ছবি এএফপি।
লকডাউনে যানবাহন না-থাকায় এসএসকেএমে আটকে পড়া আট বছরের একটি মেয়েকে নিজের গাড়িতে ৫৪০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে দৃষ্টান্ত গড়েছিলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বাবলু সর্দার। এ বার করোনা-রোগীকে নিরাপদে অন্য হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে মানবিকতার নজির তৈরি করলেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের অধ্যাপক-চিকিৎসক যোগীরাজ রায়।
হাওড়ার সালকিয়ার ৫৭ বছরের এক প্রৌঢ়া শনিবার থেকে আইডিতে চিকিৎসাধীন। কোভিড-আক্রান্ত ওই মহিলার থাইরয়েড ও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। ভেন্টিলেটরে সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন প্রৌঢ়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি তত্ত্বাবধানে সোমবার তাঁকে সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানোর প্রয়োজন অনুভব করেন আইডি-কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে কথা বলে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দুপুরে অ্যাম্বুব্যাগের সাহায্যে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড থেকে রোগীকে ভেন্টিলেটরযুক্ত অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয়। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সের কর্মীরা করোনা-রোগীকে নিয়ে যেতে সাহস পাননি। তাঁদের বক্তব্য, সঙ্কটজনক রোগীর রাস্তায় কিছু হয়ে গেলে কী হবে? এই আশঙ্কার কারণ, রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কী ভাবে ভেন্টিলেটরের সাহায্যে সামাল দেওয়া যায়, তা ওই কর্মীরা জানেন না। তাই অ্যাম্বুল্যান্সে যাওয়ার জন্য সিসিইউয়ের টেকনিশিয়ানের ডাক পড়ে। কিন্তু কর্তব্যরত টেকনিশিয়ান জানান, তিনি সিসিইউয়ে একা আছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে অন্য রোগীদের সমস্যা হলে কী হবে?
অগত্যা সংক্রামক রোগের চিকিৎসক যোগীরাজবাবু জানান, রোগীকে পৌঁছে দিতে তিনিই যাবেন অ্যাম্বুল্যান্সে। পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বা বর্মবস্ত্র পরে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠে পড়েন তিনি। বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরে তিনি ফিরে আসেন। আইডি-র উপাধ্যক্ষ আশিস মান্না বলেন, ‘‘ওই চিকিৎসক যা করেছেন, তার জন্য আমরা গর্বিত। রোগীর জন্য এক জন চিকিৎসকের এই হল দায়বদ্ধতা। চিকিৎসক যোগীরাজ রায়, শেখররঞ্জন পাল, শ্রেয়া ঘোষ, কৌশিক চৌধুরী, রাজশেখর মাইতি একটা টিম হিসেবে কাজ করছেন।’’
আরও পড়ুন: আতঙ্ক নয়, বিধি মেনে সতর্ক থাকতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী
আইডি-র করোনা চিকিৎসকদের জন্য যে-দল রয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকে রোগীর প্রতি এমনই দায়বদ্ধ বলে জানান উপাধ্যক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ দিন আইডি-র চিকিৎসকদের কাজের প্রশংসা করেছেন। চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী বলেন, ‘‘পিপিই পরে থাকলেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে সব সময়েই। তা বলে দায়বদ্ধতাকে উপেক্ষা করা যায় না।’’ প্রতি মুহূর্তে এই দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন আইডি-র চিকিৎসকেরা। তাঁদের একাংশ জানান, করোনা-আক্রান্তদের দু’ভাবে ভাগ করে চিকিৎসা চলছে। এক দিকে, কমবয়সি করোনা-আক্রান্ত, যাঁদের অন্য কোনও অসুখ নেই। অন্য দিকে, সেই সব করোনা-রোগী, যাঁদের অন্য অসুখও আছে।
‘‘রোগীর শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করা হচ্ছে,’’ বলেন আইডি-র এক চিকিৎসক। এ দিন দ্বিতীয় দফার নমুনা নেগেটিভ আসায় আইডি থেকে ন’মাসের শিশুকন্যা, ছ’বছরের বালিকা-সহ তেহট্টের তিন জন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার শহরতলির বাসিন্দা মিশর-যোগে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফার নমুনা নেগেটিভ আসায় এ দিন ছুটি হয়েছে সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা-আক্রান্ত এক ব্যক্তিরও। আক্রান্ত আরও ১০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নাইসেডে পাঠানো হয়েছে। এখন আইডিতে চিকিৎসাধীন আছেন ১৭ জন। তাঁদের মধ্যে মধ্যমগ্রাম পুরসভার চেয়ারম্যান-পারিষদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকেরা জানান, তিনি এখনও বিপন্মুক্ত নন। তাঁকে এখন কম মাত্রায় অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। তবে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে এখনই স্থিতিশীল বলা যাচ্ছে না।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy