মাস্ক পরে বেলুড় মঠে দর্শনার্থীরা। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
মন্দির চত্বরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলেন বেলুড় মঠ ও দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ।
আজ, সোমবার থেকে বেলুড় মঠে শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরে বসে ধ্যান-সন্ধ্যারতি দেখা, প্রসাদ বিতরণ এবং প্রেসিডেন্ট মহারাজকে প্রণাম, দর্শন এবং মন্ত্রদীক্ষা প্রদান— অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখছেন মঠ কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে দক্ষিণেশ্বরে মন্দির দর্শনের সময় কমানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সংক্রমণ ঠেকাতে একসঙ্গে বহু লোকের সমাগম নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই নির্দেশিকার উপরে জোর দিচ্ছেন। বেলুড় মঠ ও দক্ষিণেশ্বরে প্রতিদিন কয়েক হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়। যে কোনও ছুটির দিন বা উৎসবে তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। সে কারণেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছেন বেলুড় ও দক্ষিণেশ্বর কর্তৃপক্ষ। তবে গঙ্গার দু’পারের ওই দুই স্থান দর্শন পুরোপুরি বন্ধ থাকছে না।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে দর্শনার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বেলুড় মঠ ও দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বর-সহ সংলগ্ন এলাকায় ওই রোগ সম্পর্কে নানা বিধি-নিষেধের ব্যানার লাগানো হয়েছে। অডিয়ো ব্যবস্থার মাধ্যমেও তা ঘোষণা করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, শনি ও রবিবার বাদে সপ্তাহের অন্য দিনে বেলুড় মঠে প্রায় ১৫ হাজার দর্শনার্থী আসেন। ছুটির দিনে তা বেড়ে হয় প্রায় ২০ হাজার। রোজ দুপুরে মঠের ‘সারদা সদাব্রত’ ভবনে প্রসাদ পান পাঁচ-সাত হাজার লোক। প্রতি সন্ধ্যায় প্রায় ৮০০ দর্শনার্থী শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরে বসে আরতি দেখেন।
করোনাভাইরাস নিয়ে দক্ষিণেশ্বর মন্দির চত্বরে ব্যানার। রবিবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ রবিবার জানান, সারদা সদাব্রত ভবন, শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দির এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী স্মরণানন্দের বাসগৃহ—এই তিন জায়গায় সব চেয়ে বেশি মানুষের সমাগম হয়।
তাই এই মুহূর্তে ওই জায়গাগুলিতেই ভক্ত ও দর্শনার্থীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মঠের স্বেচ্ছাসেবকেরা দর্শনার্থীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে শ্রীরামকৃষ্ণের মন্দিরে নিয়ে যাবেন। প্রণাম সেরেই বেরিয়ে আসতে হবে। সেখানে বসে ধ্যান কিংবা সন্ধ্যারতি দেখা যাবে না। তার বদলে মঠ চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় বড় পর্দায় (জায়ান্ট স্ক্রিন) আরতি দেখার সুযোগ পাবেন দর্শনার্থীরা। সারদা সদাব্রত ভবনেও বন্ধ দুপুরের প্রসাদ বিতরণ। পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না-হওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট মহারাজকে প্রণাম করতে যেতে পারবেন না ভক্তেরা। এ ছাড়াও পরবর্তী নির্দেশিকা জারি না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রদীক্ষা বন্ধ থাকবে এবং ওই সংক্রান্ত কোনও অনুসন্ধানের উত্তর পাওয়া যাবে ১৪ এপ্রিলের পরে।
অন্য দিকে, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার লোকের ভিড় হয়। পুজো দেওয়ার জন্য রোজই মন্দির চত্বরে লম্বা লাইন পড়ে। এখন থেকে সেই লাইনে যাতে এক জনের থেকে অন্য জনের অন্তত এক হাত দূরত্ব থাকে, সে দিকে স্বেচ্ছাসেবক ও কর্মীরা নজর রাখছেন বলে জানান মন্দিরের অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরী।
তিনি আরও জানান, মন্দির চত্বরে ও পুজো দেওয়ার জায়গায় যাতে ভিড় বেশি না-হয় তার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পুজো দিতে আসা দর্শনার্থীদের মূল মন্দিরের বাইরে পঞ্চবটী ও গ্রন্থাগার সংলগ্ন এলাকায় দাঁড় করানো হবে। সেখান থেকে ছোট দলে ভাগ করে পুজো দিতে পাঠানো হবে। একসঙ্গে ৮-১০ জনের বেশি দর্শনার্থী পুজো দেওয়ার জায়গায় থাকতে পারবেন না। ভিড় ঠেকাতে মন্দির দর্শনের সময়ও কমানোর চিন্তাভাবনা চলছে। কুশল বলেন, ‘‘মানুষের হয়তো অসুবিধা হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন ও ভক্তদের সহযোগিতা খুবই জরুরি।’’
বেলুড় এবং দক্ষিণেশ্বরের মতো কোনও নির্দেশিকা অবশ্য এখনও জারি হয়নি কালীঘাট মন্দিরে। ওই মন্দির দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের অধীনে। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘দর্শনার্থীদের বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা নেই। তাই কোনও প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি।’’ তবে দর্শনার্থীদের লাইনে যাতে দূরত্ব বজায় থাকে সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। করোনা-আতঙ্কের জেরে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ধর্ম মহামেলা বন্ধ রাখার জন্য রবিবার পুলিশ-প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছেন স্থানীয়েরা। আগামী ২১ মার্চ ওই মেলা শুরু হওয়ার কথা। প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষাধিক মতুয়া-ভক্ত ওই মেলায় যোগ দেন।
ভক্তদের সতর্ক করতে কোমর বেঁধেছেন তারাপীঠ মন্দির কর্তৃপক্ষও। রামপুরহাটের মহকুমাশাসক তথা তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের এগজিকিউটিভ অফিসার শ্বেতা আগরওয়াল জানান, দর্শনার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য রাজ্য সরকার থেকে যে অডিয়ো ক্লিপের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, তা মন্দির কমিটির মাধ্যমেও একাধিক বার প্রচার করা হবে। স্বাস্থ্য দফতরের লিফলেট বেশি সংখ্যায় বিলি করা হবে ভক্তদের মধ্যে। প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রেখে যাতে দর্শনার্থীরা লাইনে দাঁড়ান, তা নিশ্চিত করার জন্য বলা হবে মন্দির কমিটিকে। মন্দিরের আশপাশে জমায়েত এড়ানোর জন্য নজরদারি বাড়ানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy