প্রতীকী ছবি
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে অনেকেই মরণোত্তর দেহ দান করেন হাসপাতালে। কিন্তু নীলরতন সরকার (এনআরএস) মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানাটমি বিভাগের মর্গের কুলার বেশ কিছু দিন ধরেই খারাপ। ফলে দেহ সংরক্ষণের প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। তার জেরে দানের দেহ গ্রহণ করতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ডাক্তারির পড়ুয়ারা। পুরনো কাটাছেঁড়া দেহ দিয়েই হাতেকলমের শিক্ষা চালাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। এ নিয়ে চিন্তিত এনআরএস-এর ডাক্তারি পড়ুয়া থেকে শিক্ষকেরা। অথচ একটা সময় ছিল যখন এই এনআরএস থেকে ভিন্রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজে নিয়মিত দেহ পাঠানো হত।
মানবদেহের শরীরের অভ্যন্তরীণ আকার-সহ বিভিন্ন অঙ্গের গঠনতন্ত্র এবং তার কাজ বুঝতে শবদেহের কাটাছেঁড়া করেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি বিভাগে এ বিষয়ে হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিতে অনেকেই মরণোত্তর দেহদান করেন। সেই দেহ হাসপাতালে দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করে রাখতে হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রায় সেগুলি রেখে দেওয়া হয়। পরে সেই দেহ ফর্মালিন-সহ বিভিন্ন রায়ানিকের সাহায্যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ‘ভ্যাট চেম্বার’-এ। কিন্তু কুলার ছাড়া ওই দেহ দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করা অসম্ভব বলেই চিকিৎসকদের মত। অ্যানাটমি মর্গে ফর্মালিন দিয়ে দেহ রাখার ব্যবস্থা থাকলেও কুলার না থাকায় পুরনো দেহ খারাপ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই কয়েকটি দেহ খারাপ হয়ে গিয়েছে। সেগুলি আর ব্যবহার করা যাবে না।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে এনআরএসে বছরে ১৫ থেকে ২০টি দেহ দান করা হত। অ্যানাটমি মর্গে দেহ সংরক্ষণের জন্য মোট ছ’টি কুলার ছিল। এখন সব ক’টিই বিকল হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, খারাপ হয়ে যাওয়া কুলারগুলো প্রায় ৩০-৪০ বছরের পুরনো। এর মাঝে কয়েক বার খারাপও হয়ে যায়। তার পর সারাই করেই চালানো হচ্ছিল। কিন্তু এখন সব ক’টা কুলারই খারাপ থাকায় দেহ রাখার সমস্যা বেড়েছে। এ বিষয়ে এনআরএসের অ্যানাটমি বিভাগের প্রধান ত্রিদিব শেঠ বলেন, ‘‘কুলার খারাপ থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পরতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। পড়ুয়াদের পুরনো এবং একাধিক বার ব্যবচ্ছেদ করা দেহ নিয়েই পড়াশোনা করতে হচ্ছে। আমরা ২৪টি নতুন কুলারের জন্য আবেদন করেছি। তবে এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতর যতগুলি কুলারের ব্যবস্থা করবে সেটা দিয়েই পরিস্থিতি সামলাব।’’
এনআরএসের প্রিন্সিপাল শৈবাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কুলারগুলি যে খারাপ, তা জানি। কোভিড-কালে মর্গের যন্ত্রগুলি খারাপ হয়েছে। কুলার বদলানোর জন্য পূর্ত এবং স্বাস্থ্য দফতরকে জাননো হয়েছে। যত দিন না খারাপ কুলারগুলি বদলানো হচ্ছে, তত দিন ভ্যাট চেম্বারের মাধ্যমেই কাজ চালাতে হচ্ছে আমাদের।’’
এ বিষয়ে জানতে রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজেরও। তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার দাবি, কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলাই এখন রাজ্যের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক দরকারি কাজই পিছিয়ে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy