দু’সপ্তাহ ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছে এই কেন্দ্রীয় দল। —ফাইল চিত্র।
করোনায় মৃত্যুর হার গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেসবচেয়ে বেশি। এই পরিসংখ্যানই ইঙ্গিত দিচ্ছে: রাজ্যে নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে। নজরদারি দুর্বল। সংক্রমিতদের খুঁজে সঠিক ভাবে চিহ্নিতও করা হয়নি। দু’সপ্তাহ কলকাতায় থাকার পর দিল্লি ফেরার আগে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্রের পাঠানো পর্যবেক্ষক দল। সোমবার মুখ্যসচিবকে পাঠানো ওই চিঠিতে নিজেদের চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণেরএকাধিক কথাই জানিয়েছেন কলকাতা-সহ চার জেলায় পর্যবেক্ষণে আসা কেন্দ্রীয় দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র। এই চিঠি থেকে ইঙ্গিত স্পষ্ট, করোনা প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরুদ্ধে কড়া রিপোর্ট দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় এই দল।
ওই চিঠির শুরুতেইরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ফের একরাশ অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। অপূর্ব চিঠিতে লিখেছেন, গত দু’সপ্তাহ ধরে তাঁরা গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন। প্রথমেইতিনি মুখ্যসচিবের কাছে অভিযোগ করেছেন, শুরু থেকে কেন্দ্রীয় দলের প্রতি শত্রুমনোভাবাপন্ন আচরণ করেছেরাজ্য। অপূর্বের দাবি, তিনি রাজ্যকে মোট সাতটি চিঠি দিয়েছেন। বিভিন্ন দফতরের সচিব-সহএকাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। বেশ কিছুও তথ্য জানতে চেয়েছিলেন। অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতরের প্রধান সচিবের সঙ্গে একদিন ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলার সুযোগ পাওয়ার বাইরে অন্য কোনও আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি কেন্দ্রীয় দলের ওই প্রধান। তাঁর অভিযোগ,অধিকাংশ তথ্যই হাতে আসেনি।
অপূর্ব লিখেছেন, এ রাজ্যে কোভিডে মৃত্যুর হার ১২.৮ শতাংশ, যা গোটা দেশের নিরিখে সর্বোচ্চ।অত্যাধিক মৃত্যুর এই হার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, এ রাজ্যে নমুনা পরীক্ষা অত্যন্ত কম হয়েছে। শুধু তাই নয়, দুর্বল নজরদারির পাশাপাশি সংক্রমিতদের খুঁজে সঠিক ভাবে চিহ্নিতও করা হয়নি।রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব সিংহকে লেখা ওই চিঠিতে কোভিড নিয়ে রাজ্যের দেওয়া তথ্য এবং পরিসংখ্যানে অসঙ্গতি রয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। চিঠিতেপ্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিশেষ সচিব, অপূর্ব চন্দ্র লিখেছেন, ‘‘৩০ এপ্রিলে রাজ্য সরকার প্রকাশিত বুলেটিনে বলা হয়েছে সক্রিয় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৫৭২, মারা গিয়েছেন ৩৩ জন এবং রোগমুক্ত হয়েছেন ১৩৯ জন। সব মিলিয়ে ৭৪৪ জন। ওই একই দিনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিবকে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবের দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে রাজ্যে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৯৩১ জন। অর্থাৎ দু’টি পরিসংখ্যানে পার্থক্য ১৮৭ জনের।” অপূর্ব চন্দ্র জানিয়েছেন, রাজ্যের দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে ৭২ জন কোভিড আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে কো-মর্বিডিটির কারণে। সেই সংখ্যার কোনও উল্লেখ নেই ৭৪৪ জনের হিসাবে। অপূর্ব চন্দ্র তাঁর চিঠিতে মন্তব্য করেছেন,‘‘রাজ্যের উচিত, কোভিড সংক্রান্ত তথ্যের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা বজায় রাখা। সেই সঙ্গে ভাইরাসের সংক্রমণের ঘটনা ছোট করে দেখা উচিত নয় রাজ্যের।” এই প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়েছে, মে মাসের প্রথম দু’দিনের কোভিড বুলেটিনে মোট মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
আরও পড়ুন: মদের দোকান খুলতেই হুলস্থুল, দিল্লিতে লাঠি, ঝাঁপ পড়ল কলকাতায়
মুখ্যসচিবকে লেখা কেন্দ্রীয় দলের চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।
কোভিড নিয়ে কনটেনমেন্ট এলাকাগুলিতে নজরদারি প্রসঙ্গেও রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় দল। অপূর্ব চন্দ্র লিখেছেন,‘‘রাজ্য দাবি করেছিল যে, তাঁদের অত্যন্ত সুসংহত এবং শক্তিশালী নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমাদের দু’সপ্তাহ সফর সময়ের মধ্যে চারটি জেলায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষের উপর নজরদারির ক্ষেত্রে যে বিশাল পরিকাঠামো দরকার তা দেখতে পাইনি।” বলা হয়েছে, নিয়মিত নজরদারি রাখলে যে বিপুল তথ্যভাণ্ডার থাকার কথা, সেই ডেটাবেস থাকার কোনও প্রমাণও তাঁরা পাননি।
তবে সমালোচনার পাশাপাশি, রাজ্যের সাম্প্রতিক কয়েকটি উদ্যোগের প্রসংশাও করা হয়েছে অপূর্ব চন্দ্রের এই চিঠিতে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজ্য খুব দ্রুত নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়েছে। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত যেখানে রাজ্যে গড়ে ৪০০টি পরীক্ষা হত, সেখানে ২ মে পরীক্ষার সংখ্যা ২হাজার ৪১০। কোভিড আক্রান্তের মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৩০ এপ্রিল রাজ্যের ঘোষণারও প্রশংসা করা হয়েছে। ওই দিন মুখ্যসচিব ঘোষণা করেনযে, হাসপাতালের চিকিৎসকরাই মৃত্যুর ক্ষেত্রে ডেথ সার্টিফিকেট দেবেন। রাজ্যের বিশেষ অডিট কমিটি প্রতিটি মৃত্যুর অডিট আর করবে না। রাজ্যের এই ঘোষণাকে কোভিড পরিসংখ্যান নিয়ে স্বচ্ছতা আনার পথে একটা বড় পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করে হয়েছে। রাজ্যের ৬টি পরীক্ষাগারে ‘পুল টেস্ট’ শুরু করা নিয়েও প্রশংসা করা হয়েছে রাজ্যের। আইসিএমআর নির্দেশিকা মেনে হাসপাতালে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে যে নির্দেশিকা রাজ্য. জারি করেছে তাকেও স্বাগত জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। সেই সঙ্গে মন্তব্য করা হয়েছে, নমুনা পরীক্ষা আরও বাড়াতে এই গতি বজায় রাখতে হবে।
চিঠির একেবারে শেষে অপূর্ব লিখেছেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় দল চূড়ান্ত রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাছে জমা দেবে। চিঠিতে আশাপ্রকাশ করা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে রাজ্যকে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তা মানা হবে।
অপূর্ব চন্দ্রের চিঠির প্রসঙ্গে রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতাডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন,‘‘আন্তঃমন্ত্রক কেন্দ্রীয় দলের তো রাজ্যকে চিঠি দেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রককে বোঝানো উচিৎ ছিল, পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা কতটা খারাপ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক তো শুধু কলকাতার জন্য একটা দল পাঠাচ্ছে। অন্যান্য রাজ্যে দুই বা তার বেশি কেন্দ্রীয় দল পাঠাতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে। এর থেকেই পরিষ্কার, করোনা মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ অনেক এগিয়ে, অনেক সফল। আমার তো মনে হয় কেরল এবং বাংলা করোনা মোকাবিলায় মডেল হওয়া উচিৎ।”
রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় দলের আনা অসহযোগিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘‘রাজ্য সহযোগিতা করল না, কিন্তু কেন্দ্রীয় দল দু’সপ্তাহ এ রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াল!” তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘প্রশাসনিক ক্যাডার আর রাজনৈতিক ক্যাডারের মধ্যে পার্থক্য খুব সূক্ষ্ম।” এর পরেই ডেরেকের প্রশ্ন, ‘‘আমরা লকডাউন ঘোষণার আগে সরকারের কাছে সময় চেয়েছিলাম পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য। আমাদের কথা কেউ শোনেননি। আমরা সংসদ চত্বরে কোভিড রোখার জন্য হাত ধোয়ার একটি সচেতনতামূলক প্রচার করতে চেয়েছিলাম। আমাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এগুলো অসহযোগিতা নয়?”
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy