—প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যের কোথায় কোথায় বাজির ক্লাস্টার এবং হাব তৈরি করা হবে, তা চূড়ান্ত করল রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, আজ, বুধবার, বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ওই সমস্ত জায়গার নাম ঘোষণা হতে পারে। সেই তালিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের মহেশতলা ও বারুইপুরের নাম রয়েছে। ওই দুই জায়গায় বাজির ক্লাস্টার হবে। উত্তর ২৪ পরগনায় ক্লাস্টারের জন্য চিহ্নিত হয়েছে বনগাঁর চৌবেরিয়ার একটি জমি। পূর্ব মেদিনীপুরে বাছা হয়েছে কোলাঘাটের একটি জায়গা। এর পাশাপাশি, কলকাতার ধাপা মাঠপুকুর এলাকায় একটি বাজি হাব তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে খবর। ওই হাব থেকেই ৩৬৫ দিন বাজি বিক্রি হবে বলে প্রচার শুরু করেছেন বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ।
কিন্তু হাবের জন্য ওই জায়গার চিহ্নিতকরণ এবং সেখান থেকে ৩৬৫ দিন বাজি বিক্রির খবর প্রচারিত হতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। পরিবেশকর্মীদের বড় অংশ এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। আইনজীবীদের একাংশও মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মূল আপত্তি, ধাপা মাঠপুকুর এলাকাটি নিয়ে।
‘সবুজ মঞ্চ’-এর আহ্বায়ক তথা পরিবেশকর্মী নব দত্ত বললেন, ‘‘সরকার সকলকে অন্ধকারে রেখে অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে জমি চিহ্নিত করেছে। সেই দায়িত্ব যাঁদের দেওয়া হয়েছে, তাঁদের নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ধাপা মাঠপুকুর এলাকাটি পূর্ব কলকাতা জলাভূমির অংশ। বাজি হাব তো দূরের কথা, সেখানে কোনও নির্মাণই হতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘ঠিক কোথায় এই হাব তৈরি হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। ইএম বাইপাসের এক দিকে একাধিক হোটেল ও বসতি তৈরি হয়েছে। বসতি এলাকায় বাজি হাব বা ক্লাস্টার তৈরি করা হবে না ধরে নেওয়া যেতে পারে। তা হলে পড়ে থাকে বাইপাসের অন্য দিকের অংশ। কিন্তু সেটা পূর্ব কলকাতা জলাভূমির অন্তর্গত। যে কোনও নির্মাণই সেখানে বেআইনি। ‘ইস্ট কলকাতা ওয়েটল্যান্ডস ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ ইতিমধ্যেই এই ধরনের নির্মাণ নিয়ে চারশোটির মতো মামলা করেছে। সেখানে শুধু একটি জল প্রকল্প তৈরি হয়েছে, তা-ও সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ অনুমতি নিয়ে। সরকার যদি নিজের আইনই না মানে, তা হলে তো যে কোনও বেসরকারি সংস্থা সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করবে।’’
এক আইনজীবীর মতে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমির যে জায়গা বেছে নেওয়া হচ্ছে, সেটা কলকাতার ফুসফুস। এতে পরিবেশের ভারসাম্য এবং জীববৈচিত্রের উপরে গভীর প্রভাব পড়বে। তা ছাড়া, এই ধরনের বাজি হাবের নির্মাণ শুরু হলে প্রোমোটার-রাজ শুরু হবে ওই জলাভূমি ঘিরে। তিনি জানান, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হলেই আদালতে মামলা করবেন।
আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে ‘আতশবাজি উন্নয়ন সমিতি’র চেয়ারম্যান বাবলা রায় বলেন, ‘‘শুধু মাঠপুকুরই নয়, সল্টলেকের একটি অংশও চিহ্নিত করা হয়েছে বাজি হাবের জন্য। ৩৬৫ দিন এই দুই জায়গায় বাজির দোকান খোলা থাকবে। বারাসতের নীলগঞ্জ ও উত্তরবঙ্গের ময়নাগুড়িতেও ক্লাস্টার তৈরির কথা চলছে।’’ প্রসঙ্গত, বাবলাকেই বাজি হাবের জমি চিহ্নিত করার দায়িত্ব দিয়ে সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছিল। বাজি ব্যবসায়ীদের তরফেই যা নিয়ে প্রবল আপত্তি ওঠে। তাঁদের দাবি, সরকার নিজে না করে কোনও বাজি সংগঠনের নেতাকে জমি চিহ্নিত করার কাজ দেয় কী করে?
পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যেখানে কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে কয়েক ঘণ্টা এবং ২৫ ডিসেম্বর ও ৩১ ডিসেম্বর রাতে কয়েক ঘণ্টা সবুজ বাজি ফাটানোয় ছাড় দিয়েছে এবং পুজোর আগের এক সপ্তাহ সবুজ বাজি বিক্রি করা যাবে বলে নির্দেশ দিয়েছে, সেখানে ৩৬৫ দিন বাজির দোকান খোলা রাখার কথা আসে কোথা থেকে? কী করেই বা সর্বক্ষণ খোলা থাকা এই সব দোকানে নজরদারি চালানো হবে?’’ বাবলা যদিও প্রশ্ন একেবারে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের এমন কোনও নির্দেশই নেই। বাজি সব সময়ে কেনাবেচা করা যায়, সারা বছর ফাটানো যায়।’’ যদিও বাবলার এই বক্তব্য ভ্রান্ত বলেই মত বাজি ব্যবসায়ীদের বড় অংশের।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প দফতর বলতে পারবে।’’ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা পার্থ চৌধুরীকে এ ব্যাপারে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি আমারও জানা নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy