ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডে ভিনরাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।
সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা। গোটা রাজ্য জুড়ে করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় শুরু হয়ে গিয়েছে ‘লকডাউন’। ধর্মতলা চত্বরে পুলিশকর্মীদের মধ্যে তৎপরতা তুঙ্গে। হাতে গোনা যে ক’টা যানবাহন দেখা যাচ্ছে তা, দ্রুত যাতে গন্তব্যে পৌঁছয় তার জন্য তাড়া দিচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। তার মধ্যেই ধর্মতলার বাস টার্মিনাসে দেখা গেল উল্টো ছবি।
কয়েক হাজার মানুষের ভিড় বাস টার্মিনাসে। তাঁদের হাতে বোঁচকা, ব্যাগ, লটবহর। এঁরা প্রত্যেকেই মূলত এ রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক। কেরল, তামিলনাড়ু বা কর্নাটকের মতো দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্যে হোটেলশিল্প বা নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
এঁদের এক জন নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের আলাউদ্দিন। কেরলের ত্রিসূরে তিনি একটি হোটেলে কাজ করেন। কেরল থেকে শনিবার ট্রেনে রওনা দিয়েছিলেন। ওটাই ছিল এ রাজ্যে আসার শেষ ট্রেন। সোমবার দুপুরে সেই ট্রেন হাওড়া পৌঁছনোর পর তাঁরা চলে এসেছেন ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডে।
আরও পড়ুন: রাজ্যে শুরু হয়ে গেল লকডাউন, কাল থেকে কড়া ব্যবস্থা
আলাউদ্দিনের সঙ্গে ওই ট্রেনে অন্য যে যাত্রীরা এসেছেন তাঁরা সবাই নদিয়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দুই দিনাজপুরের বাসিন্দা। গাদাগাদি ভিড় করে বাস টার্মিনাসে বসে বা দাঁড়িয়ে তাঁরা। ওঁরা যে রাজ্যগুলি থেকে এসেছেন তার সব ক’টিতেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। অথচ হাওড়া স্টেশন বা বাস টার্মিনাস কোথাও থার্মাল স্ক্রিনিং দূরঅস্ত্ কোনও ধরনের স্ক্রিনিংও নেই।
খুরশিদ আলমের বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডিতে। বেঙ্গালুরুতে নার্সিং নিয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘‘স্টেশনে কোনও ধরনের স্ক্রিনিং হয়নি। হাজার দুয়েক মানুষের জন্য পর্যাপ্ত বাস নেই টার্মিনাসে। পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরের হস্তক্ষেপে কয়েকটি বাস রওনা দেয়, কিন্তু বড় সংখ্যার মানুষেরই জায়গা হয়নি ওই বাসগুলিতে।’’
সন্ধ্যার পর বাস টার্মিনাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাকি ওই শ্রমিকরা ম্যাটাডোর বা মিনিট্রাক ভাড়া করার চেষ্টা করছেন। স্বাস্থ্য দফতেরের এক কর্তা স্বীকার করেন, কেরল বা কর্নাটক থেকে ফেরা এই ভিড়টা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে স্ক্রিন করা প্রয়োজন। সবাইকে কমপক্ষে ১৪ দিনের জন্য বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকা দরকার। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের উপর কতটা নজর রাখা সম্ভব তা নিয়ে সংশয় রয়েছে স্বাস্থ্য কর্তাদেরও।
আরও পড়ুন: রাজ্যের এই অবস্থা! করোনা টেস্টের যোগ্য নয় কোনও বেসরকারি ল্যাব
সোমবার নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠকের সময় বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুও বাইরে থেকে ফিরে আসা এ রাজ্যের শ্রমিকদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি এ দিন মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, বিভিন্ন জেলায় গিয়ে দেখেছেন, বাইরে থেকে অনেক শ্রমিক নিজেদের গ্রামে বা শহরে ফিরেছেন। তাঁরা অনেকেই অসুস্থ। কিন্তু তাঁরা অসুস্থতা লুকিয়ে রাখছেন বা ভয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন না। এঁদের চিহ্নিত করে পরীক্ষা করা দরকার বলে সায়ন্তন পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্যভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছি যাতে, আশা-কর্মীরা গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের উপর নজর রাখেন। তাঁরা যাতে বাইরে না বার হন সে ব্যাপারে তাঁদের সতর্ক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
তবে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কর্তারা স্বীকার করেছেন, করোনা রুখতে এই কাজটা খুব জরুরি হলেও ওই শ্রমিকদের খুঁজে বার করে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন কাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy