ফাইল চিত্র।
উপসর্গ না-থাকলেও ‘চাপ দিয়ে’ নমুনা চটজলদি পরীক্ষা করানোয় আপত্তি জানাল কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা নাইসেড (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়েস)।
নাইসেড সূত্রের খবর, করোনা আক্রান্ত তরুণের বাবা, মা এবং তাঁর সংস্পর্শে আসা দুই গাড়িচালকের লালারসের নমুনা নাইসেডে মঙ্গলবার রাতেই পরীক্ষা করিয়ে দ্রুত রিপোর্ট চেয়েছিলেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। বুধবার সকালে সেই পরীক্ষা করা হয়। নিশ্চিত হতে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা করানো হলে রিপোর্ট ‘নেগেটিভই’ আসে। এর পরে তরুণের পরিবারের দুই পরিচারিকার (বাকি চার জনের মতো তাঁদেরও উপসর্গ ছিল না) নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে পুরো বিষয়টি জানতে পারেন নাইসেডের অধিকর্তা শান্তা দত্ত। স্বাস্থ্য ভবনে ফোন করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
শান্তার কথায়, ‘‘অকারণে স্বাস্থ্য দফতরের চাপে নমুনা পরীক্ষা করতে হচ্ছে। উপসর্গ না-থাকলে কোনও নমুনা পরীক্ষা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তরুণের বাবা, মা-সহ চার জনের নমুনা দ্বিতীয় বার পরীক্ষার প্রয়োজনই ছিল না।’’ স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, এ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করবেন না। তবে দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘আতঙ্কের আবহে সন্দেহ নিরসন করার জন্য নমুনা দ্রুত পরীক্ষার কথা বলা হতেই পারে।’’
কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী, করোনা প্রভাবিত সাতটি দেশ থেকে আগত বা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা কোনও ব্যক্তির জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিলে তবেই তাঁর নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে। সেই মাপকাঠিতে পরীক্ষা নয়, ওই তরুণের বাবা, মা, দুই গাড়ির চালক এবং দু’জন পরিচারিকার ‘হোম কোয়রান্টিনে’ থাকার কথা। কিন্তু রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারের বদলে ওই ছ’জনকে বেলেঘাটা আইডি-র আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। এবং মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ নাইসেডের মাইক্রোবায়োলজিস্টদের ফোন করে চার জনের নমুনা তৎক্ষণাৎ পরীক্ষার জন্য ‘চাপ’ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। নাইসেড সূত্রের খবর, মাইক্রোবায়োলজিস্টরা ফোনে জানান, তাঁরা দফতর থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন।
বুধবার ওই চার জনের নমুনা দু’দফায় পরীক্ষা হয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এর পরে দুই পরিচারিকার নমুনা পাঠানো হলে ঘটনাটি কানে যায় নাইসেডের অধিকর্তার। স্বাস্থ্য ভবনের এক পদস্থ আধিকারিককে ফোন করে অধিকর্তা তখন জানান, উপসর্গ না-থাকলে নমুনা পরীক্ষা করানোর কথা কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় নেই। তবে কেন পরীক্ষার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে? দু’জন পরিচারিকার নমুনা নাইসেড পরীক্ষা করতে না-চাওয়ায় সেগুলি এসএসকেএমে পাঠানো হয়। সেই রিপোর্ট এখনও আসেনি।
সূত্রের খবর, অধিকর্তা লিখে দিয়েছেন, ওই চার জনের রিপোর্ট নেগেটিভ হলেও ৭-১০ দিন পরে তা পজিটিভ হতে পারে। তাই ১৪ দিনের কোয়রান্টিন বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা পরীক্ষা করা হবে। ফলে ওই চার জনকে রাজারহাট কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এই ঘটনার আগে রাজ্যে তোলপাড় চলেছে এমআর বাঙুর হাসপাতালে ‘প্রভাবশালীর তথ্য গোপনের’ অভিযোগ নিয়ে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় বাঙুরের সুপার শিশির নস্করকে স্বাস্থ্য দফতর থেকে ফোনে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র দফতরের বিশেষ সচিবের সন্তান লন্ডন থেকে ফিরেছেন। স্রেফ স্বস্তির জন্য তিনি চিকিৎসককে দেখিয়ে নিতে চান। তরুণটির উপসর্গ রয়েছে বা তিনি আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছিলেন, এমন জানানো হয়নি। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের নম্বর দেন সুপার। অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার আইডি-তে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও সচিব শোনেননি বলে অভিযোগ।
সোমবার ডেপুটি সুপারের ঘরে তরুণকে পরীক্ষা করেন করোনার নোডাল চিকিৎসক, ‘পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট’ (পিপিই) ছাড়াই। রোগী-সহায়কও ডেপুটি সুপারের ঘরে ছিলেন, মাস্ক ছাড়া। এক আধিকারিকের দাবি, ওই তরুণ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য পরিবারের তরফে বলাই হয়নি, ফলে পিপিই নেননি চিকিৎসক। তবে গোটা ঘটনা সম্পর্কে সুপার কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy