ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পর পর তিনদিন রাজ্যে লাফ দিয়ে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। বুধবার রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ১,১০০। যা মঙ্গলবারের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা রাজ্য প্রশাসনের। ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু সেই সঙ্গেই দোটানায় রাজ্য প্রশাসন— রাজ্য জুড়ে সংক্রমণ ঠেকাতে কি অবিলম্বে নাইট কার্ফু জারি করা হবে? করা উচিত?
প্রসঙ্গত, পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইতিমধ্যেই শহরের একাধিক ক্লাব ওই উৎসব বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। একান্ত আলোচনায় রাজ্য প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশও স্বীকার করে নিচ্ছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ চলেই এসেছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও পর্যন্ত তা বলা হচ্ছে না। যদিও পশ্চিমবঙ্গের পাশের রাজ্য বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁর শাসনাধীন রাজ্যে তৃতীয় ঢেউ আসার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন। সঙ্গে ঘোষণা করেছেন কঠোর বিধিনিষেধের কথাও।
ঘটনাচক্রে, দেশ জুড়ে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকে একের পর এক রাজ্য সংক্রমণ ঠেকাতে নাইট কার্ফু জারি করেছে। তাতে বর্ষশেষের উৎসবে ভাটা পড়বে জেনেও। রাজধানী দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বর্ষবরণের উপর কড়া নিযেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ে গণ সংক্র্ণ ঠেকাতে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ বর্ষবরণের উৎসব বা গঙ্গাসাগর মেলার মতো গণ যোগদানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করবে কি?
বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িতরা মনে করছেন, কলকাতায় সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে বিভিন্ন মরসুমি উৎসব পালনের কারণে। এমনিতেই ঠান্ডায় করোনাভাইরাসের দ্রুত বংশবৃদ্ধি হয়। ফলে বছরের শেষে শীতকালে বড়দিন বা বর্ষবরণের মতো অনুষ্ঠান ‘বিপজ্জনক’। বস্তুত, বড়দিনের সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পার্ক স্ট্রিটে যে ভিড় হয়েছিল, তা শুধু রাজ্য নয়, গোটা দেশকে শিহরিত করেছে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘যে ছবি দেখা গিয়েছে, তা ভয়াবহ! তিনটে একডালিয়া, দুটো চেতলা অগ্রণী সঙ্ঘ, তিনটে সুরুচি সঙ্ঘ আর দুটো বাবুবাগান যোগ করলে ওই ভিড় হয়। অবিলম্বে এগুলো বন্ধ করা উচিত।’’ ওই কর্তা আরও মনে করেন, অবিলম্বে নাইট কার্ফু জারি করে বর্ষবরণের উৎসব বাতিল করা উচিত।
চিকিৎসাশাস্ত্রের সঙ্গে জড়িত এবং ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তা করোনার ডেল্টা রূপের কারণেই। এর সঙ্গে ওমিক্রন সংক্রমণ ছড়ালে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হবে। তাঁদের মতে, অবিলম্বে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ না করলে পরিস্থিতি আবার আগের মতো ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াবে। এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, তাতে ওমিক্রন অত্যন্ত ছোঁয়াচে। ফলে এতে সংক্রমণের পরিমাণ অনেকটাই বেশি হবে। যার দরুন হাসপাতালে রোগীদের স্থান সঙ্কুলানে সমস্যা হতে পারে। রাজ্য সরকারকে সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি রাখতে হবে। সিদ্ধান্তও নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, পরিস্থিতি ঘোরাল বুঝে ইতিমধ্যেই এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালকে আবার কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ঘনঘন স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠকও করা হচ্ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রোগ উপশমের চেয়ে রোগের সংক্রমণ ঠেকানো এই মুহূর্তে অনেক বেশি জরুরি। যে কারণে তাঁরা চাইছেন বর্ষবরণের উৎসব অবিলম্বে বাতিল করা হোক। ঘটনাচক্রে, ইতিমধ্যেই শহরের একাধিক ক্লাব ওই উৎসব বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার তরফে জরুরি ভিত্তিতে বর্ষবরণের উৎসব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সকলেই মনে করছেন, এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হওয়া উচিত রাজ্য সরকারেরই। এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘সরকার যদি মনে করে, তা হলে কযোরতম কড়াকড়ি জারি করতে পারে। সেটা আমরা এ রাজ্যের ক্ষেত্রে আগেও দেখেছি। কিন্তু পুরোটাই নির্ভর করছে রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা যাতে নাগালের বাইরে না চলে যায়, সেই কারণেই এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের আরও বেশি করে উদ্যোগী হওয়া উচিত। করোনার এই বাড়বাড়ন্তের মধ্যে বর্ষবরণের উৎসব জারি রাখলে আমার কিন্তু সর্বনাশের পথে পা বাড়াব! অবিলম্বে নাইট কার্ফু জারি করলে তা-ও পরিস্থিতি খানিকটা আয়ত্তের মধ্যে থাকতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy