প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে এক লাফে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ থেকে বেড়ে হল ১৫! সেই সঙ্গে কলকাতা ও শহরতলি ছাড়িয়ে রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকাতেও ঢুকে পড়ল করোনা। নদিয়ার তেহট্টে এক যুবতীর সংস্পর্শে করোনা-সন্দেহভাজনের তালিকায় চলে এসেছিলেন ১৩ জন। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, লন্ডন-যোগে ওই যুবতী-সহ পাঁচ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট শুক্রবার পজ়িটিভ এসেছে। তাঁদের মধ্যে ২৭ বছরের যুবতী ছাড়াও তাঁর ন’মাস ও ছ’বছরের দু’টি মেয়ে ছাড়াও ৪৫ বছরের এক মহিলা ও তাঁর ১১ বছরের ছেলে আছেন। তাঁরা ওই যুবতীর পরিজন। আক্রান্তদের বাড়ি উত্তরাখণ্ডে। তাঁদের বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালে আনা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশ জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চললে তেহট্টের যুবতীর সূত্রে একসঙ্গে এত জন ভয়াল ভাইরাসে আক্রান্ত হতেন না। যুবতীর এক ভাই ১৬ মার্চ লন্ডন থেকে দিল্লিতে ফেরেন। তাঁকে নিতে যুবতী ছাড়াও পরিবারের আরও কয়েক জন দিল্লি যান। সেখানে পারিবারিক সম্মিলনী হয়। তার পরে বিলেতফেরত ভাইয়ের শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দেয়। তাঁকে দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিছু দিনের মধ্যে ২২ বছরের ওই যুবকের ভাইয়ের শরীরেও সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দেয়। তাঁকে রাখা হয় লোহিয়া হাসপাতালের কোয়রান্টিনে। চিকিৎসকেরা ওই যুবতীকে ২৮ দিন কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু যুবতী এবং তাঁর পাঁচ সঙ্গী দু’দিনে রাজধানী এক্সপ্রেসে চলে আসেন শিয়ালদহে। লালগোলা প্যাসেঞ্জারে পৌঁছন বেথুয়াডহরিতে। সেখান থেকে অটোয় তেহট্টের বার্নিয়া গ্রামের বাড়িতে ফেরেন ওই ছ’জন। তরুণীর এক সঙ্গী ফেরেন বিমানে।
স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ না-মেনে যুবতী যে রাজ্যে ফিরেছেন, দিল্লির কাছে সেই খবর ছিল না! জেলা স্বাস্থ্য দফতর নজরদারির যে-প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তার মাধ্যমে যুবতীর কথা জানা যায়। তার পরে রাজ্য সরকার বিষয়টি দিল্লিকে জানায়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, “যুবতীর পরিবার যে রাজ্যে এসেছে, দিল্লির তরফে সেটা আমাদের জানানো উচিত ছিল। কিন্তু ওরা কোনও তথ্য দেয়নি। আমাদের নজরদার দল যে-ভাবে ওই যুবতী এবং তাঁর স্বজনদের চিহ্নিত করেছে, তা প্রশংসনীয়। এ-পর্যন্ত রাজ্যে যে-ক’জন আক্রান্ত হয়েছেন, ভিন্ দেশ বা ভিন্ রাজ্যের সঙ্গে যোগ রয়েছে তাঁদের প্রত্যেকেরই। স্থানীয় স্তরে সংক্রমণ এখনও ছড়ায়নি। এই যুদ্ধে সাধারণের সহযোগিতা থাকলে আরও সন্তোষজনক ফল মিলবে।”
জ্বরের উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার তেহট্টের ফিভার ক্লিনিকে যান ওই যুবতী। সেখানে তাঁর বিদেশি-যোগ এবং অন্যদের সঙ্গে তাঁর সংস্রবের ইতিহাস জানা যায়। ঝুঁকি কতটা বাড়তে পারে, তার আভাস পেয়ে যান স্বাস্থ্য ভবনের জনস্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকেরা। বাবা-মা ছাড়া মোট সাত জন সরাসরি ওই যুবতীর সংস্পর্শে এসেছিলেন। তাঁর কাছাকাছি এসেছিলেন আরও ছ’জন। তড়িঘড়ি তাঁদের মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে লালারসের নমুনা পাঠানো হয় এসএসকেএমে। স্বাস্থ্য ভবনের খবর, আক্রান্তদের সংস্পর্শে কারা এসেছেন, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁদের খোঁজে নেমে পড়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের ‘ট্র্যাকিং টিম’। সংস্পর্শের তালিকায় অসংখ্য নাম উঠে আসতে পারে।
তেহট্টের পাশাপাশি আরও পাঁচ জনের লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট কী আসে, সে-দিকে তাকিয়ে আছে স্বাস্থ্য দফতর। আইডি-র খবর, সেখানে চিকিৎসাধীন করোনা-আক্রান্ত আট জনের অবস্থা স্থিতিশীল। রাজ্যের দ্বিতীয় ভাইরাস-আক্রান্তের বাবার জ্বর আছে। ওষুধ দিয়ে জ্বর কমানো হয়েছে। ছেলের সংস্পর্শে এসে বাবা-মা ছাড়াও দ্বিতীয় আক্রান্তের বাড়ির পরিচারক করোনার শিকার হন। রাজ্যের প্রথম ও তৃতীয় আক্রান্তের পাশাপাশি দ্বিতীয় আক্রান্তের পরিচারকের ডায়েরিয়ার উপসর্গ প্রকট হয়েছে। তবে তাঁদের শারীরিক অবস্থা উদ্বেগজনক নয়। হাসপাতালের আইবি-২ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আট জনেরই লালারসের নমুনা আজ, শনিবার ফের পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। এ বারেও নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ হলে আগামী সপ্তাহে নতুন করে পরীক্ষার জন্য আক্রান্তদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy