প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে করোনা-আক্রান্ত হয়ে এখনও পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই দু’জন কী ভাবে সংক্রমিত হয়েছিলেন, তা কিন্তু সোমবার পর্যন্ত জানা যায়নি।
গত ২৩ মার্চ সল্টলেকের একটি হাসপাতালে মারা গিয়েছিলেন দমদমের বাসিন্দা এক প্রৌঢ়। করোনা-আক্রান্ত ওই প্রৌঢ় কোথা থেকে সংক্রমিত হয়েছিলেন, এখনও স্পষ্ট নয়। তার মধ্যে রবিবার গভীর রাতে রাজ্যে করোনা-আক্রান্ত হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এক মাঝবয়সি মহিলার মৃত্যু হয়েছে। এই মহিলাও কী ভাবে সংক্রমিত হয়েছিলেন, তা জানা যায়নি। গোটা ঘটনায় চিন্তায় পড়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তারা। কালিম্পঙের বাসিন্দা ওই মহিলার সংস্পর্শে অনেকেই এসেছিলেন বলে জানতে পারার পর সেই চিন্তা আরও বেড়েছে।
করোনায় মৃত ওই মহিলার কোনও বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস পাওয়া যায়নি। এমনকি, তাঁর কোনও পাসপোর্টই নেই। সদ্য বিদেশ থেকে আসা কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে তিনি এসেছিলেন কি না তা-ও স্পষ্ট নয়। তবে স্বাস্থ্যকর্তারা মহিলার সাম্প্রতিক ভ্রমণের যে ইতিহাস পেয়েছেন, তা থেকে তাঁদের ধারণা, চেন্নাই থেকে সংক্রমিত হয়েছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত এ রাজ্যে ওই মহিলার সংস্পর্শে আসা প্রায় ২০ জনকে চিহ্নিত করে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তাঁদের শারীরিক অবস্থা।
আরও পড়ুন: বরাহনগরের করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের ভাইয়ের বিরুদ্ধে তথ্যগোপনের অভিযোগ
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত ৭ মার্চ সকালে তিনি বাগডোগরা থেকে চেন্নাই গিয়েছিলেন বিমানে। ওই দিনই তিনি চেন্নাইয়ের ভেলাচেল্লির একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। পরের দিন তিনি চেন্নাই শহরে পরিচিত এক ব্যক্তির বাড়িতে যান। ওই মহিলা নেপালের নাগরিক। ১৭ মার্চ কালিম্পঙের ওই মহিলা ফের একটি চোখের হাসপাতালে যান। পরের দিন অন্য একটি হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে যান ওই মহিলা। কালিম্পঙের অংডেন রোডের বাসিন্দা ওই মহিলা তাঁর মেয়েকে নিয়ে ১৯ মার্চ সকালেই ফিরে আসেন বাগডোগরায়।
আরও পড়ুন: করোনায় রাজ্যে দ্বিতীয় মৃত্যু, এ বার কালিম্পঙে মৃত ৪৪ বছরের মহিলা
সেখান থেকে গাড়ি করে যান শিলিগুড়ি পুরসভার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যোতিনগরে। সেখানকার রামকৃষ্ণ সরণিতে তাঁর আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানে খাওয়াদাওয়া সেরে দুপুরে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হন কালিম্পঙের উদ্দেশে। পরের দিন অর্থাৎ ২০ মার্চ থেকে তিনি অসুস্থ বোধ করা শুরু করেন। কালিম্পঙের একটি নার্সিংহোমে এক চিকিৎসকের কাছে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে ওযুধ দেন। সেই ওষুধ খেয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় তিনি ২৫ মার্চ ফের কালিম্পঙের ওই চিকিৎসকের কাছে যান। যাওয়ার পর ওই চিকিৎসক কয়েকটি শারীরিক পরীক্ষা করাতে বললে ওই মহিলা শিলিগুড়ি চলে যান। ওই দিন তিনি সেবক রোডের ২ মাইলে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিটি স্ক্যান করান। সেখান থেকে ফিরে যান জ্যোতিনগরের আত্মীয়ের বাড়িতে।
ওই দিন রাতেই তাঁর জ্বর, শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় পরের দিন সকালেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে প্রথমে তাঁকে আউটডোরে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করেন, পরে ভর্তি করা হয়। ভর্তি করার পরই কোভিড-১৯ স্ক্রিনিং করা হয় এবং তাঁর দেহে উপসর্গ থাকায় আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়।
মহিলার এই ভ্রমণের ইতিহাস থেকে তাঁর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তিনটি আলাদা তালিকা তৈরি করেছেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা।
প্রথম তালিকায় রাখা হয়েছে তাঁর পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয় পরিজনদের। তার মধ্যে রয়েছেন মহিলার স্বামী, মেয়ে এবং জ্যোতিনগরের আত্মীয়-সহ গাড়িচালক, বাড়ির পরিচারক-পরিচারিকারা। এই তালিকাতে রয়েছে প্রায় ২০ জনের নাম। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে খবর, যাঁরা সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী কয়েক জনকে ইতিমধ্যেই হাসপাতালে আইসোলেশনে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বাকিরা কোয়রান্টিনে।
দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছেন কালিম্পঙের চিকিৎসক যিনি ওই মহিলার চিকিৎসা করেছিলেন। ওই নার্সিংহোম এবং যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ওই মহিলা সিটি স্ক্যান করিয়েছিলেন— দু’জায়গার সকলকর্মীকে কোয়রান্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তৃতীয় তালিকায় রয়েছেন চেন্নাইয়ের হাসপাতালগুলির চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মী-সহ যাঁর বাড়িতে ওই মহিলা ছিলেন সেই বাড়ির সদস্যেরা। সূত্রের খবর, তামিলনাড়ু সরকারকে ওই ব্যক্তিদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। তবে এ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওই মহিলা যে বিমানে ফিরেছিলেন সেই বিমানের যাত্রী যাঁরা মহিলার আসনের কাছাকাছি বসেছিলেন এবং বিমানকর্মীদের চিহ্নিত করার কাজ এখনও শেষ হয়নি।
মহিলার এই গোটা ভ্রমণের ইতিহাস থেকে স্বাস্থ্যকর্তাদের অনুমান, চেন্নাই থেকে বা চেন্নাই যাওয়ার পথে সংক্রমিত হয়েছেন ওই মহিলা। চেন্নাই যাওয়ার সময় বিমান থেকে বা পাশে থাকা কোনও বিমানযাত্রীর থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা।
দ্বিতীয় একটি সম্ভাবনা রয়েছে। চেন্নাইয়ের হাসপাতাল থেকে বা সেখান থেকে কোনও কোভিড আক্রান্তের সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়েছেন তিনি। আর সেটাই চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের। ওই মহিলা সংক্রমিত হওয়ার পর এত বেশি মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন যা গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি করছে বলে ভয় পাচ্ছেন উত্তরবঙ্গের শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তারা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy