সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এমআর বাঙুর হাসপাতালের ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
রাজ্যের অন্যতম কোভিড হাসপাতাল এমআর বাঙুর। সেখানেই বিছানার উপরে পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিয়োয় ওই হাসপাতালে করোনা সন্দেহভাজনদের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক যুবক দাবি করেছেন, করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মৃত দু’জনের দেহ কয়েক ঘণ্টা ধরে একই ভাবে পড়ে আছে। তাঁর বক্তব্য, আইসোলেশন ওয়ার্ডে অসুরক্ষিত অবস্থায় যে-ভাবে রোগীদের রাখা হয়েছে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বাঙুরের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে যে-অভিযোগ করা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন বলে জানান সেখানকার কর্তৃপক্ষ।
‘আইসোলেশন ফেসিলিটি’ বা সুযোগ-সুবিধা কেমন হবে, রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর ৪ এপ্রিল সেই বিষয়ে একটি ‘অ্যাডভাইসরি’ বা পরামর্শ দিয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের পরামর্শ, আইসোলেশন ওয়ার্ডে দু’টি শয্যার মধ্যে অন্তত এক মিটার দূরত্ব রাখতে হবে। প্রত্যেক রোগীরই ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্ক বাধ্যতামূলক। কিন্তু ভিডিয়োয় ওই যুবক দাবি করেছেন, বাঙুরের আইসোলেশন ওয়ার্ডে শয্যা সংক্রান্ত পরামর্শ মানা হচ্ছে না। বস্তুত, মাস্ক ছাড়াই যে অনেক রোগী ওয়ার্ডে রয়েছেন, ভিডিয়োয় সেটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কোনও কোনও রোগী মাস্ক পরে থাকলেও সেগুলো মোটেই ত্রিস্তরীয় সার্জিক্যাল মাস্ক নয়।
আড়াই মিনিটের ভিডিয়োয় যুবক দাবি করেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে তিনি ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এই ক’দিনে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে অন্তত পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা-রিপোর্ট আসার আগেই। মৃত্যুর পরে দেহ তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওয়ার্ডে পড়ে থাকায় সেখানকার অন্য রোগীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই যুবক।
আরও পড়ুন: বাঙালির জীবন নয়, বাঙালির ভোট নিয়ে বিজেপি বেশি চিন্তিত
ভিডিয়োটি তিনি দেখেছেন বলে জানান বাঙুর হাসপাতালের সুপার শিশির নস্কর। তিনি বলেন, ‘‘যুবক নিজেই ভিডিয়োয় জানিয়েছেন, দেহ ঘণ্টা তিনেক ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে থাকছে। মৃত্যুর পরে চার ঘণ্টা না-কাটলে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া যায় না। ওই চার ঘণ্টা তো দেহ ওয়ার্ডেই থাকবে। সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুর চার ঘণ্টা পরে দেহ মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এই নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, সেই বিষয়ে নিয়মিত নজরদারি চলে। তাই ওই যুবকের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তা ছাড়া দু’টি শয্যার মধ্যে যে-দূরত্ব থাকার কথা, এখানে তা রয়েছে।’’
সুপার যা-ই বলুন, এমআর বাঙুরের পরিষেবা নিয়ে রোগীদের ‘অসন্তোষের কথা’ স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের কানেও পৌঁছেছে। সল্টলেক মহকুমা হাসপাতালের সুপার পার্থপ্রতিম গুহকে বাঙুরের সুপারকে প্রশাসনিক কাজে সাহায্য করার জন্য ডিটেলমেন্টে এমআর বাঙুরে পাঠানো হয়েছে। বাঙুরের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, একটি ভবনের একতলায় অন্তত ৬০ জন কোভিড-১৯ পজ়িটিভ রোগী রয়েছেন। অন্য একটি তলায় অন্তত ৩০০ ‘সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস’ বা ‘সারি’-রোগী চিকিৎসাধীন। অভিযোগ, নির্দেশিকা হুবহু মেনে এত রোগীকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য যে-পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা এখনও গড়েই ওঠেনি। তা ছাড়া চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকা-খাওয়ারও অনেক অসুবিধা রয়েছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: ত্রাণ নিয়ে বিক্ষোভ, বাদুড়িয়ায় জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ, মাথা ফাটল পুলিশের
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য জানান, কোভিড পজ়িটিভ এবং সারি-রোগী মিলিয়ে এখন ২০০-র বেশি রোগী রয়েছেন। সারি-রোগীদের কোনও কোভিড রোগীর সংস্পর্শে আসার কোনও সুযোগ নেই। আগামী দিনে সারি-রোগীদের পুরনো ভবনে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত রোগী আসতে থাকায় সেই কাজে একটু দেরি হচ্ছে।
এই ভিডিয়ো বিতর্ক নিয়ে মঙ্গলবার থেকেই সরব ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। প্রথমে তিনি ভিডিয়োটি টুইট করেছিলেন। তার পরে ওই বিষয় নিয়েই একের পর এক টুইটে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করতে শুরু করেন। আজ, বুধবার সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট টুইটারে শেয়ার করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ‘‘বাঙুর হাসপাতালের ভিডিয়ো যে ভুয়ো ছিল না, তা এক রকম প্রমাণ হয়েই গেল মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে মোবাইল নিষিদ্ধ করায়— ধন্যবাদ আপনাকে। এখন আরও একটা তথ্য সামনে আনছি জনপ্রতিনিধি হিসেবে।’’ কী সেই ‘তথ্য’? সেটি হল— ভিডিয়োটি যে তরুণ পোস্ট করেছিলেন, সেই সোমনাথ দাসের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেছে এবং তাঁকে আটক করেছে। ‘‘এটা কি সত্যি? পশ্চিমবঙ্গকে আমি অনুরোধ করছি স্পষ্ট করে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এ উত্তর দিতে।’’ টুইটে লিখেছেন বাবুল সুপ্রিয়।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy