না-করে ভিড়ের বহর বাড়তে থাকলে করোনা ফের আঘাত হানতে কসুর করবে না বলেই সতর্ক করে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। বস্তুত, পুজো শেষের অপেক্ষা না-করেই দাপট বাড়াতে শুরু করেছে করোনা। কয়েক দিন আগেও রাজ্যে তার সংক্রমণের পজ়িটিভিটি রেট ছিল ১.৩৬। কিন্তু পুজোর কেনাকাটার হুড়োহুড়ি আর তৃতীয়া থেকে ষষ্ঠীর হামলে পড়া দর্শক-ভিড়ের ধাক্কায় তা বেড়ে হয়েছে ২.৩৪! রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের চিকিৎসকদের আশঙ্কা, ভিড়ের মাতনে গা ভাসালে পুজোর অনতিপরেই সেটা পাঁচে পৌঁছে যেতে পারে। বিধি ভাঙার এই সর্বনেশে স্রোত চলতে থাকলে চোরাবালি কিন্তু ওত পেতে আছে অদূরেই। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দফতরের হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬৮ জন। সোমবার এই সংখ্যাটা ছিল ৬০৬। অর্থাৎ এক দিনের মধ্যে গোটা রাজ্যে রোগী বেড়েছে দেড়শো জনেরও বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের।

কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের সদস্য, শল্যচিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানান, এখন করোনা পরীক্ষা কম হচ্ছে। তাতেই পজ়িটিভিটি রেট ২.৩৪। অর্থাৎ ১০০ জনের মধ্যে আড়াই জনের দেহে কোভিড ভাইরাস মিলছে। অনুশাসন ভাঙতে থাকলে অবিলম্বে এই হার তিন-চার শতাংশে পৌঁছবে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতার কথাও বার বার করে উঠে এসেছে চিকিৎসকদের বক্তব্যে। সব কিছু ভুলে মানুষ কী ভাবে মণ্ডপের সামনে সমানে ভিড় করে চলেছেন, তা তাঁদের বিস্মিত করছে বলেও জানাচ্ছেন দীপ্তেন্দ্রবাবুরা। তাঁরা বলছেন, মানুষের স্মৃতি যে এত দুর্বল হতে পারে, সেটার প্রমাণ বোধ হয় এই পুজোর ভিড়!

মঙ্গলবার এক সাংবাদিক বৈঠকে পুজোর ভিড়ের স্রোতে গা ভাসানো মানুষজন এবং পুজোকর্তাদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়ে চিকিৎসকেরা বলেন, ‘গত বছর বাঙালি কালোচিত অনুশাসনের প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিলেন। এ বার কিন্তু সেটি ভেঙে চলেছেন। যার ফল মারাত্মক হতে পারে। পজ়িটিভিটি রেট পাঁচের উপরে চলে গেলে আবার হতে পারে লকডাউন। যা সমাজের অর্থনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে ভাল হবে না।’

মণ্ডপের সামনে থিকথিকে ভিড়

জমায় উদ্যোক্তাদের একাংশ আত্মশ্লাঘা অনুভব করছেন। কিন্তু অতিমারির বিরুদ্ধে সতর্কতার প্রচার দেখা যাচ্ছে না। কলকাতার এক নামী পুজোর কর্মকর্তা বলেন, “মানুষের আনন্দ-উচ্ছ্বাসকে কি আটকানো সম্ভব! তাই সময়ের সঙ্গে ভিড়ও বাড়ছে।” রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, “হাসপাতালের শয্যাগুলি ভর্তি নেই বলে যাঁরা আত্মসুখ উপলব্ধি করছেন, ‘টিকা নিয়েছি, তাই কিছু হবে না’ বলে যুক্তি খাড়া করছেন, তাঁদের অনুরোধ করছি, দয়া করে রাত জেগে মানুষের মাথা গুনবেন না। সব কিছু ফুৎকারে উড়িয়ে দিলে রাস্তায় সাইরেনের শব্দ আর ভেন্টিলেটরের বিপ-বিপ শব্দই কিন্তু আগামী দিনে আবার দুঃস্বপ্ন ঘনিয়ে আনবে।” এ দিন চিকিৎসকদের সঙ্গে হাজির ছিলেন অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারও। তাঁর বক্তব্য, নিজের পাড়ার মধ্যেই সকলের গতিবিধি সীমাবদ্ধ থাকা প্রয়োজন।

ঘড়ির কাঁটা ধরে ভিড়ের নিরিখে উত্তর কলকাতার সঙ্গে দক্ষিণের লড়াই জমজমাট। মেট্রোতেও উপচে পড়ছে ভিড়। চার আসনের ছোট গাড়িতে চড়ছেন ছ’জন। মাস্ক পরার মতো কোভিড বিধি মেনে চলাটাকে ‘বাড়তি জ্ঞান’ বলেই উড়িয়ে দিচ্ছে প্যান্ডেল হপিংয়ে মত্ত লোকজন। কেরলকে দেখেও তাঁরা কেন শিক্ষা নিচ্ছেন না, সেটাই ভাবাচ্ছে অভিজিৎবাবুদের। তিনি বলেন, “ওনাম উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে কেরল সব হারিয়েছে। সেখানে মুম্বইয়ের গণেশ উৎসব ছিল সংযত। মহারাষ্ট্র আর কেরল থেকে কি আমরা শিক্ষা নিতে পারি না? সেই শিক্ষা বলে, মানুষকে সজ্ঞানে বিপদে ফেলা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।”

রাজ্য সরকার থেকে আদালত, সকলেই নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু জনস্রোতের ভিড়ের ধাক্কায় সেই বেড়াজাল কতটা রক্ষা পাচ্ছে, তাতে নজরই বা রাখবেন কারা— এই সব প্রশ্ন জোরদার হচ্ছে চিকিৎসক মহলে। তাঁরা পাখি-পড়া করে বলে চলেছেন, টিকার দু’টি ডোজ় নেওয়া থাকলেও তা করোনার সংক্রমণ থেকে ১০০ শতাংশ রক্ষা করতে পারে না। অভিজিৎবাবু, দীপ্তেন্দ্রবাবু ছাড়াও এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়, শিশু চিকিৎসক অগ্নিমিতা গিরি সরকার-সহ সকলেই জানাচ্ছেন, দু’টি ডোজ়ের পরেও যে-সংক্রমণ হচ্ছে, তার উপসর্গ আলাদা। সেটিকে ‘চোরাবালি’র সঙ্গেই তুলনা করছেন সকলে।

অভিযোগ, মৃদু উপসর্গকে উপেক্ষা করে চলেছেন অনেক করোনা আক্রান্ত রোগী। শরীরে সেই ভাইরাস পুষেই মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে সংক্রমণের সাম্রাজ্য বিস্তার করছেন তাঁদেরও অনেকে। অভিজিৎবাবু বলেন, “সাধারণ মানুষকে বলব, যে-সব আখড়া খোলা হয়েছে, সেখানে হুল্লোড়ে যাবেন না। আশা করব, সরকার নিশ্চয়ই এগিয়ে এসে ব্যবস্থা নেবে।” বিশেষত শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়েরা যাতে দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাবে মণ্ডপে ঘুরে না-বেড়ান সেই বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal COVID19 Durga Puja 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy