এভারেস্টে জন-জট। এ বছরে এই পথে পা পড়বে না কারও।
শেয়ার বাজার, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেলার মাঠে করোনার প্রভাব পড়েছে আগেই। এ বার সেই আতঙ্ক ছড়াল পাহাড় চূড়াতেও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) করোনাভাইরাস সংক্রমণকে ‘অতিমারি’ (প্যানডেমিক) ঘোষণা করার পরপরই এ বছরের মতো শৃঙ্গ অভিযান বাতিল করেছে চিন এবং নেপাল। এভারেস্ট, যে কোনও আট হাজারি শৃঙ্গ বা সুমেরু— লক্ষ্য যা-ই হোক না কেন, করোনার কারণে অভিযাত্রীদের সব পরিকল্পনাই হয় বানচাল হয়ে গিয়েছে, অথবা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২০১০ সালে প্রথম অসামরিক বাঙালি হিসেবে এভারেস্টে সফল আরোহণ করেছিলেন বসন্ত সিংহরায় ও দেবাশিস বিশ্বাস। সেই অভিযানের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ বছর ফের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের পথে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন দেবাশিস। চিনের নর্থ কল ধরে শৃঙ্গ-পথে এগোনোর কথা ছিল তাঁর। কিন্তু করোনার জেরে ইতিমধ্যেই এভারেস্ট অভিযান বন্ধ করেছে চিন। এমনকি, বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেপাল সরকারও। দেবাশিস বলছেন, ‘‘চিনের দিক দিয়ে কড়াকড়ি অনেক বেশি, তাই সে দিকে এভারেস্টের পথে লোক কম হয়। তাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করল যখন, তখনই এই অভিযান নিয়ে সন্দেহ হয়েছিল। করোনার ভয়ে এভারেস্টের পথে সহযোদ্ধা কম থাকলে সেটাও তো কম মানসিক চাপ নয়! তাই গত মাসেই মনে হচ্ছিল, এ বার বোধহয় আর হল না।’’
নেপাল হয়ে এ বছর এভারেস্ট যাওয়ার স্বপ্ন ছিল এ রাজ্যের আর এক অভিযাত্রী, রানাঘাটের রুম্পা দাসেরও। কৃষ্ণনগরের একটি পর্বতারোহণ ক্লাবের সদস্য, স্কুলশিক্ষিকা রুম্পার রওনা হওয়ার কথা ছিল আগামী ৭ এপ্রিল। কিন্তু শুক্রবার সকালেই অভিযান বন্ধের খবর পান। স্কুলে ক্লাস নেওয়ার ফাঁকে রুম্পা বললেন, ‘‘মনটা খারাপ সকাল থেকেই। ধার নিয়ে অভিযানের বিপুল খরচ, শারীরিক-মানসিক প্রস্তুতি— সবই প্রায় গুছিয়ে এনেছিলাম। তবে বৃহত্তর স্বার্থে হয়তো নেপালের এই সিদ্ধান্তের প্রয়োজন ছিল।’’ এভারেস্টকে ‘হারিয়ে’ এ বার তাই উত্তরাখণ্ডের নীলকণ্ঠ শৃঙ্গকে পাখির চোখ করছেন রুম্পা। আর দেবাশিসের লক্ষ্য, আগামী সেপ্টেম্বরে চিনের দিক থেকেই দু’টি আট হাজারি শৃঙ্গে (চো ইউ এবং শিশাপাংমা) জোড়া অভিযান চালানো।
এভারেস্ট-সহ সব ক’টি আট হাজারি শৃঙ্গে অভিযান বন্ধের ধাক্কা পড়তে চলেছে নেপালের অর্থনীতিতে। শৃঙ্গ অভিযানের সঙ্গে জড়িয়ে যে সব শেরপা এবং অপারেটর সংস্থা, বড়সড় ক্ষতির মুখে যে তাঁরা পড়তে চলেছেন, তা অকপটে জানাচ্ছেন নেপালের অন্যতম বড় অপারেটর সংস্থা ‘সেভেন সামিট’-এর কর্ণধার মিংমা শেরপা। কাঠমান্ডু থেকে তিনি বলছেন, ‘‘সময় ঠিক থাকলে পাহাড়ে অভিযান আবার হবে। কিন্তু এই অবস্থায় ওখানে গিয়ে কারও কিছু হলে সকলে বিপদে পড়তেন। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ত। তাই একটা মরসুমের চেয়ে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ করা বেশি প্রয়োজন।’’
তবে অ্যাডভেঞ্চার নিয়ে এখনও হাল ছাড়তে নারাজ সপ্তশৃঙ্গ ও সপ্ত আগ্নেয়গিরিজয়ী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। ‘এক্সপ্লোরার্স গ্র্যান্ড স্ল্যাম’-এর লক্ষ্যে গত বছর সুমেরু-যাত্রা শুরু করলেও মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। এ বছর ফের ‘লাস্ট ডিগ্রি স্কি’ করে সুমেরু যাওয়ার কথা থাকলেও চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। কোনও দেশ থেকে নরওয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে ১৪ দিন আলাদা (কোয়ারেন্টাইন) রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। ফলে আগামী মাসে আদৌ অভিযান হতে পারবে কি না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
সত্যরূপের কথায়, ‘‘এখনও ইউরোপের কোনও দেশ ভারতীয়দের সে দেশে ঢোকা আটকায়নি। তবে বিদেশিদের ১৪ দিন আলাদা রাখার কথা বলেছে নরওয়ে। এ সবের জেরে সুমেরু-অভিযাত্রীর সংখ্যা খুব কমে গেলেও বিপদ। কারণ সে ক্ষেত্রে অভিযান স্থগিত হয়ে যেতে পারে।’’ ইতিমধ্যেই অভিযানের জন্য ৬ লক্ষ টাকা দিয়েছেন সত্যরূপ। পয়লা এপ্রিল কলকাতা থেকে নরওয়ের বিমানে চাপার কথা ছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে ১০ দিনের জন্য অভিযান পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে আয়োজক সংস্থা। ‘‘করোনার কারণে অভিযান বাতিল হলে এ বারের দেওয়া ৬ লক্ষ এবং গত বারের জমা দেওয়া ২০ লক্ষ টাকা, সবটাই জলে যাবে’’— বলছেন সত্যরূপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy