Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
কাঠকয়লা দিয়ে করোনা মুক্তির তিলক!
Coronavirus

ফের গুজবে প্রশ্নের মুখে সরকারি সতর্কতা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘জনতার কার্ফু’ পালনের ডাক দিয়েছিলে্ন রবিবার। সোমবার বিকেল থেকে রাজ্যের সব শহরে ‘লকডাউ’ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা  বন্দ্যোপাধ্যায়।

কপালে তিলক এক গ্রামবাসীর। নিজস্ব চিত্র

কপালে তিলক এক গ্রামবাসীর। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০১:৩৭
Share: Save:

মাটি খুঁড়ে বের করা কাঠকয়লার টুকরো দিয়ে কপালে তিলক কাটলে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করবে না! এমন গুজবে ভরসা করে রবিবার গোটা এলাকায় বাড়ি বাড়ি চলল তিলক কাটা পর্ব।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘জনতার কার্ফু’ পালনের ডাক দিয়েছিলে্ন রবিবার। সোমবার বিকেল থেকে রাজ্যের সব শহরে ‘লকডাউ’ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা ঠেকাতে কয়েকদিন ধরেই গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্র চলেছে সচেতনতা শিবির। কিন্তু তার পরেও এমন গুজবে ভরসা করে মাটি খুঁড়ে পাওয়া কাঠকয়লা দিয়ে কপালে তিলক কাটার ঘটনা রমরমিয়ে চলল কাঁথি-১ ব্লকের হৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আকন্দি গ্রামে। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষজন।

আকন্দি গ্রামের বাসিন্দা সুকুমার বেরা বলেন, ‘‘প্রতিবেশীদের মারফত জানতে পারি করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে বাড়ির সামনে তুলসী মঞ্চের ঈশান কোণে এক হাত দূরে মাটি খুঁড়ে ফেলতে হবে। এরপর সেখান থেকে যে কাঠ কয়লা পাওয়া যাবে তা গঙ্গাজলে মিশিয়ে কপালে তিলক কাটতে হবে। সেইমত রবার সকালে বাড়ির সকলের কপালে তিলক পরিয়ে দিয়েছি।’’ শুধু সুকুমারের পরিবারে নয়, গোটা গ্রামের মানুষই এই কাজে নেমে পড়েন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ননী গোপাল বেরা নামে গ্রামের আরেক বাসিন্দার দাবি, ‘‘বাড়ির সামনে তুলসী মঞ্চের আশপাশে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করেও কোনও কাঠকয়লা পাইনি। বাধ্য হয়ে প্রতিবেশী একজনের বাড়ি থেকে কাঠ কয়লা এনে সকলের কপালে তিলক কেটেছি।’’ যদিও এতে কী ভাবে করোনা থেকে মুক্তি ঘটবে তার সদুত্তর কেউই দিতে পারেননি।

উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস নিয়ে সব রকমের আতঙ্ক এবং গুজব রুখতে সরকারি স্তরে প্রচার শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও এই বিষয়ে প্রচার করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারপরে ও এই ধরনের গুজব কী ভাবে ছড়াচ্ছে তা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। অনেকে এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। এ প্রসঙ্গে হৈপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অনুপমা বেরা বলেন, ‘‘গতকাল পঞ্চায়েত অফিসে করোনাভাইরাস নিয়ে মিটিংয়ের পরেই এমন ঘটনা ঘটে। তাই এসম্পর্কে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা প্রশাসনকে কিছু জানানো হয়নি। আজই প্রশাসনিকভাবে সকলকে জানাবো।

প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে ঝাড়গ্রামে জনৈক ব্যবসায়ী করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে গো-আরক (গোমূত্র) পান করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। পরে এ জন্য নিজের ভুল কবুল করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও করোনার আক্রমণ থেকে বাঁচতে এমন গুজবে ভরসা অনেকেই বিস্মিত।

বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ি ঘর তৈরির জন্য ভিত পুজোর সময় ঈশান কোণে কাঠকয়লা ছাড়াও বিভিন্ন জিনিস পুঁতে পুজোর প্রচলন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে মাটি খুঁড়ে কাঠকয়লা পাওয়াটা আশ্চর্যের কিছু নয়। কিন্তু তা দিয়ে তিলক কাটলে করোনা থেকে বাঁচা যাবে এমন ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত বলে মত বিশিষ্টদের। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ কমিটির পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সহ-সম্পাদক নকুল ঘাঁটি বলেন, ‘‘বাড়ির উঠোনে মাটি খুঁড়ে কাঠ-কয়লা বের করা এবং তিলক কাটা একেবারে গুজব। এতে শারীরিকভাবে কারও কোনও ক্ষতি হবে না ঠিক। তবে সাধারণ মানুষের প্রশাসনিক নির্দেশ না মেনে ভুল পথে চালিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার কথা বলব। এমন কী বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকেও এ ধরনের গুজবের বিরুদ্ধে পাল্টা সচেতনতামূলক প্রচারে নামব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy