বগটুইয়ের ঘটনার পরে তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ ও আনারুলের প্রাসাদোপম বাড়ি নজরে পড়েছে অনেকের। শাসক দলের নেতাদের সম্পত্তি, বাড়িঘর দেখে ইদানীং অনেকেরই চোখ কপালে উঠছে।
মোদাচ্ছের হোসেনের অট্টালিকা। নিজস্ব চিত্র।
অট্টালিকার নাম, ‘লাভ হাউস।’ বাড়ির গায়ে ছড়িয়ে হৃদয়ের ডিজ়াইন (লাভ সাইন)।
ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা মোদাচ্ছের হোসেনের এ হেন বাড়ি নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছেন সিপিএম নেতা তথা হাই কোর্টের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। রিট পিটিশনের উপরে ভিত্তি করে হাই কোর্ট সরাসরি এফআইআরের নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ কার্যকর করতে ইতিমধ্যে বাড়ি মাপজোক করেছে কাশীপুর থানার পুলিশ ও ভাঙড় ২ ব্লক ভূমি সংস্কার দফতর। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘হাই কোর্টের নির্দেশে ওই বাড়ি মাপজোক করা হয়েছে। সেই মতো আমরা রিপোর্ট পাঠিয়ে দেব।’’
বিকাশের কথায়, ‘‘মোদাচ্ছেরের হিসাববহির্ভূত সম্পত্তি নিয়ে মামলা রুজু করা হয়েছিল।’’
বগটুইয়ের ঘটনার পরে তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ ও আনারুলের প্রাসাদোপম বাড়ি নজরে পড়েছে অনেকের। শাসক দলের নেতাদের সম্পত্তি, বাড়িঘর দেখে ইদানীং অনেকেরই চোখ কপালে উঠছে। এর আগে নন্দীগ্রামে তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানের জাহাজ বাড়ি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বগটুই কাণ্ডের পরে তৃণমূল নেতাদের প্রাসাদোপম বাড়িঘরের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে প্রচার শুরু করেছে সিপিএম।
তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে মোদাচ্ছের দলের সঙ্গে আছেন। গত পনেরো বছর ধরে পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধানের মতো পদ সামলাচ্ছেন। বর্তমানে ভোগালি ২ পঞ্চায়েতের প্রধান। এমনকি, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতিও তিনি।
এলাকায় মাছের ভেড়ি, চাষবাস আছে মোদাচ্ছেরের। তাঁর দাবি, কিছুটা সেই রোজগারের টাকায়, কিছুটা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে বানিয়েছেন ‘লাভ হাউস’। তা-ও নিজের থাকার জন্য নয়। দোকান বা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। সেই টাকাতেই শোধ হয় ইএমআই। মোদাচ্ছেরের কথায়, ‘‘নিজে আয় করে জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করেছি। কোনও অসৎ উপায় অবলম্বন করা হয়নি। বিরোধীরা চক্রান্ত করতে এ সব করছে।’’
চারতলা, বিশ হাজার বর্গফুটের বাড়ির মালিক মোদাচ্ছেরকে ঘিরে বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। এর আগে নানা সময়ে ‘কুকথা’ বলে বিতর্কে জড়িয়েছেন মোদাচ্ছের। তবে সে সব নিয়ে বিশেষ হেলদোল কখনওই দেখা যায়নি তাঁর। এলাকায় এমন পেল্লায় বাড়ি তাঁর আরও দু’তিনখানা আছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। তবে আপাতত ‘লাভ হাউস’ই আতস কাচের নীচে।
ভাঙড়ের জমি কমিটির নেতা মির্জা হাসান বলেন, ‘‘যে ভাবে ভাদু শেখ, আনারুলের বাড়ি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, সে ভাবে মোদাচ্ছেরের বাড়ি নিয়েও প্রশ্ন তোলা দরকার। কী ভাবে সামান্য এক জন পঞ্চায়েত প্রধান এরকম অট্টালিকার মালিক হতে পারেন? ওঁর সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।’’
ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘মোদাচ্ছের একা নয়, তাঁর মতো ভাঙড়ের বহু নেতা আছেন, যাঁরা রাস্তা নির্মাণ, আবাস যোজনার বাড়ি, একশো দিনের কাজ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ভাঙড়ের তৃণমূল নেতাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি নিয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে তদন্ত হলে ভাল।’’
বিষয়টি নিয়ে আপাতত মুখে কুলুপ তৃণমূল নেতৃত্বের। দলের জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যেহেতু এটা আদালতের বিচারাধীন বিষয়, তাই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy