মহম্মদ আরমান। নিজস্ব চিত্র।
ট্রেন দুর্ঘটনার খবর শুনেই চিন্তায় পড়েছিলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী-সহ অন্য পরিজনেরা। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও সন্ধান মিলছিল না ৩০ বছরের যুবকের। শুক্রবার রাত থেকে চরম উৎকণ্ঠায় কাটছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেসের প্যান্ট্রি কারে কর্মরত ওই ঠিকাকর্মীর পরিবারের। শনিবার রাতে আসা ফোনে খোঁজ মিলল। জানা গেল, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের মর্গে রয়েছে যুবকের দেহ!
রবিবার বিকেলে কফিনবন্দি হয়ে হাওড়ার টিকিয়াপাড়ার বাড়িতে ফিরলেন মহম্মদ আরমান। হাওড়া পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গারাম বৈরাগী লেনের গলিতে তখন প্রতিবেশীদের ভিড়। প্রত্যেকেরই আফশোস, যে ছেলেটা শুক্রবার সকালে হাসিমুখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন, দু’দিন পরে তিনিই ফিরলেন কফিনে!
বছর তিনেক আগে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের প্যান্ট্রি কারে ঠিকাকর্মীর কাজ পান আরমান। জল বিক্রি করতেন। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, যে দিন রওনা দিতেন, তার দিন দুয়েক পরে ফিরে আসতেন। অর্থাৎ, আজ, সোমবার বাড়ি আসার কথা ছিল আরমানের। তিন বছর ধরে এটাই ছিল তাঁর রুটিন। সেই মতো শুক্রবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন শালিমার স্টেশনে। ট্রেন ছাড়ার পরে ফোনে কথাও বলেন বাড়িতে।
ওই রাতে আরমানের পরিজনেরা জানতে পারেন, বালেশ্বরের কাছে ট্রেন দুর্ঘটনা হয়েছে। প্রতিবেশী রইস আলম বলেন, ‘‘ট্রেনটা করমণ্ডল এক্সপ্রেস শুনেই বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল। কারণ, ওই ট্রেনেই আরমান ডিউটি করে, জানতাম।’’এ দিন আরমানের ভাইপো মহম্মদ আসিফ জানান, দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকে তাঁরা বার বার ফোন করতে থাকেন। কিন্তু, সেটি বেজে যাচ্ছিল। রেলের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন, কেউ কোনও খোঁজ দিতে পারছিলেন না। আসিফ বলেন, ‘‘শনিবার রাতে ফোন আসার পরে সব আশা শেষ হয়ে গেল।’’ পরিজনেরা জানাচ্ছেন, আরমানের গলায় ঝুলছিল পরিচয়পত্র। সেটি দেখেই বাড়িতে ফোন করে খবর দেন রেলকর্মীরা।
এ দিন সকালে পরিজন ও প্রতিবেশীরা পৌঁছে যান খড়্গপুর সদর হাসপাতালে। ময়না তদন্তের পরে বিকেলে অ্যাম্বুল্যান্সে করে দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। স্বামীর মৃত্যুর খবরে কার্যত বাক্রুদ্ধ হয়ে পড়েছেন স্ত্রী আঞ্জুম আরা। ছোট ছেলের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা মহম্মদ রিয়াজ়। আর কফিনের দিকে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আরমানের পাঁচ বছরের ছেলে।
প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, খুব পরিশ্রমী ছিলেন আরমান। বছর তিনেক আগে চাকরিটা পাওয়ার পর থেকে একটু সচ্ছল ভাবে চলছিল পরিবারটা। এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘এক দিকে বৃদ্ধ বাবা-মা। অন্য দিকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও ছোট ছেলে। পরিবারটা এখন চলবে কী ভাবে?’’
স্বভাবতই আরমানের মৃত্যুতে গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শৈলেশ রাই বলেন, ‘‘মর্মান্তিক ঘটনা। ভাবতেই পারছি না, তরতাজা ছেলেটা চাকরি করতে বেরিয়ে এমন ভাবে হারিয়ে গেল। ওঁর পরিবারের পাশে রয়েছি।’’
অন্য দিকে, বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত সাত জন এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, হাওড়া-সহমুর্শিদাবাদ, হুগলি, বালুরঘাটের বাসিন্দা, এমন রোগীও ভর্তি রয়েছেন। শনি ও রবিবারবিশেষ ট্রেনে হাওড়া এসে পৌঁছনোর পরে প্ল্যাটফর্মে ওই যাত্রীদের পরীক্ষা করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy