Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mobile Phone

দেশে ফিরতে অজান্তেই সঙ্গী চোরাই মোবাইল

এ দিকে একের পর এক মোবাইল চুরি গেলেও সে সব কোথায় যাচ্ছে, বুঝতে পারছিলেন না গোয়েন্দারা।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:০০
Share: Save:

চিকিৎসা করাতে কলকাতায় আসছেন? কোন হাসপাতালের কাছে গেস্ট হাউসে উঠেছেন জানিয়ে দেবেন। সেখানেই ‘উপহারগুলো’ পৌঁছে দেওয়া হবে। জানেনই তো আমাদের বাংলাদেশে সব কিছুর বেশি দাম! কলকাতা থেকে তাই দেশে আত্মীয়দের জন্য জিনিস পাঠাচ্ছি। বর্ডার পেরোলেই আমার আত্মীয় আপনার থেকে সেগুলো নিয়ে নেবেন। দেশের লোক হয়ে এটুকু উপকার করবেন নিশ্চয়ই?

চিকিৎসা করাতে কলকাতায় আসা ‘দেশের লোকের’ হাত দিয়ে উপহার পাঠানোর নামে গত কয়েক মাসে এ ভাবেই চোরাই মোবাইল পাচার হচ্ছিল বাংলাদেশে! পেট্রাপোল, গেদে, মহদিপুরের মতো সীমান্ত পেরিয়ে অনেকেই সে সব নিয়ে যাচ্ছিলেন বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসা দেখিয়ে।

এ দিকে একের পর এক মোবাইল চুরি গেলেও সে সব কোথায় যাচ্ছে, বুঝতে পারছিলেন না গোয়েন্দারা। হারানো বা চুরি যাওয়া মোবাইল দ্রুত উদ্ধারে গত কয়েক বছরে নজির সৃষ্টি করা কলকাতা পুলিশেরও কালঘাম ছুটছিল কিনারা করতে না পেরে। চিন্তা বাড়াচ্ছিল আনলক-পর্বে চুরি যাওয়া মোবাইল উদ্ধারের নিম্নমুখী হতে থাকা গ্রাফ। সেই খোঁজের মধ্যেই সূত্র পায় কলকাতা পুলিশ। সম্প্রতি পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকা থেকে ১৩১টি চোরাই মোবাইল-সহ গ্রেফতার করা হয় ইরফানুর রহমান রুবেল এবং শেখ সেলিম আহমেদ নামে দু’জনকে। সেলিম কড়েয়ার বাসিন্দা হলেও রুবেলের বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে।

দু’জনকে জেরা করেই খোলে রহস্যের জট। জানা যায়, শহর তো বটেই, রাজ্যের নানা প্রান্তে আনলক-পর্বের শুরু থেকে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে মোবাইল চোরের দল। রাস্তা বা গণপরিবহণের পাশাপাশি বাড়ি থেকেও মোবাইল চুরি করছে তারা। সেই সব ফোন পৌঁছে যাচ্ছে স্থানীয় ‘চার্জার’-এর (চোরাই মোবাইলের ডেরার দায়িত্ব বা চার্জে থাকায় তাদের ওই নাম) হাতে। নিজস্ব ডেরা থেকেচোরাই ফোন তারাই পৌঁছে দেয় শহরের কয়েক জনের হাতে। এই দলের বেশির ভাগই বাংলাদেশের বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। তারাই নিজস্ব পরিচিতি খাটিয়ে ফোনগুলি সীমান্ত পার করানোর ব্যবস্থা করছিল। গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা জানান, অর্থনীতির নিয়মেই এই সব ফোনের বাজার রয়েছে সীমান্তের ওপারে। যে কোনও পণ্যের দামই ভারতের থেকে বাংলাদেশে বেশি। ফোনের যে মডেলের দাম এ দেশে ২৫ হাজার টাকা, বাংলাদেশে সেটিই ৩৫-৪০ হাজার টাকার কমে পাওয়া যায় না। চোরাই মোবাইল কালোবাজারে বিক্রি করলে এখানে হয়তো আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দাম উঠবে, সেটাই ও দেশে বিক্রি করলে অনায়াসে ২০-২৫ হাজার টাকা মিলবে।

এই কারবার ধরতে এত কালঘাম ছুটল কেন? পুলিশ আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শহরের কোনও জায়গা থেকে চুরি করা মোবাইল চোরাই বাজারে বিক্রির পরে বা কারও হাত ঘুরে এ রাজ্যে বা দেশের অন্য কোনও রাজ্যে ব্যবহারের জন্য চালু করা হলে ‘আইএমইআই ট্র্যাকে’ ধরা পড়ে যাবে। কিন্তু ওই ফোনই অন্য দেশে পাচার করার পরে ব্যবহার করা হলে সেটি ‘ট্র্যাক’ করা প্রায় অসম্ভব। কলকাতা পুলিশ কেন, অন্য কোনও রাজ্যের পুলিশেরও এই বন্দোবস্ত নেই বলেই দাবি তাঁদের। এই খামতিই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিল মোবাইল পাচারকারীরা।

চক্রের হদিস পেলেও এখনই স্বস্তির কথা শোনাতে পারছেন না গোয়েন্দারা। কারণ? পুলিশের পরিসংখ্যানই বলছে, রুবেলদের কাছ থেকে যে ১৩১টি ফোন উদ্ধার হয়েছে, তার অন্তত ৫০টি কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে চুরি যাওয়া। সেগুলি গত কয়েক মাসের মধ্যেই চুরি গিয়েছিল। কিন্তু আনলক-পর্বের শুরুর দিকে চুরি যাওয়া বহু ফোনের হদিস এখনও নেই। সীমান্ত পার হয়ে থাকলে সে সব ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনাও প্রায় শেষ। ফলে ফোন উদ্ধারের থেকেও আপাতত ধৃতদের জেরা করে চক্রের গভীরে পৌঁছনোই লক্ষ্য পুলিশের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy